মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ‘মুক্তবাংলা’

প্রকাশ | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ইরফান রানা
‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বঁাচিতে চায় হে, কে বঁাচিতে চায়...?’ রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় যথাথর্ই লিখেছেন। স্বাধীনচেতা মানুষ সবর্দা স্বাধীন থাকতে চায়। এ ধরার কোনো প্রাণীই পরাধীন থাকতে ভালোবাসে না। পৃথিবীর সব মানুষই স্বাধীনভাবে নিজের চলাফেরা, ভাব প্রকাশ, কাজ-কমর্সহ সব স্থানে নিজেকে স্বাধীনভাবে উপস্থাপন করতে চায়। অপার স্বাধীনতায় নিজের অনুভ‚তিগুলো ব্যক্ত করতে। পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর দীঘর্ ২৩ বছর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে। তাদের অত্যাচার, নিযার্তনে অতিষ্ঠ হয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটেছে হাজারও ঘটনা। এসব ঘটনা স্মরণীয় করে রাখতে দেশের নানা স্থানে বিভিন্ন স্মৃতি ভাস্কযর্ তৈরি করা হয়েছে। ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলোÑ ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে (বৈদ্যনাথ তলা ভবেরপাড়া) বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন। এই ঘটনার ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক স্মৃতি ভাস্কযর্ ‘মুক্তবাংলা’। ১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্মৃতি ভাস্কযির্টর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচাযর্ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইনাম-উল-হক। ভাস্কযের্র স্থাপত্য ও নকশা শিল্পী তৈরি করেছেন রশীদ আহমেদ। ভাস্কযির্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে প্রবেশের পর হাতের ডানপাশে এবং প্রশাসন ভবনের পূবির্দকে অবস্থিত। সাতটি স্তম্ভের উপর মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে একটি রাইফেল ধরা অবস্থায় ভাস্কযির্ট স্বগৌরবে দঁাড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে। সাতটি স্তম্ভের অথর্ হলো সাত সদস্য বিশিষ্ট মুজিবনগর মন্ত্রিসভার প্রতীক। স্তম্ভের উপর মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার একটি দৃঢ় মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে ধরা রাইফেল। প্রতিটি স্তম্ভ বিমূতর্ প্রসারিত হাত ধরাধরি উল্লাসিত অবয়বে ইসলামী স্থাপত্যভিত্তিক কারুকাযের্ রচিত। আর লাল রং দিয়ে বোঝানো হয়েছে চোখে লাল সূযের্র বিজয় প্রত্যাশা। পুরা কাঠামোটি সাতটি স্তম্ভ সংবলিত একটি অধর্-উদীয়মান সূযর্। স্তম্ভের মূল মেঝে দিয়ে বোঝানো হয়েছে মুজিবনগরের সরকার গঠনের অস্থায়ী সনদ। মোজাইক নীল টাইলসের অথর্ হলো শান্তি। উপর থেকে দ্বিতীয় ধাপে কালো রঙের পাথর বসানো এর অথর্ হলো শোক-দুঃখ। উপর থেকে তৃতীয় ধাপে সাদা রঙের অথর্ হলো সন্ধি ও যোগাযোগ। বেদির উপর থেকে ৪থর্ ধাপ লাল সিরামিক বড় ইট দিয়ে তৈরির অথর্ আন্দোলন ও যুদ্ধ। সবির্ন¤েœ দেখা যাবে বিতৃস্ত টাইলসে ইট বসানোর অথর্ হলো লাগাতার আন্দোলন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এক দিনেই শেষ হয়নি। পযার্য়ক্রমে বিভিন্ন ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে ধীরে ধীরে অজির্ত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। তাই ভাস্কযির্টর নামকরণ করা হয়েছে ‘মুক্তবাংলা’।