পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

তেরো পেরিয়ে চৌদ্দতে

প্রকাশ | ১১ জুন ২০২২, ০০:০০

আবদুলস্নাহ আল মামুন
তেরোতম বছর পেরিয়ে চৌদ্দতম বর্ষে পদার্পণ করেছে দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি)। ২০০৮ সালের ৫ জুন দেশের ২৯তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৭ম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। রোববার (৫ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০০৯ সালে পাবনা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (টিটিসি) ভবনের ১২ জন শিক্ষক, ৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৪টি অনুষদে ১৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শুরুতে টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে (টিটিসি) অস্থায়ী ক্যাম্পাস ব্যবহার করা হলেও ২০১৩ সালে পাবনা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার আগে অবস্থিত ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের পাশে রাজাপুর নামক স্থানে ৩০ একর জমির উপর নির্মিত স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ২১টি বিভাগে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। ১৩ জন প্রফেসরসহ ১৭৭ জন শিক্ষক পাঠদান করছেন যাদের মধ্যে ৪৪ জন শিক্ষক পিএচডি ডিগ্রিধারী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতোমধ্যে ৮টি ব্যাচ স্নাতক সম্পন্ন করে দেশে এবং বিদেশের কর্মস্থলগুলোতে নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। সম্প্রতি টেক জায়ান্ট কোম্পানি ইন্টেলে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় ব্যাচের ইইই বিভাগের এক শিক্ষার্থী। সিএসই ৫ম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন আরেক টেক জায়ান্ট কোম্পানি অ্যামাজনে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, মেডিকেল সেন্টার, সেন্ট্রাল ক্যাফেটোরিয়া, সেন্ট্রাল মসজিদ রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য দুটি আবাসিক হল, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে দুটি ডরমেটরি। শিক্ষার্থীদের পরিবহণের জন্য রয়েছে সাদা খয়েরি রঙের ৯টি নিজস্ব বাস। দীর্ঘ তেরো বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অনেক দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। এগুলোর মধ্যে আছে স্বাধীনতা চত্বর, শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ স্মারক মর্ু্যযাল 'জনক জ্যোতির্ময়' এবং কবি বন্দে আলী মিয়া মুক্তমঞ্চ। শিক্ষার্থীদের গান, গল্প, কবিতা, আড্ডায় সব সময় মুখর থাকে এই স্থাপনাগুলোর প্রাঙ্গণ। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৭ শতাংশ জমি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন লেক। প্রতিদিন এই লেকের পাড়ে আড্ডায় মেতে উঠছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে এসে লেকের পাড়ে সময় কাটিয়ে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক কাজ করে যাচ্ছেন সমান তালে। গড়ে তুলেছেন পাস্ট ডিবেটিং সোসাইটি, কণ্ঠস্বর আবৃত্তি দল, অনিরুদ্ধ নাট্যদল, জোনাকিসহ বিভিন্ন সংগঠন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আছে ৪৮০ কোটি ৭০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর এম রোস্তম আলী থাকাকালীন সময়ে শুরু হওয়া এই মেগা প্রকল্প চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন রয়েছে ১২তলা ভিত বিশিষ্ট দুটি একাডেমিক ভবন, ১০তলা ভিত বিশিষ্ট দুটি আবাসিক হল, প্রশাসনিক ভবন, টিএসসি, কনভেনশন সেন্টার, শিক্ষক-কর্মকর্তা ভবন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য মন্দির, পুলিশ ও আনসার ক্যাম্প। এ ছাড়া নির্মাণাধীন আছে প্রাচীন এবং আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে ডিজাইন করা একটি দৃষ্টিনন্দন গেট। ধারণা করা হচ্ছে চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বদলে যাবে পুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা। এত কিছুর মধ্যেও এখানে সংকট আছে অনেক কিছুরই। শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট, ল্যাব সংকট এখানে প্রকট। প্রকট আকার ধারণ করেছে শিক্ষার্থীদের সেশনজট। আছে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের সমস্যা, হলের ডায়নিংয়ে খাবারের সমস্যা, সেন্ট্রাল ক্যাফেটোরিয়ার খাবারের মানগত সমস্যা। তবে বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ডক্টর হাফিজা খাতুন এবং প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডক্টর এসএম মোস্তফা কামাল খান আশ্বাস দিচ্ছেন অতিদ্রম্নতই সমাধান করা হবে এসব সংকটের। নতুন ভিসি এবং প্রো-ভিসি আসার পর অনেক উদ্যোগ ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মনে সাড়া জাগিয়েছে। ছয় বছর পর সেন্ট্রাল নবীনবরণ পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। আশা দিয়েছেন দ্রম্নতই আয়োজন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের। এসব কারণে পাবিপ্রবিকে নিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন অনেকেই। আশা করছেন অল্প সময়ের ভেতরেই পাবিপ্রবিতে বড় একটি পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। তবে নতুন ভিসি এবং প্রো-ভিসির কাছে শিক্ষার্থীদের দাবি অতিদ্রম্নত সেশনজট কমানোর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট, ল্যাব সংকট কাটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।