সন্ধানী ও একটি আন্দোলন

প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

মনির হোসেন শিমুল
২ নভেম্বর ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস’। ১৯৭৮ সালের এইদিনে ‘সন্ধানী’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল দেশের প্রথম স্বেচ্ছায় রক্তদান অনুষ্ঠান। স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানের আন্দোলনের ৪১ বছর অতিক্রম করে এগিয়ে চলা ‘সন্ধানী’ ও দিবসটি। ১৯৭৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বষের্র এক বন্ধুর সকালের নাশতার খরচের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে ছয় তরুণের হাত ধরে সম্পূণর্ নামহীনভাবে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠান ‘সন্ধানী’ সফলতার ৪১ বছর অতিক্রম করেছে। প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ডা. মোশাররফ হোসেন মুক্ত পরবতীর্ পথচলা সম্পকের্ বলেন, ‘হঠাৎ একদিন মেডিকেল কলেজের এক বন্ধু আমাদের কাছে ছুটে এসে বলল তার বাবার অপারেশন করতে হবে, জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন। তখন হাসপাতালের আশপাশে অনেক পেশাদার রক্তদাতা পাওয়া যেত। আমরা দেখতাম তারা হাসপাতালের আশপাশে বসেই মাদক গ্রহণ করেন। সুস্থ, স্বাভাবিক রক্তদাতার খেঁাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাদের কেউ রক্ত দেবে। সেদিন রক্তদানের পর আমরা উপলব্ধি করলাম যে, নিয়মিত রক্ত দিলে আরও অনেক রোগীর জীবন বঁাচানো যাবে। পরিকল্পনা করলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজেই স্বেচ্ছায় রক্তদান কমর্সূচি আয়োজন করার। হাসপাতালের বøাড ব্যাংকের তৎকালীন ডিউটি ডাক্তার অধ্যাপক ডা. আবদুল কাদের উদ্যোগটিতে খুব সহযোগিতা করলেন। ১৯৭৮ সালের ২ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বøাড ব্যাংকে আয়োজিত হলো দেশের প্রথম স্বেচ্ছায় রক্তদান কমর্সূচি। সন্ধানীর প্রতিষ্ঠাকালীন অথর্ সম্পাদক ইদ্রিস আলী মঞ্জু সবার আগে রক্তদান করে রক্তদানের ভয় কাটিয়ে দিলেন। শিক্ষকদের রক্তদানে উৎসাহী করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের তৎকালীন প্রধান অধ্যাপক ডা. ইউসুফ আলী রক্তদান করলেন। রক্তদাতাদের ভয় কাটানোর জন্য তিনিও তাদের নানাভাবে সাহস জোগালেন। মেয়েদের রক্তদান কাযর্ক্রমে যুক্ত করতে তৃতীয় বষের্র হোসনে আরা লাকী রক্ত দিলেন। সবার সহযোগিতায় প্রথম দিনের সংগ্রহ ছিল ২৭ ব্যাগ সুস্থ রক্ত।’ এইভাবেই ঢাকা মেডিকেলসহ দেশের তখনকার সব মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালের আড্ডায়, বন্ধুদের চায়ের দোকানের আলাপে এই মহৎ কাযর্ক্রমের গল্প ছড়িয়ে গেল। উৎসাহ দেখে সন্ধানীর সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে রক্তদান কমর্সূচিকে ছড়িয়ে দিতে চাইলেন। মোশাররফ হোসেন মুক্তর জীববিদ্যা বিভাগের বন্ধু মিজান ও জামালের সঙ্গে আলাপ করে তাদের সাহায্যে ১৯৭৯ সালের ১৭ জানুয়ারি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দেশের দ্বিতীয় রক্তদান কমর্সূচির আয়োজন করলেন। ওই দিন ঢাকা মেডিকেলের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারুন উর রশিদ কমর্সূচিতে স্বেচ্ছায় অংশ নিয়ে রক্তদানে কোনো ভয় নেই, এই সত্যটি প্রতিষ্ঠিত করলেন। আরও অনেকের মধ্যে সেদিন রক্ত দিয়েছিলেন বতর্মান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ। কিভাবে সন্ধানীর রক্তদান কমর্সূচি ছড়িয়ে গেল সে গল্প শোনালেন সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের প্রথম সভাপতি ডা. আবুল কালাম আজাদ, ‘‘ুরক্ত দেয়ার কথা বললে তখন মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকরাও ভয় পেতেন। সন্ধানী থেকে আমরা রক্তদান কাযর্ক্রমের আয়োজন করে নিজেরা রক্ত দিয়ে সে ভয় কাটিয়ে দিতাম। এ ছাড়া লিফলেট বানিয়ে মেডিকেল ক্যাম্পাসগুলোতে বিলি করতাম, মাইকিং করতাম। শহীদ মিনার, বইমেলা, সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানের গণজমায়েতে রক্তের গ্রæপ নিণর্য় ও উম্মুক্ত রক্তদান কমর্সূচির আয়োজন করতাম। শুরু থেকেই আমাদের ¯েøাগান হলো, ‘রক্ত দিন, জীবন বঁাচান’।