'শিক্ষা ও সংস্কৃতি হোক ভাটি অঞ্চলের হাতিয়ার'

প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

ম আজিজুল হক
সুনামগঞ্জ বাংলাদেশের হাওড় জনপদের এক নাম। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ টাঙ্গুয়ার হাওড় সুনামগঞ্জ জেলাকে পরিবেষ্টিত করায় এই এলাকাকে বলা হয়ে থাকে হাওড়াঞ্চল। ৩৭৪৭ বর্গ কিলোমিটারের জেলায় ২৪৬৭৯৬৮ জনসংখ্যার বসবাস। দুঃখজনক হলেও সত্যি এ জেলার শিক্ষার হার মাত্র ৩৫%। শিক্ষার হার এতটা নাজুক হওয়ার পেছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে, জীবন ও জীবিকার তাগিদে ৮০-৯০% মানুষের পেশা কৃষি। প্রতিটি পরিবারেই প্রায় কৃষির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্ষাকালে, মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করতে হয় বেশিরভাগ পরিবারের। জীবন ও জীবিকা সংগ্রহের যুদ্ধে পরিবারের শিশু থেকে বয়স্ক সবাইকে লড়তে হয় প্রতিনিয়ত। ফলে, শিক্ষায় মনোনিবেশ হয়ে ওঠেনা অনেকের। আবার অনেকেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার পর অভাবের তাড়নায় বই হাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে কাস্তে হাতে ছোটে মাঠে। ফলে, অনেকেই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন এখানেই জলাঞ্জলি দিতে হয়। সুনামগঞ্জের হাওড়াঞ্চলে শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও অনেকটা পিছিয়ে। শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে পিছিয়ে পড়া হাওড়াঞ্চলকে দেশের আদর্শ জেলা হিসেবে গড়ে তুলে শেখ মুজিবের সোনার বাংলা বিনির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ গড়ে তোলা হয় চঁনষরপ টহরাবৎংরঃু ঝঃঁফবহঃং অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ ঝঁহধসমধহল. বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সুনামগঞ্জ জেলাধীন ১২টি উপজেলার শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, সুনামগঞ্জ নামের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনটি। সংগঠনটি ইংরেজিতে চঁনষরপ টহরাবৎংরঃু ঝঃঁফবহঃং অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ ঝঁহধসমধহল (চটঝঅঝ) নামেই বেশ সুপরিচিত। হাওড়াঞ্চলে শিক্ষা, সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশফাক জাহান তানজিমকে সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী বিধায়ক রায়কে সাধারণ সম্পাদক করে প্রতিষ্ঠিত হয় 'পুসাস'। বর্তমানে ৬৫৮ রেজিস্ট্রাড সদস্যদের সংগঠনটি 'শিক্ষা ও সংস্কৃতি হোক ভাটি বাংলার হাতিয়ার' এ স্স্নোগানকে ধারণ করে সুনামগঞ্জের সুনাম বয়ে আনতে অনবদ্য কাজ করে যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজে সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে উৎসাহ ও উদ্দীপনার বীজ বপন করা চলছে। সেই সঙ্গে প্রতিবছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবীদের কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করে তাদের মধ্যে দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন দেখানো ও যথাযথ বাস্তবায়নের সঠিক পন্থা অবলম্বন শিখিয়ে দেওয়া হয়। এবং জেলা থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে চান্সপ্রাপ্তদের প্রতিবছর দেওয়া হয় কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা। এছাড়া সুনামগঞ্জের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে প্রতি বছর জেলা শহরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে সংগঠনটি। এবারের সিলেট, সুনামগঞ্জ বন্যা পরিস্থিতিতে বন্যা দুর্গতদের নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছে সামাজিক এই সংগঠনটি। সংগঠনের সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ইউনিয়নভিত্তিক আর্থিক, শারীরিক শ্রম দেওয়ার অনবদ্য ভূমিকা ছিল সত্যিই নজিরবিহীন। দেশের কোভিড-১৯ এর ক্রান্তিকালীন সময়েও সংগঠনটির ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। সামাজিক সচেতনার পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে সংগঠনের সদস্যরা। তবে, বর্তমান সময়কালে সুনামগঞ্জের শিক্ষায় সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। হাওড়াঞ্চল থেকেই এখন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে পড়ছেন অনেকেই। কেউ কেউ, উচ্চতর ডিগ্রির আশায় পাড়ি জমাচ্ছেন বহির্বিশ্বে। 'পুসাস' মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে সুনামগঞ্জ জেলা খুব শিগগিরই শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে বাংলাদেশে অনন্য অবদান রাখবে। বাংলাদেশের বুকে আদর্শ জেলায় রূপান্তরিত হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, সুনামগঞ্জ (পুসাস) শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখায় এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।