জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

নবীনদের পদচারণায় মুখরিত ক্যাম্পাস

প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার অন্যতম বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। রাজধানীর অন্যতম প্রবেশদ্বার বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে প্রতিষ্ঠার ১৬টি বছর। এরই সঙ্গে যোগ হলো শিক্ষার্থীদের আরও একটি ব্যাচ। নানা আয়োজন আর আনন্দঘন পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে আলাদা আলাদা করে সশরীরে অনুষ্ঠিত হয় এ ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম। রোববার (২২ জানুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে উৎসবমুখর পরিবেশে অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৭তম আবর্তনের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিয়েছে বিভাগের শিক্ষক-অগ্রজরা। এ সময় তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এদিন ক্যাম্পাস মেতেছিল উৎসবের আমেজে। নবীন ছাত্রছাত্রীরা সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে। অনেক নবীনের সঙ্গে আবার তাদের অভিভাবকদেরও দেখা গেছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের প্রবীণরাও এসেছেন সাজগোজ করে নানা আয়োজনে নবীনদের বরণ করে নিতে। প্রবীণ ছাত্রীদের কেউ কেউ শাড়ি পরে ও ছেলেরা এসেছে পাঞ্জাবি অথবা শার্ট-কোট-টাই পরে। প্রত্যেক বিভাগে পৃথক পৃথকভাবে বিভাগীয় প্রধানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ওরিয়েন্টেশন ক্লাস। ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে স্ব স্ব বিভাগের শিক্ষক ও নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষকরা নবীনদের রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল উপহার দেওয়ার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে স্বাগত জানান। এ সময় শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতিমূলক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলার জন্য নবীনদের প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। প্রবীণরাও নবীনদের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে, বিতরণ করছে রজনীগন্ধা ও লাল গোলাপ। বাদ যায়নি মিষ্টি বিতরণ পর্বও। নবীনবরণ অনুষ্ঠান শেষে সবাই যখন স্ব স্ব বিভাগ থেকে বেরিয়ে আসে তখনই আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সবার হাতে হাতে ফুল, সবাই একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। অনেকে ব্যস্ত গ্রম্নপ সেলফি তোলায়। অনেকে আবার বসে পড়েছে আনন্দ আড্ডায়। ক্যাম্পাসে পুরোটা দিন অতিবাহিত হয়েছে এমনই এক আনন্দঘন পরিবেশে। আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে নতুন ক্যাম্পাসে নতুন জীবনের শুরু! সত্যিই এক অন্যরকম অনুভূতি। গান আড্ডা ও বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয়ে সবাই যেন ব্যস্ত। ক্যাম্পাসের এই প্রথমদিনে এসে কথা হয় সমাজকর্ম বিভাগের আল আমিন ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জিন্নাত আরা, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী আহম্মেদ ইমতিয়াজ পার্থ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল রানা, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিস ইয়াকিন, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ঝুমু আক্তারের সঙ্গে। তারা প্রথম দিনের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে সত্যিই অনেক আনন্দিত। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। আবাসিক হলের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য সমস্যা হবে। তবুও এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনে এসে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আশাদুল ইসলাম নাঈম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই ভালো লাগছে। সবার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছি। নতুন পরিবেশ, তবে ভালো লাগছে। আমি বিসিএস ক্যাডার হতে চাই। নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চেষ্টা করব এবং দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত করব। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সুরাইয়া রাত্রী নামের এক ছাত্রী বলেন, জীবনের সেরা সময়গুলো হয়তো পার করছি। দিনগুলো খুব সুন্দর যাচ্ছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাই। বাংলাদেশকে দেখতে চাই অনন্য উচ্চতায়। কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডক্টর কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাগত শিক্ষার্থীদের স্বাগতম। আমাদের সবার দায়িত্ব হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদের সঠিক কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে সেটা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্নে মাত্র ৪৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও আজ প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে দেড়শ' বছরের পুরনো এ বিদ্যাপীঠটিতে। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রার পর হাঁটিহাঁটি পা পা করে ১৮ বছরে পদার্পণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদের অধীনে ৩৬টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা ৬৭৫ জন। ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের প্রাণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।