শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর
  ১১ জুন ২০২২, ০০:০০

মধ্যগগনে মাথার উপর তেতিয়ে ওঠা অনিরুদ্ধ সূর্যের খরতাপে উত্তপ্ত শহরের পিচঢালা রাজপথ, দরদর করে ঝরছে ঘাম, গলা শুকিয়ে প্রাণটা যেন ওষ্ঠাগত। ক্লান্ত পথিক অদূরে কোনো ছায়াবীথি তলে বসে একটুখানি জিড়িয়ে নিতে গিয়ে একমুঠো প্রশান্তির ছোঁয়ায় হয়তো উদাস হয়ে যাবে। ততক্ষণে প্রকৃতি গেয়ে উঠবে, একবার ধরতে পেলে মনের মানুষ, ছেড়ে যেতে আর দিও না।

সত্যিই কি তাই? হৃদয়ে ভালোবাসার অনুরণন সৃষ্টি করা বসন্ত তো বিদায় নিয়েছে সেই কবে। মায়াহীন গ্রীষ্মের বুকে তবে কীভাবে এতটা রোমাঞ্চ? কে-ই বা ছড়াচ্ছে এত প্রেম। সুবিশাল বটবৃক্ষ বা সারি সারি আম্রকানন নয়, এই প্রেমের বাহক স্নিগ্ধ কৃষ্ণচূড়া। গ্রীষ্মের চিরায়ত রুক্ষতা, জীর্ণতাকে পাশ কাটিয়ে কখনো টকটকে লাল, কখনো রোদের ঝলমলে আভায় হালকা সোনালি রঙের পরশ বুলিয়ে এই ফুল ভুলিয়ে দেয় সব অবসাদ, মনকে করে প্রেমময়, চঞ্চল। 'এই সেই কৃষ্ণচূড়া, যার তলে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ, হাতে হাত, কথা যেত হারিয়ে'। এরকম অসংখ্য কালজয়ী গানে অসম্ভব ভালোলাগায় কৃষ্ণচূড়া মনের গহিনে ঢেউ তুলে যাচ্ছে শত শত বছর ধরে। নিষ্ঠুরতার অন্তরালে বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যের নীরব সৌন্দর্য দুরন্ত বাতাসে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়ার দোল চোখের প্রশান্তি, দৃষ্টির খোরাক। এই কৃষ্ণচূড়ার প্রেমে মজেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়সহ প্রখ্যাত সাহিত্যিকেরাও।

নয়নাভিরাম কৃষ্ণচূড়া তার রূপের পসরা সাজিয়ে বসেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি)। মনোহারিণী কৃষ্ণচূড়ার বর্ণিল সজ্জায় নিষ্প্রাণ প্রকৃতিতে নৈসর্গিক দৃশ্য এখন পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে। রাস্তার ধারে, লেকের পাড়ে, বিভিন্ন অনুষদীয় ভবন ও হলের আশপাশে ফোটা লাল কৃষ্ণচূড়া প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেছে সবাইকে। নীল আকাশ ছুঁয়ে এই আবীরে ছেয়ে গেছে গাছের শাঁখ, যেন আড়াল হয়ে গেছে সবুজ পত্র পলস্নব। সেই শাঁখে বাতাসের মৃদু স্পর্শে কেঁপে ওঠে প্রকৃতির বুক, দোলা দেয় অন্তরে। দুচোখ বুঁজে শুধু অনুভব করতে ইচ্ছা করে, রঙ্গলীলার গন্ধে মাতাল হতে চায়। মুগ্ধতা ছড়ানো সমীরণে কখনো ঝরে পড়ে একগুচ্ছ ফুল, রঞ্জিত করে পথ-ঘাট, এ যেন ঝরা পাতার লালগালিচা।

জৈষ্ঠ্যের সবটুকু উত্তাপ বুক দিয়ে আগলে কৃষ্ণচূড়া তার উজ্জ্বল শোভা বিলিয়ে দেয় সবার মধ্যে। তাই দেখে কবি আল মাহমুদ লিখেছেন, 'হাজার যুগের সূর্যতাপে, জ্বলবে এমন লাল যে, সেই লোহিতেই লাল হয়েছে, কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে'।

বরষার আবহে অঝোর বাদলধারা কৃষ্ণচূড়ার সৌরভ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে, হার মানায় অন্য সব সৌন্দর্যকে। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় সতেজ পুষ্পকলি ম্স্নান করে দেয় উষ্ণ প্রকৃতির যত অসহ্য অবসন্নতা। আর যখন সিক্ত ঝরা ফুল পড়ে থাকে সড়কজুড়ে মনে হয় আলতা পায়ে নববধূর পদচিহ্ন পড়েছে। এমনো ক্ষণে প্রিয় মানুষটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগে না কোনো অজুহাত, আসে না কোনো বিরক্তি। কারণ তুমি আসবে বলেই যে কৃষ্ণচূড়া ফুলে ফুলে লাল হয়েছে।

কৃষ্ণচূড়ায় রাঙানো এই দৃশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী সবার কাছেই উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। তরুণীদের কাছে এই ফুল খোঁপায় গোঁজা অন্যতম অনুষঙ্গ। শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাসের পর ক্লান্তির রেশ কাটানোর জন্য ও আড্ডার স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে লাল কৃষ্ণচূড়ার নিবিড় পরিবেশ। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে আগমন ঘটেছে নবীন শিক্ষার্থীদের। নতুন ক্যাম্পাসে প্রাণের স্পন্দনের মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দি করতে ব্যস্ত তারাও। সব মিলিয়ে প্রাণচঞ্চলতা বিরাজ করছে সর্বত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আমান উলস্নাহ বলেন, গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপের মধ্যে লাল কৃষ্ণচূড়া তার রঙের ছটায় মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে বাকৃবি ক্যাম্পাসে। এই রং ছড়িয়ে পড়ুক সবার মধ্যে এমনটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে