স্মৃতি ফেরালো ক্যাম্পাসের চড়ুইভাতি

প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

ম তানভীর আহম্মেদ
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চড়ুইভাতি শব্দটি ভুলতে বসেছে বর্তমান প্রজন্ম। অথচ এমন রোমাঞ্চকর আর অভূতপূর্ব অনুভূতির এই আয়োজনটি কোনো এক সময় হারিয়ে যাবে তা কল্পনারও বাইরে ছিল। গ্রামীণ সমাজের ছেলেমেয়েদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল এই বিষয়টি। ছোট-বড় দল বেঁধে সবাই মিলে এমন একটা আয়োজন তৈরি করতে লাগত না কোনো বিশেষ দিন বা উপলক্ষ। \হমনে মনে মিল থাকলেই হয়ে যেত অন্যরকম এক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তারপর শুরু হতো উৎসবের এক মহাযজ্ঞ। দায়িত্ব ভাগ করে কাজ করা এবং জিনিসপত্র নিয়ে আসার প্রক্রিয়া যেন সৃষ্টি করত একটি আদর্শ সমাজ। আনন্দ আর উৎসবে সংসারজীবনের অভিজ্ঞতা কিংবা, সুষ্ঠু ব্যবস্থপনা, অথবা নৈতিকতার অনন্য নিদর্শন হিসেবে এটি যেন ছিল চরম দৃষ্টান্ত। ছোট্ট বয়সি কিংবা উঠতি বয়সি তরুণ প্রজন্মের কাছে এই শিক্ষাটা যেন প্রকৃতির অপার উপহার। \হদুঃখের বিষয়, স্যাটেলাইটের এই যুগে সবই যেন নেট দুনিয়ায় ডুবে যাচ্ছে। আর এই চাপে পৃষ্ঠ হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে অসাধারণ বিষয়টি। কথায় আছে, ঐতিহ্যের বাহকদের হাতে টিকে থাকে ইতিহাস। ঠিক যেন এরই দৃষ্টান্ত দেখালো সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমাল সায়েন্স অনুষদের ৪র্থ ব্যাচের ইন্টার্ন ডাক্তাররা। যদিও এর কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। আগেরদিনের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে সোনালি অধ্যায় শেষে বেঁচে যাওয়া অর্থই সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিল। মূলত এই অবশিষ্ট টাকাগুলো দিয়ে কি করা যায় চিন্তা থেকেই চড়ুইভাতির আবিষ্কার। যে ভাবনা সেই কাজ। পরদিনই অর্থাৎ ২ জুলাই ঘটা করে আয়োজন করা হলো। কেউ পেল বাজারের দায়িত্ব, কেউবা রান্না, কেউ পেল পরিষ্কার আর কেউ কাটাকাটি, আবার কেউ আছে খাবার বণ্টনে। খানিক মুহূর্ত ছোটবেলায় ফিরে যাওয়ার মতো হলেও চড়ুইভাতির ব্যাপ্তি যে আরও বিশাল হতে পারে তারও এক নিদর্শন তৈরি করে দেখানো হলো। টিম ওয়ার্ক কাজের ফাঁকে গিটারের সুরে যে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা হয় তারও একটা অনন্য সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন। ছিল লটারির মাধ্যমে দারুণ দারুণ উপহার জেতার সুযোগ। ব্যবহারিক ক্লাসরুম, অপারেশন থিয়েটার, হাসপাতালের করিডোর, কর্মচারীদের রুমের বারান্দায় যেন সেজেছিল রঙিন আলপনায়। শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে আড্ডা, দুষ্টুমি, গান, কাজ, ফটোসেশন, আর খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে লটারি আর উপহারের কম্বিনেশন নিয়ে গেল অন্য অপার সৌন্দর্যে। এই বিষয়ে, শাম্মাম হোসেন আরাফাত বলেন, গত ৫ বছরের ক্যাম্পাস জীবনে তেমন একটা আনন্দঘন মুহূর্ত পাই নাই বললেই চলে। ক্যাম্পাস জীবনের শেষের দিকে হুট করে একদিন সবাই মিলে পরিকল্পনা হলো চড়ুইভাতির। কাজ করা, রান্নাবান্নায় সহযোগিতা, গল্প-গান-আড্ডা সব মিলে এক আনন্দঘন পরিবেশ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষদিকে এসে এরকম আনন্দঘন মুহূর্ত স্মৃতি হয়ে থাকবে সারাজীবন। একসঙ্গে এতকিছুর সম্মিলন আর শিক্ষক, সহপাঠী, কর্মচারী সবার এক হয়ে যাওয়ার সোন্দর্য, মিলে-মিশে যে সমাহার তৈরি করল তার ক্যানভাসে হারিয়ে যেতে যেতে কখন যে সময়টা বিদায় নিল বুঝতে পারেনি কেউই। প্রকৃতির এই খেলায়ও বেজে উঠল ফেরার ঘণ্টা। ক্লাস ছুটি দিয়ে আমরা কিছু সময় নিজেদের করে রাখতে পারলেও বাকি সময়টা আমাদের ছুটি দিল প্রকৃতি। স্বল্প সময়ের মহেন্দ্রক্ষণ বিদায়ের আগে ফেবুলাস ফোরের বিজয় চিহ্নের উপরে তৃতীয় চোখের ক্লিক ক্লিক শব্দে হারিয়ে গেল। ক্যাম্পাসে চড়ুইভাতির স্মৃতি ফেরাতে আরও একটা স্মৃতি তার পাতায় যুক্ত হলো। এই স্মৃতির চোরাবালিতেই ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া বড়বেলায় উদ্ধার হওয়া আরও এক স্মৃতি বিদায় নিল।