স্মৃতির পাতায়

প্রকাশ | ০২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মো. শাহীন সরদার
যতদূর মনে পড়ে ১৪ ফেব্রæয়ারি ২০১৫ সাল। এশিয়া উপমহাদেশের কৃষি শিক্ষার সূতিকাগার প্রকৃতিকন্যা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সবুজ চত্বরে এসেছিলাম আমরা। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেই শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পদচারণা। ১৫ ফেব্রæয়ারি ক্লাস শুরু। দেখতে দেখতে আজ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯œাতক প্রবীণ ব্যাচে পরিণত হয়েছি। এখনো মনে হয় সেদিনই তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলাম, সময় খুবই দ্রæত ফুরিয়ে যায়। চার বছরের ¯œাতক কোসের্র ৮ সেমিস্টারের শেষ সেমিস্টারে আমরা ফিশারিজ ৪৬তম ব্যাচ। শেষ সময়ে হয় সপ্তাহব্যাপী ট্যুরের আয়োজন। প্রতিটি শিক্ষাথীর্ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এই প্রতীক্ষিত মুহ‚তের্ও, বিদায় বেলায় কিছু সুখ স্মৃতি কুড়োতে। ১০৮ জনের ক্লাসমেটদের একসঙ্গে স্মৃতি আওড়ানোর এটাই শেষ সুযোগ। দেখতে দেখতে ট্যুরের সেই প্রতীক্ষিত মুহ‚তির্টও সামনে চলে আসে। ট্যুর নিয়ে সেমিস্টার শুরু থেকেই চলে জল্পনা-কল্পনা পরিকল্পনা। ট্যুরটির আরেকটি গোপন আগ্রহ আছে ক্লাসের কাপলদের জন্য বিনা পয়সায় এনে দেয় হানিমুনের স্বাদ! ওদিকে না যাই তারা তাদের মতোই সুন্দর মুহ‚তর্গুলো কাজে লাগাক। গ্রæপে চলে বিভিন্ন পরিকল্পনা। ব্যাচের একটা নাম ঠিক করা হয় ‘ইনভিকটাস ৪৬’ অথর্ অপরাজেয় ৪৬। বানানো হয় একই রঙের টিশাটর্ পেছনে অংকে ৪৬ লিখে তার ভিতর ১০৮ জনের নাম। ১৬ নভেম্বর ২০১৮ সেই ট্যুর যাত্রার কাক্সিক্ষত মুহ‚তর্। সবাই সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় হ্যালিপ্যাডে জড়ো হই। তারপর সারারাত জানির্ করে পৌঁছায় চট্টগ্রাম। এরপর এখান থেকে আমাদের সপ্তাহব্যাপী ভ্রমণ চট্টগ্রাম (সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ও ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাব, মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা, আর-ভি মীন সন্ধানী জাহাজ পরিদশর্ন করি), কক্সবাজার (সি-বিচ, ফিস ল্যান্ডিং সেন্টার, শুঁটকি পল্লী, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট দেখি), সেন্ট মাটির্ন (সেন্ট মাটির্ন রাত্রীযাপন, ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণ সঙ্গে পলিথিন ও পরিবেশ দূষণীয় পদাথর্ আহরণ), বান্দরবান (স্বণর্ মন্দির, নীলাচল পরিদশর্ন), রাঙামাটি (কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত ব্রিজ, সুবলং ঝণার্ পরিদশর্ন) করি। আমাদের তিনটি বাসে ট্যুরের গাইড শিক্ষক হিসেবে আমাদের সঙ্গী হন আধ্যাপক ড. মো. কামাল, অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম, অধ্যাপক ড. মো. জসিম উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মো. শাহেদ রেজা, প্রভাষক কামরুন নাহার আজাদ। একটা কথা না বললে অপূণর্তা থেকে যায়। তা হলো ট্যুর নিয়ে প্রতিবছরই শিক্ষাথীের্দর থাকে অসন্তোষ। যে পরিমাণ বাজেট ও শিক্ষাথীের্দর আকাক্সক্ষার সঙ্গে সমন্বয় ঘটে না। মনে মনে আমরাও প্রস্তুত ছিলাম কথা বলার কিন্তু যখনই গ্রæপে গাউড শিক্ষকদের নাম ঘোষণা করা হলো। নাম দেখে কারও মুখে কোনো কথা বা অনিশ্চয়তার ছাপ ছিল না। আমাদের কোনো দাবি-দাওয়া বা কথা বলার কিছু ছিল না এবং আটদিনের ট্যুর সফলভাবে করে এসে সেই বিশ্বস্ততা ও ভালোবাসার জায়গাটি ধরে রেখেছিলেন শ্রদ্ধেয় ট্যুরের গাইড শিক্ষকরা। প্রতিটি শিক্ষাথীর্ ছিল ট্যুর নিয়ে পরিপূণর্ সন্তুষ্ট যা ট্যুর পরবতীর্ পুনমির্লনী ও গ্রান্ড ডিনারের অনুভ‚তি ব্যক্ত করার সময় ফুটে উঠেছিল। ট্যুরটিতে ছিল বৈচিত্র্যতায় ভরা। আমরা ট্যুর থেকে একাডেমিক প্রাকটিকাল জ্ঞান আহরণ, আনন্দ-সৌন্দযর্ উপভোগ যেমন করেছি তেমনই ট্যুরে গিয়েও আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতাকে ভুলে যায়নি। সেন্ট মাটিের্ন রাতে বার-বি-কিউ পাটির্ শেষে আমাদের ট্যুর গাইড ও ইলিশের জীবন রহস্য উন্মোচনকারী প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. সামছুল আলম স্যার ঘোষণা দিলেন আমরা সকালে সবাই ছেঁড়াদ্বীপ যাবো এবং ভ্রমণের পাশাপাশি ওই দ¦ীপের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন, ও পলিথিনজাতীয় ক্ষতিকর পদাথর্ আহরণ করে আমরা নিয়ে আসব। ঘোষণানুযায়ী আমরা কয়েকটা বড় বস্তা সঙ্গে নিয়ে লঞ্চে রওনা হলাম। ছেঁড়াদ্বীপ গিয়ে গাইড শিক্ষকদের নেতৃত্বে দলে দলে আমরা বিভক্ত হয়ে দ্বীপের ক্ষতিকর পদাথর্গুলো বস্তায় পুরলাম। ঘোরা শেষে বস্তাগুলো লঞ্চে করে নিয়ে এলাম। সেন্ট মাটির্ন থেকে ফেরার সময় সৌভাগ্য হলো টেকনাফে ট্যুরের দলনেতা সবার শ্রদ্ধেয় ও ভালোবাসার শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. কামাল স্যারের বাসায় যাত্রাবিরতির। স্যারের আতিথেয়তা ও বাসার সৌন্দযর্ দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ হয়েছিলাম। এটা ছিল ট্যুরের অতিরিক্ত পাওয়া। ঘুম আর খাওয়া ছিল অপশনাল আমরা প্রতিটা মুহ‚তের্ক কাজে লাগিয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দযর্ দশের্ন। সাগরের বিশালতা ও পাহাড়ের দৃঢ়তাকে সঙ্গে নিয়ে ও অনেক ভালো লাগার স্মৃতি নিয়ে আবার ফিরে আসি ক্যাম্পাসে। কয়েকদিন পরেই আবার আয়োজন করা হয় ট্যুর পরবতীর্ পুনমির্লনীর। সেখানে আমাদের পরিবেশনায় হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, স্মৃতিচারণ ও বুফে গ্রান্ড ডিনারের আয়োজন করেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা। এসময় অনুষদের অভিভাবক ডিন স্যারসহ চার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে আনন্দের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় সমৃদ্ধ করে অনুষ্ঠানকে। এভাবেই দেখতে দেখতে ¯œাতক জীবনের শেষবেলার কাক্সিক্ষত ট্যুরটিও শেষ হয়ে যায়। রেখে যায় কিছু স্মৃতি। কিছুদিন পর সবাই ছিন্ন ছাড়া হয়ে পড়বে নিজস্ব কমর্ব্যস্ততায়। কখনো কখনো দেখা হলে পরিচয় হবে আমরা ছয়চল্লিশ বলে। দেখা হলে বলিস আমরা ছয়চল্লিশ।