শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাকৃতিক নৈসর্গের বেলাভূমি

আবু জাফর
  ১১ জুন ২০২২, ০০:০০

একদিকে কর্মব্যস্ত ঢাকা অন্যদিকে চট্টগ্রাম তার ঠিক মাঝখানে সহস্র বছরের প্রাচীন ১২ মাইলের লালমাই-এর সারি সারি টিলা। যেন কর্মের স্রষ্টা তার কর্মীদের একটা রিফ্রেশ দেওয়ার জন্য এটা প্রস্তুত করেছেন। যান্ত্রিক কোলাহল ও বায়ুদূষণে যখন দেশের দুটি বড় শহর নাকাল তখন শহুরে মানুষ যেন এ টিলা অঞ্চলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে একটু খানি নির্মল বায়ুর প্রত্যাশায়। বর্তমানে টিলা অঞ্চলে সবচেয়ে নবীনতম আকর্ষণ হলো কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচীন শালবন বিহারের পাদদেশে নবীন কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক নতুন-পুরনোর মেলবন্ধন। এ বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির শিকড় অনুসন্ধানে অবশ্যই আসতে হবে এ শালবন বিহারে তেমনি বর্তমান বাংলাদেশের আধুনিক শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে হলেও আসতে হবে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারা। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় এখন তার শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পদার্পণ করেছে। প্রতি বসন্ত মৌসুমে প্রকৃতির সর্বোচ্চ দানে বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়া জীবন্ত হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে উঠে আসে নানা দিকে অজানা সব সৌন্দর্য। প্রতি বছরই যেন একটা আলাদা ও আকর্ষণীরূপে ধরা পড়ে কুবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-মসজিদ ও বিভিন্ন বিভাগগুলো। টিলার উপরে ডরমিটরি ও দত্ত হল থেকে যখন বৃষ্টির পানি, লাল মাটিযোগে রক্তিম হয়ে গড়িয়ে পড়ে তখন নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বসন্তে ও বৈশাখের প্রথম দিনে বর্ষবরণে আলাদা ঢঙে নিজেকে মেলে ধরে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়।

সূর্য ওঠার আগেই কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের। কৃষ্ণচূড়া রোড দিয়ে হেঁটে চলে শারীরিক ব্যায়ামরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একটু আলো ফুটতেই কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীরাও প্রাত ভ্রমণে ওই শহীদ মিনারের দিকেই যায়। এরপর আসে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মোন্নয়নমূলক সংগঠন 'সুপ্রভাতের' শিক্ষার্থীরা। প্রায় ঘণ্টাখানিক শিক্ষক আর শিক্ষার্থীরা নানা রকম শারীরিক কসরত করে। তারপর সুপ্রভাতের শিক্ষার্থীরা সকালের সাজে সজ্জিত করে লাল ইটের শহীদ বেদিকে। পূর্ব দিনের হকার মামার বাদামের ছোলাসহ সব ময়লা ঝাড়ু দেয় তারা। একটা আত্মতৃপ্তি থেকেই নাকি এ কাজ করে এই শিক্ষার্থীরা। তারা যেতে যেতেই নয়টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। ক্যাম্পাস থেকে দূরের শিক্ষার্থীরা হাতে সময় নিয়েই আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর তার অধিকাংশ সময়ই কাটায় এই শহীদ মিনারের পাদদেশে। এক ব্যাচের পর আরেক ব্যাচ আসতেই থাকে দুপুর পর্যন্ত। জুনিয়র-সিনিয়রের এক ধরনের মিলনমেলা হয়ে ওঠে তখন। তবে ভর দুপুরে রৌদ্রময় শহীদ বেদি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তাই ওই সময় শিক্ষার্থীদের তুলনামূলক কম কোলাহল থাকে। তারপরও সে সময় গেলে দু-চারজনের দেখা মিলতেই পারে। শহীদ মিনার তার আপনরূপে ফেরে পড়ন্ত বিকেলে। কেউ আসে পরীক্ষার চাপ কমাতে মুক্ত হাওয়া নিতে, কেউবা ক্লাস মেটদের সঙ্গে আড্ডা দিতে, আর কেউবা নিজ বান্ধবীকে নিয়ে। অদূরের লালমাই পাহাড়ের রক্তিমতা আর তার পাদদেশে কেন্দ্রীয় মাঠের ফুটবল খেলাকে উপভোগ করতে করতে কখন যে সূর্য পশ্চিম আকাশে অস্ত যায় তা অনেক সময় টেরই পাওয়া যায় না। শহীদ বেদির এক-এক কোণায় যেন এক এক রাজ্যের আয়োজন, এক কোনা থেকে হয়তো উঠছে সুরের মূর্ছনা তো অন্য কোনায় বসছে আঞ্চলিক কোনো সংগঠনের পরামর্শ সভা। সে এক এলাহি কান্ড। সূর্য অস্তের পরেই শহীদ বেদির মেলার অস্ত যায় না, আবছা আলোয় আসে আরও কয়েকটি গ্রম্নপ। তারা কখনো হলের গ্রম্নপ হয় কখনো বিভাগের তবে গ্রম্নপ করে তারা এসে এখানে গল্পের আসর জমিয়ে তোলে। আর এই গল্প-আড্ডা চলতে থাকে প্রায় মাঝ রাত পর্যন্ত। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত মঞ্চ থাকলেও মূল মুক্তমনার চর্চা হয় এই শহীদ মিনারেই। শিক্ষার্থী ছাড়া স্রেফ দর্শনার্থীদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। প্রতিদিন কোনো না কোনো জেলার মানুষ পা রাখে এই বেদি চত্বরে। একুশে ফেব্রম্নয়ারি, স্বাধীনতা দিবসসহ জাতীয় প্রায় অনুষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনারকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাজায় নতুন করে। এ যেন কুবির ফুসফুস। যাকে ছাড়া কল্পনাই করা যায় না এই ছোট ক্যাম্পাসকে। শত অপূর্ণতার মধ্যেও খানিক পূর্ণতা আর প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় কোনো বন্ধের আগে একটু সময়ের জন্য হলেও সবাই আসে এই মিনার চত্বরে। সেদিন যেন ছোটখাটো একটা ঈদের আমেজ তৈরি হয়।

কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ তার স্থাপত্য ও লাল পাহাড়ের পাদদেশে নৈসর্গিক দৃশ্যের কারণে উপমাতুল্য। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় নব্বই ভাগ মুসলিম শিক্ষার্থীদের প্রাণের স্পন্দন এই কেন্দ্রীয় মসজিদ। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। দেশকে উন্নত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার বদ্ধপরিকর। উন্নত দেশের মেরুদন্ড হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। আর তাই শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর নানা পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের প্রধান লক্ষ্য। জ্ঞান-গবেষণায় দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তারাই এগিয়ে আসবে সবার আগে। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নৈসর্গিকতার আদর পেয়ে পুরো দেশের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে নিবেদিত প্রাণ হবে এটাই আশা করে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে