বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

'রূপসীর ঝর্ণা বিলাস'

মো. মুরাদ হোসেন
  ১৬ জুলাই ২০২২, ০০:০০

বর্ষায় চট্টগ্রামের পাহাড়িঘেরা সুবজায়নের রূপ-প্রকৃতির সৌন্দর্য বিমোহিত করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। নিবু নিবু করে চলতে থাকা পাহাড়ি ঝর্ণাধারাগুলো বর্ষার আগমনে প্রাণের সজিবতা ফিরে পেয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে ভ্রমণপিপাসুদের। তেমনি একটি অনিন্দসুন্দর ভ্রমণ স্থান হলো বড় কমলদহ রূপসী ঝর্ণা। এই ঝর্ণাটির মনোমুগ্ধকর আকর্ষণীয় রূপের কারণে স্থানীয়রা একে রূপসী ঝর্ণা নাম দিয়েছে। যা চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার ওয়াহিদপুর ইউনিয়নে বড়কমল এলাকায় অবস্থিত।

রূপসী ঝর্ণায় অবিরামভাবে গড়িয়ে পড়া স্বচ্ছ পানির শীতল পরশ নিতে আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিছু ভ্রমণপিপাসু শিক্ষার্থী ২৫ জুন সকাল ৬টায় ক্যাম্পাস থেকে রওনা দিই। ক্যাম্পাস থেকে রওনা দিয়ে ভাটিয়ারি আসি। ভাটিয়ারি থেকে বাসে করে মিরসরাইয়ের বড় দারোগার হাট পৌঁছি। স্বল্প সময়ের বাস ভ্রমণে কোরাস গানের আসর বসিয়ে আনন্দঘন ভ্রমণের শুভ সূচনা হয়। বড় দারোগা হাটে সকালের নাশতা শেষ করে পাঁচ মিনিট হেঁটে রূপসীর ঝর্ণা স্পটের নিকট পৌঁছাই। সেখানে থাকা একটি হোটেলে কথা বলে, সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হোটেল কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিয়ে এবং দুপুরের খাবার অর্ডার করে ঝর্ণার দিকে রওনা দিই।

দুই পাশে সুবিশালভাবে দন্ডায়মান সবুজ পাহাড়ের মধ্যে স্বচ্ছ পানির শীতল জলধারা দিয়ে হাঁটা সময় অনন্য অনুভূতি সবাইকে উদ্বেলিত করে। রূপসী ঝর্ণার রয়েছে ৩টি আলাদা আলাদা ধাপ। এরা বড় কমলদহ, ছাগলকান্দা ও পাথর ভাঙ্গা ঝর্ণা নামে পরিচিত। প্রথম ধাপের ঝর্ণাটি অনেকটা বড় একটি ঝর্ণার মতো। এই ঝর্ণাটা অনেকটা খাড়া পথ বেয়ে নেমে পড়ছে। এটি আসল রূপসীর বাইরের রূপ। প্রথমধাপের ঝর্ণাটিতে পৌঁছে সবাই স্বচ্ছ জলধারায় নিজেদের ভিজিয়ে নেয়। এই প্রথম ধাপটি বেয়ে উঠলে একটি বড় পাথর রয়েছে। ১০ ফিটের খাড়া এই পাথরটা বেয়ে উপরে উঠে আরও চমৎকার সৌন্দর্য নজর কাড়ে। সম্মুখে রয়েছে বৃক্ষ, ফুল, লতা-পাতা ঘেরা বিশাল ঝিরিপথ (পাহাড়ের পানি নামার পথ)। ঝিরিপথ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে মনে হয়েছে যেন কোনো গুহার মধ্যদিয়ে হেঁটে হেঁটে রহস্যভেদ করছি আমরা। ঝিরিপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে পাওয়া যাবে দুটি পথ। এক পথের আকার বড়, আরেক পথের ছোট। বড় পথ ধরে একটু গেলেই রূপসীর মূল ঝর্ণা।

অনেক দূর থেকেও আমাদের কানে ভেসে আসছিল ঝর্ণার পানি পড়ার ধ্বনি। এই রূপসী ঝর্ণার ধ্বনি ও জলধারা যে একবার দেখছে সে বারবার দেখতে চাইবে। চলার পথে দেখা পেয়েছি নানা রকম পাখ-পাখালি। রূপসীর জলধারা মুহূর্তেই ভুলিয়ে দিয়েছে আমাদের ভ্রমণের সব ক্লান্তি। ৫০ ফিট উপর থেকে বয়ে পড়া ঝর্ণার সুমধুর ধ্বনি আর রূপসীর জলুস যে কাউকে মুগ্ধ করবে। পাথর বেয়ে পড়া স্বচ্ছ জলের অমিয় ধারা আপস্নুত করে দিয়েছে আমাদের ভ্রমণপিপাসু সবাইকে। রূপসীর রূপের সুধায় পরিতৃপ্ত করেছে আমাদের তরুণ মনকে। প্রায় চার ঘণ্টার ঝর্ণা ভ্রমণ শেষে বড়কমল এলাকার কুড়ে হোটেলে এসে আমরা ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ করি। গ্রামীণ এলাকায় হোটেলগুলোতে বহু মানুষের গোসলের ব্যবস্থা ও জিনিসপত্রের নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই ভালো। তাদের আন্তরিকতা আমাদের আবার যেতে আগ্রহী করে তুলেছে। সেখান থেকে আসার পথে সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী বিচে সূর্যাস্ত দেখে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে আমাদের রূপসীর ঝর্ণা বিলাসের যাত্রা শেষ করি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে