শিক্ষকদের ভাবনায় জাতীয় শিক্ষক দিবস

যে জাতি শিক্ষার অবকাঠামো ও পরিবেশে যত উন্নত সে জাতি সর্বক্ষেত্রেই তত উন্নতি লাভ করে। আর এই জাতি গঠনে মূল কাজটি করেন শিক্ষকরা। জাতীয় শিক্ষক দিবসে দাঁড়িয়ে বর্তমান বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষকদের সমসাময়িক ভাবনাগুলো কি তা তুলে ধরেছেন হুমায়রা রহমান সেতু।

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

হুমায়রা রহমান সেত
শিক্ষক হলো শিক্ষার মূল কারিগর মো. শাহ জালাল মিশুক চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কথাটি এলেই প্রথমে যে কথাটি আসে তা হলো শিক্ষক। শিক্ষক হলো শিক্ষার মূল, উৎস কিংবা প্রাণ। কেননা, শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত উৎকর্ষ নির্ভর করে শিক্ষকের মানবিক দিক, পেশাগত দক্ষতা, নিষ্ঠা ও প্রচেষ্টার ওপর। তাই, শিক্ষকদের মর্যাদা ও সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে দেশকে শিক্ষিত ও উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণে শিক্ষক দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষা খাতে উন্নয়নের জন্য দেশে গত কয়েক বছর ধরে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তবে অনেকাংশেই দেখা যাচ্ছে সময়োপযোগী পলিসি এবং স্ট্র্যাটেজিগুলো অদক্ষ জনবল, দুর্নীতি কিংবা প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেটের কারণে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। বেতন তুলনা ও ক্যারিয়ার সংস্থান বিষয়ক ওয়েবসাইট 'স্যালারি এক্সপেস্নারার'-এর তথ্য মতে, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সব স্তরে (প্রভাষক থেকে অধ্যাপক) ভারতের শিক্ষকদের থেকে অন্তত ৬০ শতাংশ বেতন কম পান। মোদ্দাকথা হলো, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য রোধে নিয়ম পরিবর্তন করে সেটি বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কমিশন গঠনপূর্বক উপযুক্ত সম্মানীর ব্যবস্থা করা, নানা সুবিধাদি বৃদ্ধি ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার। তবেই সুনিশ্চিত হবে আমাদের আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যৎ। শিক্ষা হলো সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার আর শিক্ষক হলেন তার কারিগর- ড. আইনুল ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হচ্ছে জাতি গঠনের মূল কারিগর। আর ছাত্র হচ্ছে কারিগরের অন্যতম অনুসন্ধান। পৃথিবীতে যত সম্পর্ক আছে এর মধ্যে ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক একটু ভিন্ন। এর মধ্যে নিহিত থাকে ভালোবাসা শ্রদ্ধা স্নেহ ও শাসন। একজন ছাত্রের ভালো লেখাপড়ার পেছনে তার অভিভাবকের ও শিক্ষকের গুরুত্ব সমান। শিক্ষকরা তাদের জ্ঞানের আলো প্রদান করে একজন ছাত্রকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন। তবে বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির ডামাডোলে এর সম্পর্কে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। কখনো কখনো শিকড় আর ছাত্রদের প্রতিপক্ষ মনে করে। একইভাবে ছাত্ররাও শিক্ষকদের প্রতিপক্ষ মনে করে। এসব কোনোভাবেই কাম্য নয়। একজন শিক্ষক হবেন তার শিক্ষার্থীর অভিভাবক এবং সবসময় শিক্ষার্থীর সঙ্গে অভিভাবক সুলভ আচরণ করবেন। একজন শিক্ষক হবেন ধৈর্যশীল, বিনয়ী ও ইতিবাচক জীবন বোধের অধিকারী। তাহলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের প্রতিপক্ষ মনে করবে না করবে শ্রদ্ধা সম্মান এবং দেবে ভালোবাসা। শিক্ষক হলেন শক্তি ও মুক্তির পথনির্দেশক কবিসতারা খাতুন গণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা হলো অন্ধকার জগতে উদয় হওয়া আলোর মতো যার আলোয় পুরো ব্রহ্মান্ড দেখা যায়। শিক্ষার আলো না পেলে ব্যক্তি মানুষ যেমন বিকশিত হয় না তেমনি দেশ ও সমাজ উন্নত হতে পারে না। যে জাতি বা দেশ শিক্ষার দিক থেকে উন্নত সে জাতি স্বয়ংসম্পূর্ণ মূলত এই শিক্ষা দিয়ে থাকেন একজন শিক্ষকই। সমাজে বিরাজমান নিরক্ষরতা, গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূরীকরণের মধ্যদিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যোগ্য কর্ণধার হিসেবে গড়ে তোলেন। শিক্ষক সমাজ সম্মানিত করতে ও তাদের ত্যাগের মহিমা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০০৩ সালের ১৯ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেন। আর এ শিক্ষক দিবসের মূল তাৎপর্য হলো সব শিক্ষকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।