তরুণ প্রজন্মর ভাবনায় মাদকের ভয়াবহতা

মাদকাসক্তিকে এক কথায় 'উন্মুক্ত বিষপান' বলা চলে। যে বিষ ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত ব্যক্তির দৈহিক গন্ডি পেরিয়ে পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতিকে আক্রান্ত করছে। ধ্বংস করছে কোটি কোটি জীবন। ফাটল ধরছে অজস্র পারিবারিক বন্ধনে। এতকিছুর পরও দেশজুড়ে চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। দ্রম্নত এই কুচক্র ভেদ করা না গেলে জাতিকে কঠিন মূল্য পরিশোধ করতে হবে। মাদকাসক্তির প্রভাব ও তা নির্মূলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

আসিফ হোসেন
লতিফা আক্তার চুমকি
মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরিবারের জন্য বোঝা লতিফা আক্তার চুমকি শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ প্রত্যেক বাবা-মা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ নিঃস্বার্থভাবে ব্যয় করে সন্তানের সুন্দর স্বাভাবিক জীবনের জন্য। তাদের প্রত্যাশা সন্তান ভালো কিছু করবে, সমাজের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এবং একসময় বৃদ্ধ মা-বাবার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবে। তবে, তাদের আশা চুরমার হয়ে যায় সন্তান যখন বুঁদ হয়ে পড়ে নেশাদ্রব্যের তীব্রতায়। তারা মাদক ক্রয়ের অর্থ জোগাতে পরিবারের উপর পাশবিক অত্যাচার করে। অন্যদিকে, তিলে তিলে শেষ করে নিজের স্বাস্থ্যকে। বিভিন্ন জটিল রোগের শিকার হয়। পরে তার চিকিৎসা খরচ মেটাতে গরিব বাবা-মা নিজেকে দেউলিয়া করে দেন। এভাবেই মাদকাসক্ত ব্যক্তি ছোট থেকে আদর-ভালোবাসা দিয়ে বড় করা পরিবারের কাছে বোঝায় পরিণত হয়। বস্তুত, মাদক গ্রহণ একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং সমাজের চোখে মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিন্দনীয়। মাদক গ্রহণ কখনোই একটা সুস্থ, সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারে না, বরং ক্রমেই জীবনকে অন্ধকারের দিকে ধাবিত করে। মাদকাসক্তি সমাজের বিশৃঙ্খলার মূল নূরুল ইসলাম শিক্ষার্থী, টু্যরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বর্তমান সমাজে সকল অন্যায়, অশ্লীল ও নৈতিকতা বহির্ভূত কাজের মূলে পাওয়া যায় মাদকের চিহ্ন। একজন ব্যক্তি যখন মাদক সেবন করে তখন সে আর সুস্থ মস্তিকের মানুষ থাকে না। সে পরিণত হয় অচৈতন্য ও মনুষ্যত্বহীন এক পশুতে। পারে না নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে। তখনই সূচনা ঘটে তার নীতি বিগর্হিত কার্যকলাপের। তারা ইভ টিজিং, ধর্ষণ, লুটপাট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ডাকাতি, অন্যায়ভাবে মানুষকে মারধরসহ আরও নানা অপকর্মের জন্ম দেয়। যা একটি সমাজকে বিশৃঙ্খল করে তোলে এবং রীতিমতো মানুষের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে হিংস্র হয় যখন মাদক ক্রয়ের জন্য তাদের অর্থের প্রয়োজন হয়। এসময় তারা টাকার বিনিময়ে লুটপাট, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি এমনকি হত্যাকান্ডের ঘটনাকে বাস্তবায়ন করতে পিছ পা হয় না। নিজের পরিবারকেও করে দেয় সহায় সম্বলহীন। এভাবেই মাদকের আদলে কোমলমতি, সৃজনী মানুষ পরিণত হয় পশুতুল্য, ঘৃণিত, অভিশপ্ত সমাজের কীট হিসেবে। মাদক ব্যবসা এক ওপেন সিক্রেট মাইন উদ্দীন হাসান শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ সারাদেশে অবাধ বিস্তার লাভ করেছে মাদকের বেচাকেনা। এই সম্পর্কে জানার পরও প্রশাসন ভূমিকা পালন করছে নীরব দর্শকের মতো। যেন তাদের কিছু করার নেই। যার কারণ রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তিরা মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এতে প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না মাদক ব্যবসায়ীদের সমূলে নির্মূল করা। এভাবেই পার পেয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা আর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মাদকচক্রের জাল ক্রমেই ঘন হচ্ছে। মাদক বিক্রির সঙ্গে তাল-মিলিয়ে বাড়ছে মাদক সেবকের সংখ্যা। ফলে সমাজে বিঘ্নিত হবে শান্তি, বিরাজ করবে এক বিশৃঙ্খল পরিবেশ। যত দ্রম্নত সম্ভব মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরি। যাতে আগামী প্রজন্ম একটি সুন্দর সমাজে বেড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়ছে মাদকের প্রসার মো. মুরশালিন শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সর্বজনীন জ্ঞানের ভান্ডার। দেশ-বিদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান আহরণ করতে একত্রিত হয় এখানে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে মাদকাসক্তি। পড়ার টেবিলের পরিবর্তে মাঝরাতে তাদের দেখা মেলে ক্যাম্পাসের নির্জন কোনো কোণে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় নিমগ্ন হয়ে। তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদের পরিবর্তে পরিণত হচ্ছে জাতীয় বর্জ্যে। এর মূল কারণ হচ্ছে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা। ক্যাম্পাস সীমানাতেই চলে অনিরুদ্ধ মাদক ব্যবসা। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম ব্যর্থতা স্পষ্ট। অন্যদিকে, বাবা-মায়ের থেকে অনেকদূরে অবস্থান করায় অনেকটা জবাবদিহি মুক্ত জীবনযাপন করে শিক্ষার্থীরা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতি অভিভাবক ও শিক্ষকদের সুনজর রাখা আবশ্যক। সীমান্তে মাদকের অনুপ্রবেশ রোধ করতে হবে মো. আব্দুল হাকিম জুবাইর শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ মাদক যেন এক ভয়ঙ্কর দানব! যার কবলে প্রতিনিয়ত বীন্দ হচ্ছে দেশের লাখ লাখ মানুষ। তিন দশক আগে মফস্বলের দিকে মাদকের সহজলভ্যতা ছিল না। বর্তমানে প্রযুক্তি এবং উন্নতমানের যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে শহর থেকে শুরু করে মফস্বলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে মাদকের বিষাক্ত ছোবল। এভাবে চলতে থাকলে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে দেশের তরুণ প্রজন্ম। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ প্রত্যেক জায়গাতেই মাদকের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশ সরাসরি মাদক উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও মাদকের ছড়াছড়ির অন্যতম কারণ মাদকের সহজলভ্যতা। নানা কৌশলে বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য সীমান্তবর্তী পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়ছে। যতদিন ভারত এবং মিয়ানমার থেকে মাদকের অবৈধ আমদানি বন্ধ করা না যাবে ততদিন পর্যন্ত দেশকে মাদকের থাবা থেকে রক্ষা করা যাবে না। সীমান্ত দিয়ে মাদকের অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি প্রয়োজন এবং সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আরও কঠোর হতে হবে।