মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আসিফ হাসান রাজু
আমরাই সেই জাতি, যারা কিনা নিজেদের স্বাধীনতা অজর্ন করেছি দীঘর্ নয় মাসের যুদ্ধের মাধ্যমে। লাখো শহীদের রক্তে অজির্ত এ স্বাধীনতায় রয়েছে দেশের সবর্ স্তরের মানুষের অসামান্য অবদান। স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে নিজের জীবন দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। হাজার মায়ের ইজ্জতের বিনিময়ে রাক্ষুসে হায়ানাদের থেকে মুক্ত করে এক লাল-সবুজের পতাকা আর ছাপ্পান্ন হাজার বগর্মাইলের মানচিত্র রেখে গেছে আমাদের জন্য। যাদের অবদান কখনো ভুলার নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব দেশের আপমর জনতা, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক ঝঁাপিয়ে পড়েছিল পাক হানাদারের বিরুদ্ধে। গ্রামগঞ্জ, নগর, বন্দরে মানুষ যেন অগ্নিশলাকার মতো জ্বলে উঠেছিল। সেই ডাকে জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে সংগ্রামী ঐতিহ্যের হাত ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র, কমর্কতার্-কমর্চারী চ‚ড়ান্ত এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে রেখে গেছে অসামান্য দৃষ্টান্ত। শুধুমাত্র মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নয়, জাতীয় জীবনের সংকটময় সব সময়ে সবর্দা বলিষ্ট ভ‚মিকা পালন করে চলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পাশাপাশি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির অসামান্য অবদান। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-র সাধারণ নিবার্চন, ’৭১-র মুক্তিযুদ্ধ ও ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাথীর্ ও কমর্কতার্-কমর্চারীর অগ্রণী ভ‚মিকা। এই ক্যাম্পাসে শায়িত আছেন লাখ ছাত্রদের পথ চলার অনুপ্রেরণা, ছাত্রদের অধিকার আদায়ে নিজ জীবনকে উৎসগর্ করা শহীদ ড. শামসুজ্জোহা। যিনি ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি তৎকালীন প্রক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। যার আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধিকার আন্দোলনে যুক্ত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের নিযার্তনে প্রাণ হারিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ হবিবুর রহমান, শহীদ মীর আবদুল কাইয়ুম ও শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার। শহীদ হয়েছেন প্রশাসনিক ভবনের নৈশ প্রহরী আবদুর রাজ্জাক, স্টেনো টাইপিস্ট (প্রশাসন) শেখ এমাজউদ্দিন, উচ্চমান সহকারী (হিসাব বিভাগ) এস এম সাইফুল ইসলাম, কমর্ সহযোগী (প্রকৌশল দপ্তর) মো. কলিম উদ্দিন, সুইপার (স্টুয়াডর্ শাখা) মোহনলাল, পরিবহন শাখার ড্রাইভার আবুল আলী, কাঠমিস্ত্রি (প্রকৌশল দপ্তর) শফিকুর রহমান, প্রহরী (স্টুয়াডর্ শাখা) নূরু মিঞা, উপাচাযর্ অফিসের জরুরি পিয়ন মোহাম্মদ ইউসুফ, পিয়ন (পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর) মো. ওয়াজেদ আলী, প্রহরী (উপাচাযর্ দপ্তর) মো. আফজল মৃধা, অডাির্ল পিয়ন (প্রক্টর দপ্তর) ওয়াহাব আলী, বেয়ারা (আইন বিভাগ) আবদুল মালেক। মহান এ স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ দিয়েছেন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার কিউরেটর মনছুর আহমদ খান, প্রহরী হোসেন আলী। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের ভ‚মিকাও ছিল অসামান্য। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বষের্র শিক্ষাথীর্ আবদুল মান্নান আখন্দ, বাংলা শেষ বষের্র ছাত্র আমীরুল হুদা জিন্নাহ, এমএসসি পূবর্ভাগের ছাত্র গোলাম সারওয়ার খান সাধন, রসায়ন বিভাগের স্নাতক সম্মান শ্রেণির ছাত্র প্রদীপ কুমার রাহা, অথর্নীতি বিভাগের প্রথম বষের্র ছাত্র মোহাম্মদ আলী খান, বাণিজ্য বিভাগের স্নাতক সম্মান শ্রেণির ছাত্র শাহজাহান আলী, পদাথির্বদ্যা বিভাগের এমএসসি (পূবর্ভাগ) ছাত্র মিজানুল হক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র, কমর্কতার্-কমর্চারীদের এই মহান আত্মত্যাগ, যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন আর ঐতিহাসিক দলিলপত্র স্মরণীয় আর সংরক্ষণ করে রাখার প্রয়াস হিসেবে ১৯৭৬ সালের ২ জানুয়ারি ‘শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা’ নিমাের্ণর সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তৎকালীন ভিসি প্রফেসর সৈয়দ আলী আহসানের সভাপতিত্বে ২১ ফেব্রæয়ারি উদযাপন কমিটির সভায় গৃহীত হয় এ সিদ্ধান্ত। কাজ দ্রæত শেষ করে সে বছরেরই ২১ ফেব্রæয়ারি সংগ্রহশালাটি দশর্কদের জন্য প্রথম খুলে দেয়া হয়। ৬ মাচের্র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সরকারের তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা আবুল ফজল। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে চির অ¤øান করে রাখতে ক্যাম্পাসে নিমির্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কযর্ ‘সাবাস বাংলাদেশ।’ সিনেট ভবনের দক্ষিণে অবস্থিত এ ভাস্কযির্ট ১৯৯১ সালের ৩ ফেব্রæয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উদ্যোগে শিল্পী নিতুন কুÐুর উপস্থাপনায় নিমার্ণকাজ শুরু হয়। নিমার্ণকাজ শেষ হয়ে এর ফলক উন্মোচন করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।