মৌসুমি ফলের পসরা

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০২২, ০০:০০

ম আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা
ঋতুরাজ বসন্তকে বিদায় দিয়ে শুষ্কতা নিয়ে আগমন ঘটে ষড়ঋতুর প্রথম ঋতু গ্রীষ্মের। তীব্র দাবদাহে রুক্ষ হয়ে যায় বাংলার প্রকৃতি। ভ্যাপসা গরমে যখন জনজীবন স্থবির হয়ে আসতে চায় তখন আশার আলো জ্বালায় গ্রীষ্মের ফলমূল। এই সব ফলের সমাহার দেখা যায় ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে 'প্রকৃতির স্বর্গ' বলে অভিহিত করা হয়। প্রকৃতি বছরের বারো মাসই বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে তোলে এই ক্যাম্পাসকে। ভ্যাপসা গরমে শিক্ষার্থীরা যখন হাঁসফাঁস করে তখন তাদের মনে প্রশান্তি বয়ে আনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মৌসুমি ফলের গাছ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ থেকে শুরু করে সমাজবিজ্ঞান চত্বর, বোটানিক্যাল গার্ডেন, পুরাতন কলা কিংবা প্রান্তিক, যেখানেই চোখ যায় কেবল ফলে পরিপূর্ণ গাছ দেখা যায়। জাবিতে ফলের রাজা কাঁঠালগাছ সব থেকে বেশি। পাকা কাঁঠালের মিষ্টি সৌরভে ভরা ম-ম ঘ্রাণে যেন মন ভরে যায়। কাঁঠাল ছাড়াও রয়েছে আম, জাম, তেঁতুল, লিচু, লটকন, করমচাসহ অনেক রকমের ফলের গাছ। বসন্তের শুরু থেকেই প্রতিটি আঙিনায় আমের মুকুল দেখা দেয়। শুধু যে ফুল গাছকে বিভিন্ন রঙে ফুটিয়ে তোলে তা কিন্তু নয়। লাল, হলুদ, সবুজ, খয়েরি, কমলা বিভিন্ন রঙের ফল দ্বারা গাছগুলো যেন নতুন রঙে সেজে ওঠে। গাছে যখন লাল রঙের জামরুল আর করমচা ঝুলে থাকে তখন দেখে মনে হয় বড়দিন উপলক্ষে কেউ যেন 'ক্রিসমাস ট্রি' সাজিয়েছে। ফলগুলো যখন পাকতে শুরু করে তখন দলবেঁধে শিক্ষার্থীরা এই ৭০০ একর ঘুরে ঘুরে ফল সংগ্রহের আনন্দে মেতে ওঠে। বিভিন্ন বিভাগের বা হলের ছাত্র-ছাত্রীরা একত্রিত হয়ে ফলমূল পেড়ে একটি ছোটখাটো বনভোজন করে ফেলে। যখন কাঁচা আম খেতে ইচ্ছা করে তখন আম পেড়ে একটু লবণ, কাঁচা মরিচ আর কাসুন্দি দিয়ে মেখে গপাগপ খেয়ে ফেলে তারা। করমচা, তেঁতুল হালকা বিট লবণ আর মরিচের গুঁড়া দিয়ে খাওয়ার জন্য বেঁধে যায় প্রতিযোগিতা। শুধু পাকা কাঁঠালই নয়, কাঁচা কাঁঠাল দিয়েও চলে এঁচোড় রান্না করে খাওয়া। বৈশাখী ঝড়ে শিক্ষার্থীরা আম কুড়ানোয় মেতে ওঠে। শুধু জনমানব নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপাখিরাও যেন এই আনন্দের ভাগিদার। হঠাৎ উপরে চোখ পড়লে দেখা যায় গাছের ডালে বসে কোন কাঠবিড়ালি ছোট্ট একটি পেয়ারা খপ করে মুখে পুরে নিল। কিংবা এক জোড়া টিয়াপাখি গাছের ডালে বসে মনের আনন্দে লেজ দুলাতে দুলাতে লাল জামরুল খাচ্ছে। একটু লক্ষ্য করলেই বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের তৃপ্তি সহকারে বিভিন্ন জাতের ফল খেতে দেখা যায়। এমনই এক নৈসর্গিক সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব আয়োজন করে এক 'মৌসুমি ফল উৎসব'-এর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সংলগ্ন সপ্তম ছায়ামঞ্চে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। ব্যানার, হরেক রঙের বেলুন ও কাপড় দিয়ে সাজিয়ে স্থানটিকে রঙিন করা হয়। এই রঙের সঙ্গে যুক্ত হয় আরও একাধিক রঙের ফলমূল। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেয়ারা, তরমুজ, তাল, লটকন, কামরাঙা, করমচা, জাম্বুরা, পেঁপে, কাউ, তেঁতুলসহ প্রায় ৩০ রকমের ফলের সমাহার ছিল এই আয়োজনে। ফলগুলোকে ডালায় করে পরিপাটি করে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়। প্রেস ক্লাবের বর্তমান সদস্য, সাবেক সদস্য ও শিক্ষকদের জমায়েতে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে সপ্তম ছায়ামঞ্চ। একপর্যায়ে শুরু হলো ফলমূল খাওয়ার পর্ব। মঞ্চের চারপাশে ডালাগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া হলো। সবাই ঘুরে ঘুরে যার যার পছন্দের ফল তুলে খেতে শুরু করল। এ সময় ছায়ামঞ্চের আশপাশের শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের সাবিকুন নাহার আশা তার সহপাঠীদের সঙ্গে এ সময়ে সংযুক্ত হয়ে বলেন, 'আমার কাছে এটা খুবই ব্যতিক্রমধর্মী একটা উৎসব বলে মনে হয়েছে, ঘুরে ঘুরে খাওয়ার যে বিষয়টা খুব আকর্ষণীয় ছিল। এই উৎসবে এমন কিছু ফল ছিল যেগুলোর সঙ্গে আমি কখনো পরিচিত ছিলাম না কিন্তু প্রেস ক্লাবের দ্বারা আয়োজিত এই উৎসবের কারণে চিনতে পেরেছি।' জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইমন মাহমুদ বলেন, 'পরিবার পরিজন ও কাছের মানুষকে নিয়ে ফল খাওয়া একটি আনন্দের বিষয়। কিন্তু পরিবার থেকে দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করায় এই আনন্দ থেকে আমরা বঞ্চিত হই। প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে এই ফল উৎসব আয়োজনের মধ্যদিয়ে আমরা এই পারিবারিক আবহাওয়াটা দিতে চাচ্ছি। মৌসুমি ফল আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে অংশীজনদের নিয়ে এই মৌসুমি ফল উৎসব আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।'