শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন এখন যেন এক ভ্রাম্যমাণ ক্যানভাস

নতুনধারা
  ২০ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম জুনায়েদ রেজা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ এলেই সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে ভেসে ওঠে শাটল ট্রেনের ছবি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য পাহাড়ি সৌন্দর্য যে কাউকে খুব সহজেই মুগ্ধ করে। পাহাড়ি ক্যাম্পাসে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে চট্টগ্রাম শহর থেকে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতকারী শাটল ট্রেন। এরকমটি দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় না। শাটল ট্রেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দারুণ এক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে দীর্ঘদিনের পথচলায়। এই শাটল ট্রেনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের বিচিত্র অম্স্নমধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এই শাটল ট্রেন নিয়ে কত গান, গল্প-উপন্যাস রচিত হয়েছে তার হিসেব নেই। নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রও। যা বেশ সাড়া জাগিয়েছেও। অসংখ্য শিক্ষার্থীর খেরোখাতায় থাকা সেই রঙিন শাটল ট্রেন এবার সত্যি সত্যি বর্ণাঢ্য এবং উজ্জ্বল প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। সেটাও হয়েছে বিদেশি এক তরুণ চিত্রশিল্পীর শৈল্পিক হাতের নান্দনিক ছোঁয়ায়। জার্মান তরুণ চিত্রশিল্পী লুকাস জিলিঞ্জারের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় বর্ণিল ও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী শাটল ট্রেন। প্রাকৃতিক রঙের চমৎকার ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত বিষয়গুলো বিমূর্ত এবং নান্দনিক হয়ে উঠেছে। শাটল ট্রেনের প্রতিটি বগিই যেন হয়ে উঠেছে একেকটি চলমান ক্যানভাস। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে মলিন হয়ে থাকা বিবর্ণ রেলবগিগুলো সবার কাছে নতুনভাবে উজ্জ্বল আর বর্ণিল হয়ে ধরা দিয়েছে। যা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দারুণ এক প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে।

জার্মান তরুণ চিত্রশিল্পী লুকাস জিলিঞ্জার তার স্ত্রী লিভিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক শিক্ষার্থীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় নানা রঙে অপূর্বভাবে রাঙিয়ে তুলেছেন ঐতিহ্যবাহী শাটল ট্রেনকে। যা ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে সর্বমহলে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে এখন বর্ণময় উজ্জ্বল ক্যানভাসে সজ্জিত শাটল ট্রেন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের রিপোর্টিং-এর সুবাদে দেশ-বিদেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সুদূর জার্মানি থেকে আসা তরুণ চিত্রশিল্পী লুকাস জিলিঞ্জারের সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় নিজস্ব অর্থায়নে শাটল ট্রেনের গায়ে এঁকেছেন বাংলাদেশের ঐতিহ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। একটানা বেশ কয়েকটি দিনের প্রাণান্তকর পরিশ্রম ও চেষ্টায় নানা রঙে রাঙিয়ে তোলার পাশাপাশি শাটল ট্রেনকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজিয়েছেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চিন্তাচেতনায় নতুনভাবে প্রভাব ফেলছে। এখন দিনভর শহর থেকে ক্যাম্পাসে ২২ কিলোমিটার পথ ঘুরে বেড়াচ্ছে জাতীয় সংসদ ভবন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন, সুন্দরবন, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চট্টগ্রামের সিআরবি, চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ, সূর্যাস্ত এবং সমুদ্রের নানা রঙিন মনকাড়া দৃশ্য। সুদীর্ঘ ৪২ বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাহন হিসেবে চলাচলকারী শাটল ট্রেন একটি অনবদ্য অনুষঙ্গ হয়ে আছে ক্যাম্পাস জীবনে। এটি শিক্ষার্থীদের জীবনের আনন্দঘন মিষ্টিমধুর নানা অভিজ্ঞতার সাক্ষী। নতুনভাবে নতুন সাজে বর্ণময় হয়ে ওঠা শাটল ট্রেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে ভিন্ন এক আমেজ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে সন্দেহ নেই। অনন্য সব চিত্রকর্মে সজ্জিত শাটল ট্রেন ভ্রাম্যমাণ ক্যানভাস হয়ে যেন ধরা দিয়েছে সবার কাছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন এক অনন্য ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্রছাত্রী সবার অনেক মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই শাটল ট্রেনের সঙ্গে। বাংলাদেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জীবনের সঙ্গে তেমন দারুণ চমৎকার একটি অনুষঙ্গ জড়িয়ে নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের বগিগুলো দীর্ঘ দিনে বর্ণহীন, মলিন হয়ে উঠেছিল। যা সম্প্রতি নতুন সাজে সেজেছে। ক্যাম্পাস জীবনে দারুণ এক চমক নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। তরুণ জার্মান চিত্রকর লুকাস জিলিঞ্জারের অক্লান্ত পরিশ্রমে এবং আন্তরিকতায়, সবার স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। যেখানে ক্যাম্পাস মানেই প্রাণের উচ্ছ্বাস আর তারুণ্যের সুন্দর প্রকাশ। সন্ত্রাস, হিংসা, বিদ্বেষ, মারামারি দলাদলি সেই আমেজ নষ্ট করে দেয় বারবার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গোটা ব্যাপারটি বেশ সাড়া জাগিয়েছে সর্বমহলে। যেখানে ক্যাম্পাস মানেই প্রাণের উচ্ছ্বাস আর তারুণ্যের সুন্দর প্রকাশ। সন্ত্রাস, হিংসা, বিদ্বেষ, মারামারি দলাদলি সেই আমেজ নষ্ট করে দেয় বারবার। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের নান্দনিক রূপ সবাইকে সৃজনশীলতা, রুচিশীলতা, সৌজন্যবোধে উদ্দীপ্ত করবেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে