চুয়েটে একদিন

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মো. মিজানুর রহমান
দরজায় ঠকঠক শব্দে ঘুম ভাঙল আমার? লাবিব ভাই ডাকছেন। ফজরের নামাজ সেরেই প্রস্তুত হতে হবে। গন্তব্য- চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। জবুথবু ঠান্ডায় সাতসকালে গোসল করা কষ্টকর। তবুও সবাই স্নিগ্ধ সকালের শুভ্রতাকে আলিঙ্গন করতে কষ্টটুকু মেনে নিলাম। গোসল সেরে পরিপাটি হয়ে বাসা থেকে বের হলাম আমরা পাঁচজন- মতিন ভাই, লাবিব ভাই, নোমান, বাচ্চু এবং আমি। হাটহাজারী কলেজ গেট থেকে সিএনজিযোগে রওনা হলাম। ভাড়া ৪৫০ টাকা। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি হাইওয়ে দিয়ে বাতাস কেটে এগিয়ে চলা সিএনজি আর সজীব পরিবেশের রূপ-মাধুর্য মিলেমিশে একাকার। রাউজান পৌঁছে সিএনজি মোড় নিল ডানে। বাজার পেরিয়ে একটু এগোতেই কেউ বলল- সংস্কারকাজ চলছে, সামনে রাস্তা বন্ধ। অগত্যা গ্রামের আধাপাকা মেঠো রাস্তা দিয়ে ধুলো উড়িয়ে চলতে লাগল আমাদের ধুলোযান। আঘাত আর পড়ে যাওয়ার ভয় সামলিয়ে কোনো রকমে এলাম পাকা রাস্তায়। অতঃপর পৌঁছলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ দ্বারে। প্রবেশদ্বার পেরিয়ে সবুজ-মায়াবী পরিবেশে হাঁটছি আমরা। সোজা এ রাস্তাটা গিয়ে থেমেছে শিক্ষকদের কোয়ার্টারে। হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যান্টিন আর গোল চত্বর। তার পাশে টিএসসি। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম আমরা। পাশে শেখ রাসেল হল ও নির্মিতব্য জিমনেশিয়াম। রাসেল হলে আবাসিক ছাত্র মতিন ভাইয়ের বন্ধু সুজন প্রামাণিক ভাই। তিনি এখানে তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগে পড়েন। ভাই এসে আমাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন। নিয়ে গেলেন নিজ রুমে। সেখানে পরিচিত হলাম তার বন্ধুদের সঙ্গে। হলের গোছানো পরিবেশ মুগ্ধ করল আমাদের। কিছুক্ষণ পর ভাই আমাদের নিয়ে বের হলেন তার ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখাতে। শেখ রাসেল হলের বিপরীত দিকে ছাত্রীদের শামসেন নাহার হল। হলের পাশঘেঁষে কাঠের সরু একটি সাঁকো। সাঁকো পেরিয়েই ইইই বিল্ডিং ও বিশ্ববিদ্যালয় অডিটোরিয়াম। অডিটোরিয়াম থেকে একটু সামনে সিভিল ও অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের ফ্যাকাল্টি। তারপাশে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। ঘড়িতে তখন পৌনে একটা; জুমার নামাজের সময় হয়েছে। কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ সেরে ভাই আমাদের দুপুরের ভোজনের জন্য নিয়ে গেলেন ক্যান্টিনে। আমরা খেতে বসলাম। জরুরি প্রয়োজনে বের হলেন সুজন ভাই। সেখানে খাওয়া-দাওয়া সেরে ভাইকে জানানো হলো- আমরা ঘুরতে বের হয়েছি, তিনি যেন চিন্তা না করেন। পুনরায় সুদীর্ঘ রাস্তা ধরে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ আর চুয়েট স্কুল ও কলেজ ঘুরে দেখলাম। পরক্ষণে নোমান বলল ওর বন্ধু মুনিফ পড়ে এখানে। ওকে কল দিল। পরিচিত হলাম সবাই। এবার মুনিফ সঙ্গী হলো আমাদের। সে আমাদের নিয়ে রওনা হলো শেখ কামাল বিজনেস ইনকিউবেটর দেখাতে। পরক্ষণে চলে এলো প্রামাণিক ভাইও। দু'জনই তাদের ক্যাম্পাসের জানা-অজানা নানান বিষয় জানাচ্ছেন আমাদের। আগ্রহী শ্রোতার মতো আমরাও জানতে চাচ্ছি নানান কিছু। ইনকিউবেটরের নান্দনিক আকৃতি দেখে মুগ্ধ হলাম! খুবই চমৎকার এর গঠনশৈলী। সেখান থেকে ফেরার পথে মুনিফকে জিজ্ঞেস করলাম- ভাই আপনাদের শহীদ মিনার কোথায়? সে জানাল- এটা তো মেইন গেটের পাশেই। একটু পরই দেখাচ্ছি। মেইন গেটের পাশে আসতেই শহীদ মিনারের দেখা পেলাম। গঠনাকৃতি ভিন্ন হওয়ায় প্রথমে চোখে পড়েনি। সুজন ভাই আবার আমাদের নিয়ে গেলেন ক্যান্টিনে। সেখানে চা-আড্ডা হলো দীর্ঘক্ষণ। এবার ফেরার পালা। প্রবেশদ্বার এবার প্রস্থান দ্বার হিসেবে আমাদের অপেক্ষায়। শহীদ মিনারের পাদদেশে দাঁড়িয়ে কিছু স্মৃতিচিহ্ন ক্যামেরাবন্দি করা হলো। অতঃপর সুজন ভাই ও মুনিফ ভাইকে আমাদের ক্যাম্পাসে নিমন্ত্রণ জানিয়ে রওনা হলাম আবারও। ততক্ষণে বিকালের সূর্য সন্ধ্যার আকাশে হেলে পড়েছে।