শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমি আইন নিয়ে পড়াশোনার শুরুটা যেমন ছিল

বাংলাদেশে প্রায় ৭৯ শতাংশ মোকদ্দমা ভূমি সম্পর্কিত। এসব জটিলতা নিরসনে দক্ষ তৈরির লক্ষ্যে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে রাবি এবং পবিপ্রবিতে যাত্রা শুরু করে 'আইন ও ভূমি প্রশাসন' বিভাগ। পরে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে জবিতে 'ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন' নামে এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইবিতে 'ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট' নামে যাত্রা শুরু করে বিভাগটি। চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পথচলা কেমন ছিল? জানাচ্ছেন একই বিভাগের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক
আজাহারুল ইসলাম
  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

'হামাগুড়ি দিয়ে শুরু, নিজের পায়ে হাঁটতে শিখেছি'

সাঈদা আফরিন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ভর্তির পর নানা চড়াই-উতরাই পার করেছি। বিভাগের শিক্ষকদের সবসময়ই সঙ্গে পেয়েছি। অন্য বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কটুকথাও শুনতে হয়েছে। শুরুর দিকে ক্লাসরুম ছিল না। মুটকোর্ট রুমে ক্লাস করতাম। এক বছর পর নিজস্ব ক্লাসরুম পেয়েছিলাম। ওরিয়েন্টেশনের দিন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রফেসর ডক্টর বিশ্বজিৎ চন্দ স্যার এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেন। বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আজ এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে বিভাগটি। বর্তমান সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শাহরিয়ার পারভেজ স্যার এবং সহকারী অধ্যাপক রাইসুল ইসলাম স্যারের অবদান অনস্বীকার্য। হামাগুড়ি দিয়ে শুরু করেছিলাম, বিভাগের শিক্ষকদের হাত ধরে, সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিজের পায়ে হাঁটতে শিখেছি।

'পড়াশোনা ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম'

তরিকুল ইসলাম জয়

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

অনুষদের নাম ছিল 'ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসন'। প্রথমে ডিগ্রি বিএসসি থাকলেও পরে এলএলবিতে রূপ নেয়। বাংলাদেশে ভূমি সম্পর্কিত জটিলতা অনেক বেশি এবং দেশে সম্পূর্ণ একটি নতুন বিভাগ খোলার পেছনে হয়তো সরকারের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। তা ভেবেই পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি মামার অনুপ্রেরণা, মামার সুবাদে ক্যাম্পাসের সিনিয়রদের পরামর্শে এবং পরিবার থেকেও পজিটিভ রেসপন্স পেয়ে ভর্তি হয়ে যাই। ভর্তি হওয়ার পর প্রথম ব্যাচ হিসেবে শঙ্কা ছিল। পড়াশোনার ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বেশি দ্বিধায় ছিলাম। অনেকেই বলত স্পেসিফিক জব সেক্টর নেই, ভবিষ্যৎ অন্ধকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছি, যেটা আমাদের প্রধান শক্তি ছিল। তৎকালীন ডিন ও শিক্ষকরা সাপোর্ট দিয়েছেন। পরে অনুষদের নিজস্ব শিক্ষক নিয়োগ হওয়ায় মনের জোর বেড়ে যায়। ক্যাম্পাস আবাসিক হওয়াও অন্য অনুষদের সিনিয়রদের থেকে অনেক সুবিধা পেয়েছি।

'যাত্রা শুরুর পথ মসৃণ ছিল না'

আরিফুল ইসলাম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন এই বিভাগটির যাত্রাপথের শুরুটা মসৃণ ছিল না। অস্থায়ী অফিস, ছিল না নিজস্ব ক্লাসরুম, সেমিনার বা লাইব্রেরি। বিভাগের চেয়ারম্যান খ্রিস্টিন রিচার্ডসন ও শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কিছুদিনের মধ্যেই সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে স্বয়ংসম্পূর্ণ বিভাগে পরিণত হয়। ভূমি সমস্যা সমাধানে বাস্তবিক ভূমিকা রাখার প্রত্যয়ে গড়ে ওঠে 'ল্যান্ড ল ক্লাব'। ভবিষ্যতে ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমি আইনের সংস্কার ও সুষ্ঠু প্রয়োগের ক্ষেত্রে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর। প্রথমদিকে নতুন এই বিভাগের ভবিষ্যৎ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণায় তা কাটিয়ে তারা বিচারক, শিক্ষক, আইনজীবীসহ অন্য যে কোনো পেশায় নিয়োজিত হয়ে দেশ সেবার স্বপ্ন দেখে।

'নিজের অজান্তেই অনেক বেশি কিছু পেয়েছি'

মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

সম্পূর্ণ নতুন বিভাগে ভর্তির পর নানা দুশ্চিন্তা জেঁকে বসেছিল। প্রথম ক্লাসে বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আইন বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ডক্টর সেলিম তোহা স্যার এই বিভাগ খোলার উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা দিলে দুশ্চিন্তা দূর হয়। স্যারের থেকে জানতে পারি, এই বিভাগ আইন বিভাগের সব সুবিধার পাশাপাশি ভূমি বিষয়ে অগ্রাধিকার পাবে। স্যারের কথা শুনে সবার চোখেমুখে নিজের অজান্তেই অনেক বেশি পাওয়ার আনন্দ খেলে যাচ্ছিল। নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ না থাকায় একেক সময় একেক কক্ষে ক্লাস করতে হচ্ছে। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদেরও নানা কষ্টদায়ক মুহূর্ত পার করতে দেখেছি। তবে শিক্ষকরা আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সব বাঁধা পেরোতে শক্তি জুগিয়ে যাচ্ছে। শুধু ভূমিসংক্রান্ত মামলা জট নিরসন নয়, দেশের ভূমির সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে ভবিষ্যতে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে