তারুণ্যের ভাবনায় বইমেলা

বইমেলা বাঙালির প্রাণের স্পন্দন। ভাষার মাস ফেব্রম্নয়ারি বইপ্রেমী, বই লেখক ও প্রকাশকের জন্য আনন্দঘন একটি মাস। ভাষার বিকাশে ও বই পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়াতে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একযোগে বইমেলা আয়োজন করা যেতে পারলে বইমেলা আরও জনপ্রিয়তা লাভ করবে। এই প্রাণের বইমেলা নিয়ে কি ভাবছে তরুণরা? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বইপ্রেমী শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী, সিফাত রাব্বানী

প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

সিফাত রাব্বানী
বইমেলা হোক লেখক-পাঠকের মুক্ত মঞ্চ রাহুল ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বই হলো এমন এক মৌমাছি, যা অন্যদের সুন্দর মন থেকে মধু সংগ্রহ করে পাঠকের জন্য নিয়ে আসে। বইমেলা' শব্দটিই বলে দিচ্ছে বইয়ের সম্ভার। মানে-জ্ঞানের সম্ভার। বইমেলায় মেলে বিভিন্ন ধরনের বই। এ জন্যই বইমেলা সুশীল সমাজের সব সদস্যের ও তার স্পর্শে বেড়ে ওঠাদের কাছে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ ও সমাদৃত হয়। বই মেলা কোনো সংগ্রহশালা নয়, বরং বইপলস্নীতে রূপ নেয়। একই গন্ডির মধ্য থেকে সব ধরনের বই সংগ্রহ করা যায়। এ ছাড়া সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে বই ও বইয়ের লেখকের কলমের ধার অনুমান করেও নতুন লেখকের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো যায়। বইমেলা একদিকে যেমন লেখক-পাঠকের মিলনমেলা ও মুক্তমঞ্চ। অন্যদিকে লেখকদেরও মিলনমেলা। বইমেলাকে কেন্দ্র করেই দেশ-বিদেশের লেখকদের একটা মিলনমেলার আবহ সৃষ্টি হয়। বইমেলার মাধ্যমে উদীয়মান লেখকরা নিজ অস্তিত্বের জানান দেয়। নিজের ভেতরের সুপ্ত জ্ঞানকে বিকশিত করতে এবং সবার মধ্যে নিজের সৃষ্টিকে জানিয়ে দিতে একটা বড় মঞ্চ হিসেবে আবিষ্কার করে। সবকিছু মিলিয়ে বইমেলা একটি ইতিবাচক বিষয়। যেখানে জ্ঞানের চর্চা ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। বইমেলা জ্ঞান অর্জনের সেতুবন্ধন সাব্বির হোসাইন খোকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি জাতির আছে নিজস্ব স্বকীয়তা। আর সেই অনন্যতাই একটা জাতিকে অদ্বিতীয় পরিচয় দেয়। বাঙালি জাতির এমনই এক সত্তার নাম একুশে বইমেলা। বই বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পাঠকের আগ্রহ বহু গুণে বৃদ্ধি করে বইমেলা তাতে ভালো পাঠক থেকে ভালো লেখক সৃষ্টি হওয়া সম্ভাবনা তৈরি করে। একজন পাঠক পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে না গিয়ে বই পড়ে সব কিছু জানতে পারে আর সেই বইগুলোতে গচ্ছিত থাকে বিভিন্ন সভ্যতা ও প্রজন্মের ইতিহাস। এক প্রজন্মের ইতিহাস অন্য প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারে বই। বই পড়ার পর নতুন কিছু জানতে পারে এর মধ্যদিয়ে বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে বাঙালি পাঠকের মধ্যে সেতুবন্ধন বা মাধ্যম তৈরি করে বইমেলা। সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দায়িত্ববোধের চর্চার একটি ক্ষেত্র তৈরি করে বইমেলা। বাঙালি সংস্কৃতির নানা উপাদান ও ঐতিহ্যের যোগ তৈরি করা সম্ভব। বইমেলা এমন একটি উৎসবে রূপান্তরিত হয়েছে যা একজন লেখকের আগ্রহ তৈরি করে লিখতে ও লেখা প্রকাশ করতে আর মেধা ও সৃষ্টির আনন্দ উলস্নাস করতে পারছে আর পাঠক নতুন কিছু জানার আগ্রহে মহোৎসবে আসছে। বইমেলা বইপোকাদের আশার বাতিঘর আব্দুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বাঙালিরা জাতি হিসেবে অলস ও আরামপ্রিয় বলে এ দেশের মানুষ জ্ঞান অর্জনের ও সাহিত্যচর্চায় অনেক সময়ই কাটিয়ে দেয় যার প্রধান ও একমাত্র মাধ্যমই হচ্ছে বই পড়া। বই পড়লে যেমন সাহিত্যচর্চা হয়, তেমনি লেখকের ভালো গুণগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করা যায় খারাপ গুণ বর্জন করা সহজতর হয়। বই পড়ার মাধ্যমে বর্তমানে অনেক অজানা বাস্তবতার পেক্ষাপট পরিচিত মনে হয়। যারা বেশি বেশি বই পড়ে তারা সাহিত্যে অনেক বাস্তবিক ও কাল্পনিক সমস্যা ও সমাধান পড়ে থাকে, এ কারণে যে কোনো ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে তাদের জন্য সহজতর হয়। লেখক, সাহিত্যিকদের লিখিত বইগুলো মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্যই 'বইমেলার' আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর বইমেলাগুলোতে লেখকরা উৎসবের মতো করে মেতে ওঠে, আর প্রকাশ করে তাদের নতুন নতুন বই নানা কাল্পনিকতা, বাস্তবতা ও সৃজনশীল ধারণা দিয়ে। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন শহরে-গ্রামে বইমেলার আয়োজন করা হয়। এদের মধ্যে অন্যতম বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত 'অমর একুশে বইমেলা'। জ্ঞানচর্চা ও সাহিত্যচর্চায় নতুনত্ব আনার জন্য বইমেলার গুরুত্ব অনেক কিশোর-কিশোরীদের জ্ঞান অর্জনের জন্য নতুনত্ব এবং তাদের সৃজনশীলতা প্রকাশের জন্য বইমেলা অবশ্যই প্রয়োজন। বইমেলা যেমন প্রবীণদের জ্ঞান তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে তাদের জ্ঞানী হতে সহায়তা করে, তেমনি তারুণ্যের সৃষ্টিশীল চেতনাকে জাগ্রত করে তাদের নতুনত্ব আনার পথ সুগম করে। বইমেলা পূর্ণতা পায় শিশুদের কলতানে নিশাত রিমা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 'একটি ভালো বই ও তার থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান কখনো নিঃশেষ হবে না এবং তা চিরকাল হৃদয়ে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখবে। 'জ্ঞানের প্রদীপ বিকশিত করতে বাংলা একাডেমি আয়োজন করে শিশু বইমেলা যা শিশু প্রহর নামে পরিচিত। সাপ্তাহিক শুক্রবারে সাধারণত শিশুপ্রহরের আয়োজন করা হয়। এ দিনটি শিশুদের কাছে ঈদের দিনের মতো আনন্দের উৎফুলেস্নর। শিশু প্রহরে পূর্ণতা পায় বইমেলা। কেননা এই দিনে শিশুদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকরা আসে বইমেলায়। এতে শিশু-বয়োজ্যেষ্ঠ-সাহিত্যিকদের মিলনমেলায় রূপ নেয় বইমেলা। শিশুদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে মেলার বিভিন্ন স্থানে শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধু কর্নার ও বঙ্গবন্ধুর জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। এতে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেমের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়। শিশুদের মধ্যে একুশের চেতনা ছড়িয়ে দিতে পারলেই সফল হবে অমর একুশে বইমেলা, বাস্তবায়ন হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ। সাহিত্যের জীবনীশক্তি বইমেলা \হ আসিফ আহমেদ নাবিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বইমেলা লেখকের জন্য যেমন নতুন দুয়ার উন্মোচন হয় বই প্রকাশের, তেমনি পাঠক ও নানা ধরনের লেখনীর সমাহার একসঙ্গে পেয়ে থাকে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে লেখকের লেখনীতে যেমন এসেছে পরিবর্তন, তেমনি পাঠক সমাজের মধ্যেও এসেছে নতুন কিছু উদ্ভাবনের বিষয়ে জানার আগ্রহ। একটা সময় আমরা দেখতাম বাংলার গ্রামীণ বিষয় নিয়ে লেখকরা অনেক বেশি লেখালেখি করেছে এবং এই লেখাই পাঠক সমাজের কাছে তাদের সুপ্রিয় করে তুলেছে যেমন- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার লেখনীতে প্রেম-ভালোবাসা, প্রকৃতি-মানুষ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। যা তাকে বিশ্বের বুকে আসন করে দিয়েছে শ্রেষ্ঠ লেখকের। পরবর্তী সময়ে কাজী নজরুল ইসলাম বাংলার ব্রিটিশদের শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে বিদ্রোহী কবির মর্যাদা দিয়েছে এবং এখনো স্মরণীয় হয়ে আছে পাঠকের মনে। বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাই, পাঠকের মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ে জানার আগ্রহ অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আরিফ আজাদ, সমরেশ মজুমদার, আহমেদ সফার মতো নতুন চিন্তার লেখকের কদর বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমরা দেখি যে পাঠকের যুগের পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জানার আগ্রহ পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু তারা বই পড়া বন্ধ করেনি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লেখক এবং পাঠক এগিয়ে যাচ্ছে তাদের ধারায়। সুতরাং বইমেলা লেখক-পাঠকের সেতু বন্ধনের কাজ করে থাকে।