সন্ধানী ও একটি আন্দোলন

প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মনির হোসেন শিমুল
১৯৭৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বষের্র এক বন্ধুর সকালের নাশতার খরচের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে ছয় তরুণের হাত ধরে সম্পূণর্ নামহীনভাবে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠান ‘সন্ধানী’ সফলতার ৪১ বছর অতিক্রম করেছে। প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ডা. মোশাররফ হোসেন মুক্ত পরবতীর্ পথচলা সম্পকের্ বলেন, ‘হঠাৎ একদিন মেডিকেল কলেজের এক বন্ধু আমাদের কাছে ছুটে এসে বলল তার বাবার অপারেশন করতে হবে, জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন। তখন হাসপাতালের আশপাশে অনেক পেশাদার রক্তদাতা পাওয়া যেত। আমরা দেখতাম তারা হাসপাতালের আশপাশে বসেই মাদক গ্রহণ করেন। সুস্থ, স্বাভাবিক রক্তদাতার খেঁাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, আমাদের কেউ রক্ত দেবে। সেদিন রক্তদানের পর আমরা উপলব্ধি করলাম যে, নিয়মিত রক্ত দিলে আরও অনেক রোগীর জীবন বঁাচানো যাবে। পরিকল্পনা করলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজেই স্বেচ্ছায় রক্তদান কমর্সূচি আয়োজন করার। হাসপাতালের বøাড ব্যাংকের তৎকালীন ডিউটি ডাক্তার অধ্যাপক ডা. আবদুল কাদের উদ্যোগটিতে খুব সহযোগিতা করলেন। ১৯৭৮ সালের ২ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বøাড ব্যাংকে আয়োজিত হলো দেশের প্রথম স্বেচ্ছায় রক্তদান কমর্সূচি। সন্ধানীর প্রতিষ্ঠাকালীন অথর্ সম্পাদক ইদ্রিস আলী মঞ্জু সবার আগে রক্তদান করে রক্তদানের ভয় কাটিয়ে দিলেন। শিক্ষকদের রক্তদানে উৎসাহী করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের তৎকালীন প্রধান অধ্যাপক ডা. ইউসুফ আলী রক্তদান করলেন। রক্তদাতাদের ভয় কাটানোর জন্য তিনিও তাদের নানাভাবে সাহস জোগালেন। মেয়েদের রক্তদান কাযর্ক্রমে যুক্ত করতে তৃতীয় বষের্র হোসনে আরা লাকী রক্ত দিলেন। সবার সহযোগিতায় প্রথম দিনের সংগ্রহ ছিল ২৭ ব্যাগ সুস্থ রক্ত।’ মরণোত্তর চক্ষুদান কমর্সূচি সম্পকের্ ‘সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি’র সমিতির মহাসচিব ডা. মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘১৯৮৪ সাল থেকে এ পযর্ন্ত আমরা চার হাজার ২৮টি কনির্য়া সংগ্রহ করে তিন হাজার ৪১৭ জন মানুষের চোখে আলো ফিরিয়ে দিয়েছি। আমাদের কাযর্ক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সন্ধানীর উপদেষ্টা ডা. দীপুমনি, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, অভিনেত্রী সারা যাকের, সুবণার্ মুস্তাফা, গায়িকা মেহরীন, কৃষ্ণকলিসহ ৩৬ হাজার ৩৫৫ মহৎ ব্যক্তি মৃত্যুর পর চক্ষুদান করতে সম্মত হয়ে লিখিত অঙ্গীকার করেছেন। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার নীলক্ষেত বাবুপুরা রোডে সন্ধানী ভবন উদ্বোধন করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার মৃত্যুর পর তার কনির্য়া কোনো অন্ধ ব্যক্তির চোখে প্রতিস্থাপনের জন্য সন্ধানীকে দান করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছেন।’ সন্ধানী শুধুমাত্র স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি। জলোচ্ছ¡াস, ঘূণির্ঝড়, বন্যা বা ভয়াবহ রোগের প্রাদুভার্ব, যেকোনো দুযোের্গ বছরের পর বছর দেশবাসীকে বিনামূল্যে, নিজ খরচে ‘সন্ধানী’ স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে চলেছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের সন্ধানী ইউনিটের সভাপতি মোহাম্মদ ওমর ফয়সাল সন্ধানীর দুগের্তর সেবা কাযর্ক্রমের উদাহরণ দিতে গিয়ে বললেন, ১৯৯১ সালের ঘূণির্ঝড়ের পরপরই সন্ধানীর কয়েকটি দল কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় গিয়ে হাজারো কষ্ট সহ্য করে এক মাস টানা চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। অন্য একটি দল সেবার প্রয়োজনে নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে স›দ্বীপে গিয়ে ঘূণির্ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে তিন সপ্তাহ চিকিৎসা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার জন্য স›দ্বীপে জাপানি সাহায্যপুষ্ট ডা. হাসিনা নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩১টি টিউবওয়েল বিতরণ করেছে। চকরিয়ার দলটি সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিজেরাও খেটে ‘মেহের নামা’ গ্রামে ভেঙে পড়া ‘মেহের নামা হাই স্কুল’ তৈরি করে দিয়েছে। ‘হারবাং’ গ্রামে নতুন স্কুলঘর তৈরি করে দিয়েছে।