ভাষার মাস : ভাবনা ও বাস্তবতা

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রম্নয়ারি ঢাকার রাজপথে যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের অমলিন স্মৃতি স্মরণের মাস এই ফেব্রম্নয়ারি। অন্যান্য মাসের সঙ্গে এ মাসের বিশেষত্ব এই যে, ফেব্রম্নয়ারি মাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় ভাষার জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের কথা। মনে করিয়ে দেয় সেই রক্তঝরা স্মৃতির কথা। এ স্মৃতির কথা মনে করে যেন পৃথিবীর সব ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আরও বেড়ে যায় এবং মাতৃভাষার প্রতি আমরা আরও যত্নশীল হই। ভাষার জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের স্মৃতি এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভাষার চর্চা ও বাস্তবে ভাষার ব্যবহার এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোছা. জান্নাতী বেগম।

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মোছা. জান্নাতী বেগম।
ভাষাই মানুষের জীবনের অর্থ এবং মনুষ্যত্ব বহনের প্রধান অলংকার। আজমাল হোসাইন দিদার ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ একুশে ফেব্রম্নয়ারি শুধু বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর জন্য একটি তাৎপর্যময় দিবস না বরং সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য একটি বিশেষ অনুভূতির নাম। মাতৃভাষা মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেননা এই ভাবের আদান-প্রদানের কারণেই মানুষ সামাজিকীকরণের উৎকর্ষতা সাধন করতে পারে। কিন্তু বাঙালিদের ওপর ১৯৫২ সালে নিজ ভাষা প্রকাশে বাধা দেওয়া হয়, রক্তাক্ত হয় রাজপথ। শেষপর্যন্ত ছিনিয়ে নিয়ে আসা হয় নিজেদের অধিকার। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই বোধগম্যতার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। নিজ ভাষার চেয়ে অন্য ভাষা শেখা এবং প্রয়োগ করার প্রবণতা ব্যাপক বাড়ছে। একই সঙ্গে কমছে বাংলা ভাষাভাষী সাহিত্য সমঝদার মানুষের সংখ্যা। বায়ান্নর সেই তাৎপর্য বাঙালি কতটুকু বহন করে তা জানি না তবে ভাষার জন্য কোনো দিবস দরকার হয় না। ভাষাই মানুষের জীবনের অর্থ আর ভাষাই মানুষের মনুষ্যত্ব বহনের প্রধান অলংকার। শুধু ফেব্রম্নয়ারি নয়, প্রতি মাসেই একুশের চেতনা উজ্জীবিত থাকুক সবার মননে মো. রাকিব হাসান ব্যবস্থাপনা বিভাগ ফেব্রম্নয়ারি মাস বাঙালি জাতির অহংকারের মাস, আত্মত্যাগের মাস। শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলা ভাষা। বাংলা ভাষা বাঙালির আবেগ, অনুভূতিতে মিশে আছে। ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে বাংলার দামাল ছেলেরা। রক্ত দিয়ে অর্জিত এই ভাষার অপপ্রয়োগ খুবই হৃদয়বিদারক। বর্তমান সময়ে নতুন প্রজন্ম ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে অবহেলা করছে। যা বাংলা ভাষার মহান ইতিহাসকে ক্ষুণ্ন করে। নতুন প্রজন্মকে ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে আরও বেশি জানতে হবে, হৃদয়ে লালন করতে হবে ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ। শহীদদের স্মরণে শুধু ২১ ফেব্রম্নয়ারি দিনটাতে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। প্রতিটা মাসেই একুশের চেতনা উজ্জীবিত থাকুক সবার মননে। যথাযথ শুদ্ধ প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলা ভাষা স্বগৌরবে টিকে থাকুক পৃথিবীর বুকে। বাংলা ভাষার শুদ্ধচর্চা এবং এর যথাযথ প্রয়োগে জোর দিতে হবে আতিয়া শারমিলা আঁখি দর্শন বিভাগ ভাষার মাস বাঙালি জাতির কাছে প্রেরণার মাস, আবেগ, অনুভূতি, আত্মত্যাগ, শ্রদ্ধা, অনুপ্রেরণা এবং অহংকারের মাস। এ মাস যেন প্রতিটি তরুণের মনে এবং প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে এক শুভচেতনার উন্মেষ ঘটায়। এ মাস স্বাধীনতা, মুক্তি, সাম্য এবং গণতন্ত্রের মাস। বাঙালি জাতির আবেগে অস্তিত্বে মিশে আছে বাংলা ভাষা। ১৯৫২ সালের এই ফেব্রম্নয়ারি মাসেই ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার রক্ষা করে। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা হাজারো মায়ের সন্তানকে। কিন্তু সেই বাঙালি জাতি রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মায়ের ভাষাকে কতটুকু রক্ষা করতে পারছে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমার কাছে শুধু ভাষার মাস উৎসবমুখরভাবে পালন করাই যুক্তিযুক্ত নয় বরং প্রতিনিয়ত এবং সর্বস্তরে মাতৃভাষাকে লালন-ধারণ-পালন এবং পরিচর্যার মাধ্যমে আমাদের উচিত বাংলা ভাষার শুদ্ধচর্চা করা এবং সঠিকভাবে এর প্রয়োগ করা। নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ভাষাকে ধারণ করে বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করা। মাতৃভাষাকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে অন্য ভাষার চর্চা কমিয়ে বাংলা ভাষার শুদ্ধচর্চাতে গুরুত্বারোপ করতে হবে দীপ্তি সূত্রধর পপুলেশন সায়েন্স বিভাগ ভাষার মাস ফেব্রম্নয়ারি। ১৯৫২ সালের এই মাসেই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষাকে রক্ষা করেন। মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার এই সংগ্রামে সেদিন ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে আসেন। পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বাঙালি জাতিই মাতৃভাষার জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছিল। তারা মা ও মাতৃভাষাকে সম্পূর্ণভাবে মনে ধারণ করতে পেরেছিল বলেই এত বড় আত্মত্যাগ করতে পেরেছিল। তাদের অসামান্য ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই ভাষার মাস ফেব্রম্নয়ারিতে কত আয়োজন! তবে ভাষা শহীদদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা কি শুধু ফেব্রম্নয়ারি মাসেই সীমাবদ্ধ? ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পরেও কি আমরা বাংলা ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ করতে পারছি? আজ এ সুশীল সমাজে ভাষাপ্রেমী ও অনুশীলনকারীর সংখ্যা খুবই কম! আজকাল বাংলা ইংরেজি মিশিয়ে এক অদ্ভুত ধরনের বিজাতীয় ভাষার সৃষ্টি হচ্ছে! তথাকথিত ট্রেন্ড নামে সেই ভাষা আবার সবাই অন্ধ অনুকরণ করছে! বাংলা ভাষায় বিকৃত, মিশ্র ও অশুদ্ধ উচ্চারণের প্রয়োগ ঘটিয়ে সাধারণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে! শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ ভাষাকে বিকৃত করার কোনো অধিকার আমাদের নেই। আমাদের সবাইকে বাংলা ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগে সচেতন হতে হবে। বাংলা ভাষার শুদ্ধচর্চা সম্পর্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। পাশাপাশি গণমাধ্যমে, সংবাদপত্র, বিশেষ করে বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আসুন আমাদের মাতৃভাষাকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করি?ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে অন্যদের জাগ্রত করি? শুধু ভাষার মাসে নয় সারাবছর বাংলা ভাষার শুদ্ধচর্চা করি এবং সবার মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করি। পৃথিবীর সব ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে বাংলা ভাষার শুদ্ধচর্চা করতে হবে রিমা আক্তার নৃবিজ্ঞান বিভাগ ভাষা শব্দটা মাথায় আসতেই সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে যায় নিজ মাতৃভাষা বাংলার কথা। কত কষ্ট করে, কতশত প্রাণের বিনিময়ে তা অর্জিত। কত ত্যাগ-তিতিক্ষা জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। আমাদের উচিত আমাদের মাতৃভাষার সঠিক ব্যবহার করা এবং পাশাপাশি পৃথিবীর সব ভাষার প্রতি সম্মান জানানো। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, আমরা এখনো ভাষার সঠিক ব্যবহার জানি না। পাশাপাশি নিজের ভাষাকে এড়িয়ে অন্য ভাষা শিক্ষায় আমরা বেশি জোর দিচ্ছি। বর্তমানে স্কুল-কলেজেও একই অবস্থা। এ জন্য আমাদের বাংলা ভাষা চর্চায় জোর দিতে হবে। পাশাপাশি অন্য সংস্কৃতি এবং পৃথিবীর সব ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখতে হবে।