জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি কন্টিনজেন্ট ভর্তিচ্ছুদের সহায়তায় এগিয়ে...

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

ম মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সুস্থ-সংস্কৃতি, ভাষা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও সৃজনশীলতা বিকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কোনো বিকল্প হতে পারে না। এসব সংগঠন যে কোনো শিক্ষার্থীকে সহনশীল হতে শেখায়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি করে দলগতভাবে কাজের অভ্যাস। পাশাপাশি সৃষ্টি করে একতা ও ভ্রাতৃত্ব। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছভুক্ত দেশের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ সেশনের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বিগত ৩০ জুলাই ও ১৩ এবং ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। বিগত বছরগুলোর মতো ভর্তিচ্ছুদের পদচারণায় মুখর ছিল গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধা সামরিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জবি বিএনসিসি। জ্ঞান, শৃঙ্খলা, স্বেচ্ছাসেবী এ তিন মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে বিএনসিসির ক্যাডেটরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করে। গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনকে সুষ্ঠু ও সফল করার জন্য বিএনসিসির ক্যাডেটরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের রুম নম্বর খুঁজে দেওয়াসহ যাবতীয় তথ্য প্রদানে সহায়তা করছে জবি বিএনসিসি। তীব্র গরমের কারণে শিক্ষার্থীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে তারা। তপ্ত রোদের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বিএনসিসির ক্যাডেটরা ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন জবি বিএনসিসি সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রবেশ করানো আবার বের হতে সাহায্য করা, তাদের পরীক্ষার হল রুম দেখিয়ে দেওয়া, খাবার পানির ব্যবস্থা করা ইত্যাদি সেবামূলক কাজ করেছে জবি বিএনসিসি। এছাড়া দেরি করা শিক্ষার্থীদের জবি বিএনসিসির ক্যাডেটরা সার্বিক সহযোগিতায় পরীক্ষার হলে নিয়ে যায়। এছাড়া ভর্তিচ্ছুদের শৃঙ্খলবদ্ধ ও স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক ভর্তি পরীক্ষা হলে প্রবেশ করানো, আহত ও অসুস্থ ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষার কক্ষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া, ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকদের সহযোগিতার জন্য তথ্যসেবা কেন্দ্র পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু ও সফল গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সহায়তা করে জবি বিএনসিসি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি কন্টিনজেন্টের সিইউও রেজওয়ানা জাহান রিয়া তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক ভিজিল্যান্স ও শৃঙ্খলা উপ-কমিটির নির্দেশক্রমে প্রতিবছরের মতো এবারও আগত পরীক্ষার্থীদের সাহায্য-সহযোগিতায় নিরলসভাবে কাজ করে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি পস্নাটুনের ক্যাডেটরা। ভর্তি পরীক্ষার দিন আগত পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার আসন বিন্যাস সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, সামাজিক দূরত্ব, হ্যান্ড স্যানিটাইজ এবং মাস্ক প্রদান করে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করানো। এসময়ে তিনি আরও বলেন, 'পরীক্ষার্থীরা যেন কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা, পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো পরীক্ষার্থী অসুস্থ বা দুর্ঘটনার শিকার হলে জরুরি চিকিৎসার জন্য মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে ক্যাডেটদের মধ্যে সততা, দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং নেতৃত্ববোধের গুণাবলি বিকাশ লাভ করে। জবি বিএনসিসির নারী ক্যাডেটদের কার্যক্রম নিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন হিসেবে বিএনসিসি পস্নাটুন নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করেছে। পুরুষ পস্নাটুনের পাশাপাশি মহিলা পস্নাটুনের প্রায় বিশজন ক্যাডেট সার্বিক শৃঙ্খলা, তথ্য-সেবা, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চতকরণ প্রভৃতি কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সিইউও আরও বলেন 'ভর্তি পরীক্ষায় সচরাচর একটা উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। তাই দায়িত্ববোধের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বড় আয়োজনে অংশ হতে পেরে প্রতিটি ক্যাডেটকে উৎসাহের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। আমার মনে হয়, ক্যাডেট হিসেবে সবার মধ্যে বিএনসিসির মূলমন্ত্র ও চেতনাচর্চা করার দৃষ্টিভঙ্গি থাকাটা আবশ্যক। ভর্তি পরীক্ষার মতো আয়োজনে অংশগ্রহণ এ চর্চার একটি বড় ক্ষেত্র।' জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি কন্টিনজেন্টের ক্যাডেট ইনচার্জ রিয়াল মলিস্নক বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসির ক্যাডেটরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করে থাকে। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা সামরিক প্রশিক্ষক গ্রহণ করে এবং সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসির ক্যাডেটরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্ব অর্জন করছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। এ ব্যাপারে কোম্পানি কমান্ডার ও অফিসার ইনচার্জ পিইউও আতিয়ার রহমান বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দেয় বিএনসিসি। পরীক্ষার দিন প্রতিটি ফটকে ক্যাডেটরা থাকে এবং স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কাজ করে। তারা শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৫ সাল থেকে। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি '১ বিএনসিসি ব্যাটালিয়ন রমনা রেজিমেন্ট'-এর অধীনে রয়েছে। এতে ৬টি পস্নাটুন রয়েছে, যার মধ্যে ৩টি ছেলেদের ও ৩টি মেয়েদের। প্রত্যেক পস্নাটুনে ৩৩ জন করে ক্যাডেট আছে। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি কন্টিনজেন্টে সর্বমোট ২২৩ জন ক্যাডেট রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মো. ইমদাদুল হক বলেন, 'আমাদের বিএনসিসি সদস্যরা সুশৃঙ্খল, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ। তারা বরাবরই দেশের পাশে থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনে সহযোগিতা করে আসছে। ভবিষ্যতেও বিএনসিসি ক্যাডেটরা বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের কল্যাণে এগিয়ে যাবে।'