প্রত্যাশা প্রাপ্তির গল্পগুলো

উত্তরবঙ্গের প্রথম ও দেশের দ্বিতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টি ২৪ বছরে পা দিতে যাচ্ছে। প্রথমে ১৯৭৬ সালে 'এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নামে প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এরপর কৃষি কলেজে উন্নীত হয়ে ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত হয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়রূপে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে প্রাক্তন ও বর্তমান কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য ও অগ্রগতি এবং তাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক

প্রকাশ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

মো. তানভির আহমেদ।
ছাত্র সংসদ, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট এবং অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন চাই কাবিদ আহমেদ মানিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের কৃতীসন্তান, তেভাগা আন্দোলনের নেতা মরহুম হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামে ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় থেকে অনেক ক্ষেত্রেই এই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই ২২টা ব্যাচ এখানে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছে পাশাপাশি বিভিন্ন সাবজেক্টে প্রায় ১৭টা ব্যাচ গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে দেশ-বিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে, তবে প্রতিষ্ঠার ২৪ বছরে এসেও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সুসংগঠিত করার কোনো প্রয়াস দৃশ্যমান নয়। প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে, তাদের সঙ্গে নবীনদের কোনো সম্পর্ক বা সঙ্গযোগ থাকছে না। এর আগে অনেকবার কয়েকজন উপাচার্যের আমলে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি হোক পাশাপাশি ২০০১ সালের ৩৫নং আইন অনুযায়ী রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট অন্তর্ভুক্তি এখনো শুরু করা যায়নি। এমনকি যাকে বলা হয় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অলংকার সেই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ২০১০ সালে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলেও আদৌ আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান উপাচার্য মহোদয় অনেক সুনামের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি তার আমলে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন পূর্ণতা পাবে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিপূর্ণরূপে বিশ্বের বিদ্যালয় হয়ে উঠুক নুসরাত জাহান জেসি। পড়াশোনা করছেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে। তিনি বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে কখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বলি? যখন এটি চিন্তা-চেতনা-মমনে ও বাস্তবে বিশ্বমাপের হয়। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিত সর্বদা বৈশ্বিক। আধুনিক বিশ্বে কী চলছে? কীসের চাহিদা রয়েছে, তা আমাদের বুঝতে হবে। সেই অনুপাতে কাজ করতে হবে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্তজ্ঞানচর্চার উর্বর ভূমি। একজন শিক্ষার্থীর মনোজগৎ, দক্ষতা, সম্ভাবনাগুলোকে প্রস্ফুটিত করার সুযোগ, একটি মনোরম ও উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি কর্তৃপক্ষকেই করতে হবে। সেই সুবাদে আমাদের বিভাগ বেশ তৎপর। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে এসে একটা কথাই শুধু বলতে চাই, প্রিয় হাবিপ্রবি অবস্থানগত ও নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অনেক এগিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ স্বপ্নভূমি বিশ্ববিদ্যালয় দিন দিন হয়ে উঠুক পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়রূপে, এটাই প্রত্যাশা সবার। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী মদিনা আক্তার মিম। তিনি বলেন, আয়তনে খুব একটা বড় না হলেও শিক্ষার্থীদের স্বপ্নগুলো ঠিকই আকাশছোঁয়া। খেলার মাঠ থেকে গবেষণার ল্যাব, দেশ ছাপিয়ে বিশ্বের মাটিতে প্রতিনিয়ত সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন এ ক্যাম্পাসের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে গবেষণার দিক দিয়ে অনেক এগিয়েছে হাবিপ্রবি, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রম্নপ ও জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো তারই সাক্ষ্য দেয়। প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হচ্ছেন এবং সুনাম বয়ে আনছেন। হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা। তবে প্রতিবছর যে হারে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, সেই অনুপাতে আধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত গবেষণাগার, গ্রন্থাগার, ক্লাসরুম ও আবাসন সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে না। এটি পরবর্তী সময়ে মানসম্মত গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। সব সংকট কাটিয়ে শীক্ষার্থীবান্ধব প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে চলুক, এটাই প্রত্যাশা। সাংস্কৃতিকচর্চা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হওয়া দরকার সোয়াদুজ্জামান সোয়াদ, এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় শিল্প সাহিত্যচর্চার তীর্থ ভূমি হলেও আমার মতে সাংস্কৃতিকচর্চায় হাবিপ্রবি একটু পিছিয়ে। প্রথমত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় নাট্যকলা, সংগীত, বাংলা বিভাগ ও লোকসাহিত্য সম্পৃক্ত তেমন কোনো বিষয় (ইংরেজি ও সমাজ বিজ্ঞান ছাড়া) না থাকায় এর পেছনে অন্যতম কারণ। দ্বিতীয়ত, সাংস্কৃতিকচর্চার উপকরণ (মুক্তমঞ্চ, নির্ধারিত ভবন/পর্যাপ্ত কক্ষ) নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাংস্কৃতিকচর্চা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হওয়া দরকার। করোনার পর ক্যাম্পাসের সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও কেমন জানি ঠিক ডানা মেলতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের মাদক, সন্ত্রাস ও হতাশা থেকে দূরে রাখতে সুস্থ সামাজিক বিনোদনের ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে ৮৫ একরের ভালোবাসার প্রিয় ক্যাম্পাস সুপরিকল্পিতভাবে আরও নান্দনিক ও পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাসে পরিণত হবে, এটাই প্রত্যাশা।