নবযৌবনা বর্ষার একদিন

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০২২, ০০:০০

সানজিদা জান্নাত পিংকি
কালো মেঘ, গুমোট অন্ধকার, দমকা হাওয়া, গাছের পাতায় টুপটাপ, টিনের চালায় জাদুর নৃত্য, কোমল, শীতল পরিবেশ আর পুকুরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা রবিঠাকুরের মনে ঠিক এরকম ভালোলাগার ছবি এঁকেছিল, 'আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।' সত্যিই তো, তেজোদৃপ্ত সকাল, খটখটে তপ্ত দুপুর কিংবা তৃষ্ণার্ত বিকেল যখন প্রতিটি প্রাণে আগুন ধরায় আষাঢ়ে বৃষ্টি তখন সবার জন্য সজীবতা ঝরায়। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা যেন আনন্দের সাক্ষী হয়ে আন্দোলিত করে সবার হৃদয়। উদাসীন মন তখন হারিয়ে যায় দূরের অজানায় যেখানে কোনো এক স্বর্গীয় অনুভূতিতে ডুবে থাকি আমরা। ষড়ঋতুর এ দেশে এমন সৌন্দর্যের বার্তা নিয়ে আবারও বর্ষার আগমন। গ্রাম-বাংলার মেঠোপথ, মাঠ-ঘাট কিংবা শহুরে বিশাল অট্টালিকার ফাঁক ছাপিয়ে নবযৌবনা বর্ষার আগমন ঘটেছে ৩২ একরের গণ বিশ্ববিদ্যালয়েও। রিমঝিম শব্দের সঙ্গে টুপুর-টাপুর ধ্বনিতে শতগুণ অপরূপ সুন্দর হয়ে ওঠে বংশী নদীর কোলঘেঁষা ছোট্ট ক্যাম্পাসটি। প্রাণোচ্ছল এই ক্যাম্পাসে বৃষ্টি মানে এক অনন্য সতেজতা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বলতে আমরা শুধু করপোরেট পরিস্থিতিকেই বুঝি। কিন্তু গবিতে দেখা মেলে এক প্রাঞ্জল সবুজ ক্যাম্পাসের। বৃষ্টির ছোঁয়ায় বৃক্ষরাজি প্রাণ ফিরে পায়। বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস সাজে রোমান্টিকতায়। মধুর মধুর অসংখ্য মুহূর্তের জন্ম দেয় শিক্ষার্থীরা। বরাবরের মতোই ক্যাম্পাস মেতে ওঠে আড্ডা, হাসি-ঠাট্টায়। তবে এবারের আড্ডা চা, শিঙ্গাড়া কিংবা খোশগল্পে নয়। গিটারে টুংটাং ছন্দ, ক্যান্টিনের গরম খিচুড়ি, মুড়ি-চানাচুর, ছাদে, করিডোরে দলবেঁধে দুষ্টুমি, ক্লাসরুমে হৈ-হুলোড় কিংবা ইনডোর গেমসে। একগুচ্ছ কদমফুলে তরুণ-তরুণীদের প্রেম জাগে। এক ছাতার নিচে তাদের রোমান্টিকতা অথবা, আকাশ ভেঙে নামা বৃষ্টিতে একসঙ্গে ভেজার অনুভূতিতে বর্ষা তাদের জন্য সুন্দর নাকি বর্ষার জন্য তারা সুন্দর জানার উপায় নেই। এদিকে খেলাপাগল তরুণদের জন্য উন্মুক্ত খেলার মাঠ যেন শৈশবের ছোঁয়া। কাদা আর মাটিতে গড়াগড়ি, ভিজে ভিজে ফুটবলে লাথি, এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে দৌড়াদৌড়ি, চিৎকার করে গলা ফাটানো যেন বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়। উপর অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশ নিচে সবুজ মাঠ। ঘাসের মধ্যে বসে গানে গানে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা আর সে সৌন্দর্য ছুঁয়ে যায় প্রকৃতিকে সব সৌন্দর্যকে। অন্যপ্রান্তে বাদাম তলার বেঞ্চে বেঞ্চে বসে আড্ডার আসর। ক্লাসের ফাঁকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বসেও গল্প গুজবে বিভোর অনেকে। আকাশে তখন কালো মেঘের ঘনঘটা সঙ্গে মৃদু বাতাস। ক্যাম্পাসের ফুল বাগানের ফুলেরাও যেন আনন্দে দোল খাচ্ছে। এটি গবি ক্যাম্পাসের রোজকার চিত্র। হঠাৎ করেই শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। কেউ কেউ দৌড়ে একাডেমিক ভবনের দিকে যায়, কেউ কেউ আবার সঙ্গে থাকা ছাতা ফুটিয়ে গা বাঁচায়। তবে বৃষ্টিপ্রেমীরা সব উপেক্ষা করে বৃষ্টির রোমাঞ্চকর স্বাদ নিতে ছোটেন মাঠের দিকে। দলবেঁধে জলকেলি খেলতে শুরু করেন। যেন এমন দিনে স্মৃতির সাগরে ডুব দিয়ে খুঁজে ফেরেন হারিয়ে ফেলা সোনালি শৈশব। বৃষ্টিভেজা দিনে চঞ্চল মন কি করে ক্লাসে নিবদ্ধ থাকে! তাই তো অনেকেই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান ক্যাম্পাসজুড়ে। মেতে ওঠেন গানে আর আড্ডায়। একাডেমিক ভবনের বারান্দায় চোখ মেললেই দেখা যায় কয়েকজন মিলে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে। আবার হাসাহাসিতে মেতে উঠছে। যেন পার্থিব সব কিছুরই চিন্তা-ভাবনা উড়ে গেছে। প্রিয়-প্রেয়সী কিংবা দুষ্টু বন্ধুর দল একই ছাতার নিচে ঘুরে বৃষ্টি বিলাসের দৃশ্য মেলে জিমনেশিয়ামের পাশের রাস্তায়। প্রাঞ্জল সবুজ গবি ক্যাম্পাসে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটাই উপভোগ্য। বৃষ্টিতে ভেজার মধ্যেও একটা প্রকৃতির ধারক ও ভালোবাসা বিদ্যমান। আমার ক্যাম্পাস জীবনে বৃষ্টির এ সৌন্দর্য যেন জীবনকে নতুনরূপে এঁকেছে। তাই আনন্দটা অন্যরকম। পুরো ক্যাম্পাস বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাঁটলাম। বৃষ্টির দিনের ক্যাম্পাসের চেহারা সত্যিই অন্যরকম। ক্লাসের প্রতি সবারই যেন এক গা-ছাড়া ভাব। বৃষ্টির দিনে প্রকৃতিকে উপভোগেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই। তাই তো নিজের অজান্তে মন বলে ওঠে আজ নিজেকে ডুবিয়ে দেবো সূর্যস্নানে, শিহরণে হারিয়ে যাবো অচেনা সমুদ্রে।