শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্মৃতিময় এক কালক্ষণে একঝাঁক ইবিয়ান

ম মো. ওসমান গনি
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

লাইব্রেরিতে ঘুরতে ঘুরতে দোতলার এক জায়গায় দেখলাম সাজ্জাদ ওর কয়েকজন ক্লাসমেটকে নিয়ে টু্যর বিষয়ে পরামর্শ করতেছে। কাছে যেতেই সাজ্জাদ ও যোবায়ের ইসহাক বলল আমরা তো এই কয়জন যাচ্ছি তুইও দেখ তোদের ডিপার্টমেন্টের কিছু পোলাপান নিতে পারিস কিনা। লোকজন বেশি হলে আয়োজনটা সুন্দর হবে এবং বেশ উৎফু্‌লস্নকরও হবে। গুচ্ছের পরীক্ষার জন্য ভার্সিটি কিছুদিন বন্ধও থাকবে। দীর্ঘ দিন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, ইনকোর্স, পরীক্ষা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন চাপে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। ভাবলাম রিফ্রেশমেন্টের জন্য এটাই মোক্ষম সুযোগ। যাওয়া যায় ভালোই হবে। অতঃপর রাজি হয়ে গেলাম। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। একদিনের মধ্যে সব লোকজন ঠিক করে ফেলা হলো। আল কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অর্থাৎ আমাদের বিভাগ থেকে ১১ জন। আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ থেকে ১৭ জন ও দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ থেকে ২ জন।

আমাদের ভ্রমণের গন্তব্য ছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ি। বৃহস্পতিবার সকালে গড়াই ও পদ্মা নদী হয়ে যাব। যথারীতি সবাই সময়মতো চলে এলো। আগে থেকেই সব কিছু ঠিক করা ছিল। সময় মতো ট্রলার হরিপুর ব্রিজের নিচে এসে পৌঁছাল। এখান থেকে শুরু হয় আমাদের যাত্রা। বিস্তীর্ণ নদীর বুক চিরে এগিয়ে চলছে ট্রলারটি।

নদী ভ্রমণ যে কতটা মজাদার ও আনন্দদায়ক তা ভাষায় বর্ণনাকর নয়। অন্যরকম একটা প্রশান্তি আসে হৃদয়ে। গড়াই এক ঐতিহ্যবাহী নদী। বলস্নাল সেনের রাজধানী নদীয়া গড়ে ওঠে এই নদীকে কেন্দ্র করে। সবাই খুব এক্সাইটেড ছিল নৌ-ভ্রমণকে ঘিরে। ট্রলারটি চলতে চলতে পৌঁছে গেল পদ্মা ও গড়াইয়ের সম্মিলনের স্থানে অর্থাৎ মোহনায়। নদীর যে কোনো জায়গার থেকে এই জায়গাটি একটু বেশিই ভয়ানক হয়ে থাকে। আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল মোহনায় লাফ দিব। সবাইকে প্রস্তুত হতে বললাম। সবার আগে লাফ দিল সাজ্জাদ। ওর সঙ্গে আমিও লাফ দিলাম। এরপর আবদুলস্নাহ ইহসান, আবদুলস্নাহ আল মামুন ও আরিফসহ অনেকে লাফ দিল।? বাকিরা সাহস করতে পারেনি। স্রোতঃস্বিনী পদ্মা ও গড়াইয়ের মোহনায় সাঁতরানো কোনো স্বাভাবিক বিষয় ছিল না। আল আমিন ও সেলিম স্রোতের প্রভাবে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হাঁপাতে হাঁপাতে অনেক কষ্ট করে তারা পাড়ে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। পাশে চর ছিল। সেখানে ট্রলারটি ভিড়ানো হলো। শুরু হলো ফুটবল খেলা। ২টা টিম করা হলো একটা হচ্ছে ইন করা আরেকটা হচ্ছে ইন ছাড়া। শফিউলের খেলা ও নোমানের শটগুলো দেখার মতো ছিল। আমি ছিলাম গোলকিপার। বিপরীত টিমের যোবায়ের, নূরুল আমিনসহ বাকিরা অনেক চেষ্টা করেও গোল করতে পারেনি। গোলবিহীন খেলা সমাপ্ত হলো। পরবর্তী ইভেন্ট ছিল হাঁড়িভাঙ্গা। ফয়েজুলস্নাহ, আল ফায়েদ, সাজ্জাদ ও যোবায়ের ইসহাক ছাড়া সবাই ব্যর্থ হলো। শৈশবের মতো উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিল সবাই।

খেলাধুলা শেষে কেউ চরে আবার কেউ নৌকাতে যোহরের নামাজ আদায় করে আবার যাত্রা শুরু করলাম। দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। তপ্ত রোদে এগিয়ে চলছে ট্রলারটি। দুই পাড়ে সবুজের সমারোহ। যোবায়ের লালন সাঁইজির জাত গেলোরেসহ বিভিন্ন গান গাইতে থাকে। ঘণ্টাখানেক চলায় পৌঁছে গেলাম ঘাটে। সেখান থেকে চলে গেলাম কুঠিবাড়িতে। জমিদারির দেখাশোনার জন্য মাঝে রবিঠাকুর এখানে আসতেন। এখানে বসেই তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী ইত্যাদি গীতাঞ্জলি কাব্যের অনুবাদ কাজও শুরু করেন। জীবনের একটা উলেস্নখযোগ্য সময় কাটান এখানে। সেইখানে পৌঁছেই সবাই একটা শক খেলো। জন্মাষ্টমীর বন্ধের কারণে কুঠিবাড়ি সেদিন বন্ধ ছিল। নেয়ামত ও নাঈমসহ যারা কখনো কুঠিবাড়ি যায়নি তাদের একটু মন খারাপ হলো। সবাই কুঠিবাড়ির মূল গেটে ফ্রেমবন্দি হয়ে নিল। সেলিম, আমি, আল আমিন ও নোমান গেট টপকিয়ে ভিতরে ঢুকে যাই। কিছুক্ষণ অবস্থানের পর ফিরে গেলাম ট্রলারে।

এবার নীড়ে ফেরার যাত্রা শুরু। রুহুল আমিন, সাজ্জাদ, আরিফ ও সেলিমসহ কয়েকজন গান গাইতে থাকে। এরপর শুরু হলো কুইজের পালা। প্রথম প্রশ্নটি ছিল পরীমণির প্রথম স্বামীর নাম। সেলিম সঠিক উত্তর দিল। পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হলো ডাব শ্যাম্পু। এভাবে কিছুক্ষণ কুইজ চলতে থাকে। দেখতে দেখতে দিন গড়িয়ে গোধূলি লগ্ন চলে এলো। ডুবতে থাকা সূর্যের লাল লালিমা বিস্তীর্ণ নদীর বুকে আছড়ে পড়ায় এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফটো তোলার জন্য আদর্শ সময় এটা। দেখতে দেখতে ফিরে এলাম ঘাটে। এখান থেকে সবাই আলাদা হয়ে ফিরে যায় আপন গন্তব্যে।

সর্বোপরি নদীতে ভ্রমণের যে কি প্রশান্তি তা বলে প্রকাশ করা যাবে না। আলস্নাহর দেওয়া এক অপরূপ নেয়ামত হলো নদী। নদীর সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়েই কত কবি সাজিয়েছে কবিতার মালা। কতশত গল্প, কাহিনী গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। সাজ্জাদের উদ্যোগে আয়োজিত এই ভ্রমণটি স্মৃতির পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে আমরণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে