সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

দুটি কুঁড়ি একটি পাতার দেশে স্বাগতম

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের একটু সামনে এলেই চোখে পড়বে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। এই ম্যুরাল অনুপ্রাণিত করে সব শিক্ষাথীের্ক কিভাবে দেশের জন্য কাজ করতে হয় নিজের স্বাথর্ ত্যাগ করে। এখানে এলে শ্রদ্ধা ভরে সবাই স্মরণ করে শেখ মুজিবুর রহমানকে...

প্রকাশ | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

গোলাম মতুর্জা সেলিম
স্বপ্ন পূরণের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই শুরু হয় জীবনকে রঙিন করে সাজাবার নতুন প্রয়াস। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সুযোগ হয় ভিন্ন ভিন্ন কিছু জানার, শেখার ও জানাবার। ছোট ছোট সুউচ্চ টিলায় পরিবেষ্টিত ক্যাম্পাসের চারদিকে সবুজের সমারোহ যেন গ্রামীণ প্রকৃতির অবয়ব। ছোট ছোট টিলা আর ছোট ছোট জলাশয়ের সম্মিলন শিল্পীর তুলিতে অঁাকা ছবির মতো বাস্তবধমীর্ যে ক্যাম্পাস তা হলো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)। নান্দনিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দযের্র এ ক্যাম্পাস সবার মনে এনে দেয় প্রশান্তির পরশ। বাংলাদেশের উত্তর পূবার্ঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থাকে উন্নত করতে ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বিলুপ্ত সিলেট সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের একটি অনুষদে রূপান্তর যাত্রা শুরু হয়। নতুন যাত্রায় এটির নামকরণ করা হয় ‘সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে। শুরুতে তিনটি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন চালু রয়েছে ছয়টি অনুষদ। সিকৃবি দেশের অন্যতম কৃষি বিদ্যাপিঠ। শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পূবের্ শহর তলির টিলাগড় আলুরতল এলাকায় ৫০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৬টি অনুষদ। অনুষদসমূহ ভেটেরিনারি অ্যানিমাল এন্ড বায়োমেডিকেল সায়েন্স অনুষদ, কৃষি অনুষদ, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, কৃষি অথর্নীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ, জেনেটিক্সে ও বায়োটেকনোলজি অনুষদ। এই ছয় অনুষদে প্রায় ২৫০০ শিক্ষাথীর্ অধ্যয়নরত। যার মধ্যে ৪৭টি বিভাগ রয়েছে। ছোট এই ক্যাম্পাসে রয়েছে ফুচকা চত্বর, কঁাঠাল চত্বর, ট্যাংকির তলা, জালাল মামার চায়ের টং এসব হলো শিক্ষাথীের্দর আড্ডার প্রাণকেন্দ্র। ছাত্র -শিক্ষক কেন্দ্র (টি এস সি) ক্যাফেটেরিয়াতেও চলে গল্প আড্ডা।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, দ্বিতীয় ফটকের সামনে ও ইকোপাকের্র সামনে শিক্ষাথীের্দর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের একটু সামনে এলেই চোখে পড়বে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। এই ম্যুরাল অনুপ্রাণিত করে সব শিক্ষাথীের্ক কিভাবে দেশের জন্য কাজ করতে হয় নিজের স্বাথর্ ত্যাগ করে। এখানে এলে শ্রদ্ধা ভরে সবাই স্মরণ করে শেখ মুজিবুর রহমানকে। বাংলাদেশের দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারের অন্যতম ‘সূযাের্লাকে বণর্মালা’ যা এই ক্যাম্পাসের সৌন্দযের্ক করেছে আলোকিত। ভোরের আলো যখন উঁকি মারে, তখন শহীদ মিনারটি আধো আলোর ছায়ায় ঘেরা। সূযাের্লাক যখন ক্রমেই উজ্জ্বল হয়ে উঠে, শহীদ মিনারটিও তখন আপন আলোয় সৌন্দযের্ আলোকিত হয়ে উঠে।এর গঁায়ে খোদিত বণর্মালাগুলোও তখন যেন ঝিক ঝিক করতে থাকে। নান্দনিক এই শহীদ মিনারের নাম তাই ‘সূযাের্লাকে বণর্মালা।’ এই ক্যাম্পাসের শিক্ষাথীর্রা কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করলেও সংস্কৃতির সৃজনশীলতা ও মননশীলতা চচার্য় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকে পাশাপাশি নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে একাধিক সংগঠন। এর মধ্যে রয়েছে সাংবাদিক সমিতি, প্রাধিকার, বিনোদন সংঘ, চলচিত্র সংসদ, ফটোগ্রাফি সোসাইটি, পাঠশালা একুশ, কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘ, মেট্রোনোম মিউজিক্যাল ক্লাব, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আতির্, আটর্ ক্লাব, বঁাধন, ট্যুরিস্ট ক্লাব, মৃত্তিকা, ডিবেটিং সোসাইটি, লুব্ধক থিয়েটারসহ প্রতিটি অনুষদীয় ছাত্র সমিতি। ‘প্রাণী অধিকার ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা ক্যাম্পাসের একমাত্র সংগঠন হলো প্রাধিকার। বিভিন্ন সময়ে মানুষের মধ্যে প্রাণী অধিকার ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। অসুস্থ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীদের সুস্থ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে কাজ করে এ সংগঠনটি। এখন পযর্ন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি ও মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে ৭টি করে মোট ১৪টি ব্যাচ বের হয়েছে। ভেটেরিনারি এন্ড বয়োমেডিকেল সায়েন্স অনুষদ থেকে ২৯টি ব্যাচ বের হয়েছে। কৃষি অথর্নীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ থেকে ৫টি ব্যাচ, কৃষি প্রকৌশল কারিগর থেকে ৩টি এবং জেনেটিক্সে এন্ড বায়োমেডিকেল অনুষদ থেকে ১টি ব্যাচ বের হয়েছে। এখানকার গ্র্যাজুয়েটরা বিসিএসসহ বিভিন্ন বৃত্তিতে উত্তীণর্ হয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। ষড় ঋতুর স্বাদ নিতে এবং মেঘাচ্ছন্ন আকাশটাকে টিলার ওপর থেকে ধরার জন্য হলেও এ ক্যাম্পাসের সদস্য হওয়া উচিত। চাইলেই তুমি পারো এই নৈস্বগির্ক সৌন্দযের্র সঙ্গী হতে।