বইমেলা ও বই পড়া নিয়ে নাগরিক ভাবনা

বই আমাদের নিয়ে যায় আলোর পথে। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হই। আমরা অতীতে না যেতে পারলেও বই আমাদের ঠিকই নিয়ে যায় অতীতের কোনো ইতিহাস কিংবা গল্পের পাতায় পাতায়। বই আমাদের শেখায় ভাবতে, নতুন নতুন জানতে। প্রতিবছর আয়োজন করা হয় অমর একুশে বইমেলার। যেখানে সমাবেশ ঘটে লেখক-পাঠক-প্রকাশক-কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে বহু গুণী মানুষের। আজকাল বইমেলায় সেলফি তোলা কিংবা নিজেকে জাহির করার একটা প্রবণতা লক্ষণীয়। অন্যদিকে বই পাঠকের সংখ্যাও কমে আসছে দিন দিন। এবারকার লেখায় বইমেলা ও আমাদের বই পড়া নিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী- মারুফ হোসেন-

প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মারুফ হোসেন
শাহিদা আরবী
গড়ে উঠুক মননশীল জাতি শাহিদা আরবী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বাঙালি সাহিত্যপ্রেমী। সেই সুবাদে বইয়ের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কটাও যেন আদিম, অনন্ত। বছর ঘুরে আবার এসেছে বাঙালির প্রাণের বইমেলা। বইপ্রেমী মানুষের কাছে এ এক বই দিয়ে সাজানো স্বপ্নের রাজ্য। আধুনিকায়নের যুগে এসেছে ই-বুক। আজকাল মোবাইলের ছোট্ট পর্দায় পড়ে ফেলা যায় বিশ্বের যে কোনো বই। তবুও কাগজের বইয়ের আবেদন পাঠকের কাছে আজও প্রিয়। আজও লেখকের নতুন কোনো বইয়ের অপেক্ষায় থাকে পাঠক। বইমেলা সেখানে লেখক পাঠকের এক চমৎকার মিলনমেলা। বইপ্রেমী মানুষের বইয়ের প্রতি এই ভালোবাসা থাকুক বছরজুড়ে। অনলাইনে আটকে থাকা চোখ দুটো আবার হারিয়ে যাক নতুন বইয়ের নতুন কোনো লাইনে। এমনটাই কাম্য থাকবে। বই এমন বন্ধু, যা কখনো ছেড়ে যায় না লতিফা আক্তার চুমকি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া সংস্কৃতিমনা বাঙালির কাছে মেলা মানেই আগ্রহ ও আবেগের জায়গা আর সেটা যখন 'বইমেলা' হয় যোগ হয় বাড়তি এক আকর্ষণ ও উদ্দীপনা। বইমেলার মাধ্যমে আমরা অনেক লেখকের বিচিত্র সব বইয়ের সংগ্রহ পাই একই জায়গায়। বই পড়ার অভ্যাস যাদের আছে তাদের জন্য তো বটেই যারা বই পড়তে একটু কম আগ্রহী তাদের জন্যও বইমেলা একটা আগ্রহের জায়গা বলে আমি মনে করি। বন্ধু, অর্থ, বিত্ত, আমাদের ছেড়ে গেলেও বই এবং তা থেকে অর্জিত জ্ঞান কিন্তু আজীবন রয়ে যায় আমাদের সঞ্চয়ের ভান্ডারে। প্রযুক্তির যুগে তবুও বই ও বইমেলার চাহিদা অধিক! হোসনেয়ারা খাতুন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তির এই যুগে হাজার হাজার বই অনলাইনে পাওয়া গেলেও বইমেলায় যাওয়া, হার্ডবুক কেনা মানুষের চিরায়ত শখ। মূলত বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই মানুষ বইমেলার প্রত্যক্ষদর্শী হয় এবং একটা, দুইটা ছুঁয়ে দেখতে গিয়ে, পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে কিনে ফেলে পছন্দসই বইটি। প্রিয় মানুষকে নিয়ে ঘুরে-ফিরে বইমেলা। নানা লেখকদের সঙ্গে দেখা করতে, অটোগ্রাফ নিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন বইপ্রেমীরা। কিন্তু বর্তমানে বইয়ের দাম আকাশচুম্বী। বইয়ের দাম অবশ্যই ক্রয়সীমার মধ্যে হওয়া উচিত তাহলে যারা বইপ্রেমী না তারাও এই জ্ঞানের ভান্ডার সংগ্রহ করবে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে গ্রোথিত শেকড়ে আঁকড়ে থাকুক বই ও বইমেলা মাহমুদা টুম্পা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বইমেলায় বই ছুঁয়ে দেখার মধ্যে যে শাশ্বত ভাব আছে, তা অন্য কোনো ভুবনে আছে কিনা সন্দেহ! থোকা থোকা সাজানো বই দেখলেই অদম্য কৌতূহল শুরু হয়, অনন্ত জিজ্ঞাসার উদ্রেক হয়। বইমেলা এত গুণীদের সান্নিধ্যে মননশক্তি অর্জন করতে সাহায্য করে, হৃদয়শক্তির অমৃত সুধা সৃষ্টি করে। বইয়ের সাদা কাগজের কালো কালি চোখ জুড়ায়, খোরাক মিটায় জ্ঞানের সমুদ্র কলেস্নালের তৃষ্ণা। বইমেলা যতদিন আছে, ততদিন একটা জাতিও বিপথে যাবে না। তাই বাঙালি জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে গ্রোথিত শেকড়ে আঁকড়ে থাকুক বই ও বইমেলা। বাংলাদেশের সংস্কৃতি রক্ষায় বইমেলা চমৎকার উদ্যোগ আরোশি আঁখি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে মনে হয় বাংলার এক অন্যরকম শুদ্ধতম সাংস্কৃতিকচর্চা ঘটে বইমেলাকে কেন্দ্র করে যেখানে পাঠক খুঁজে পায় নতুন নতুন আবিষ্কার, দেশ খুঁজে পায় নব নব কবি আর মানুষ খুঁজে পায় বইয়ের মধ্যে আত্মার উপলব্ধি। বইমেলার মাধ্যমে বাংলার সংস্কৃতির ঘটে নবজাগরণ। এই ফেব্রম্নয়ারি মাসের জন্য সারাবছর পাঠক, প্রকাশক, লেখক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। বইমেলায় হাজারো মানুষের মুখর পদচারণায় নতুন একটা মিলনমেলা ঘটে বইপ্রেমীদের। এভাবেই যুগ যুগ ধরে চলতে থাক বইমেলার এই প্রচলন আর মানুষের মধ্যে বিরাজ করুক বই পড়ার আয়োজন। বাঙালির অন্যতম জাতীয় উৎসব বইমেলা নাইমা আক্তার রিতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বছরের নানা সময়ে নানান আয়োজনে পালিত বাঙালিদের উৎসবের তালিকায় অমর একুশের বইমেলা নিশ্চুপে স্থান করে নিয়েছে বহু আগেই। স্কুল-কলেজের বাচ্চা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র-শিক্ষক, লেখক-পাঠক এবং বইপ্রেমী ও সচেতন মহল মরিয়া হয়ে বইমেলায় আসে নতুন নতুন বই সংগ্রহের জন্য। বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় প্রতি বছরে উলেস্নখযোগ্য হারে নতুন লেখকদের বই আসছে যা আমাদের পরবর্তী বাঙালি সাহিত্যের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এই নতুন লেখকদের সরকারি ও বেসরকারিভাবে উৎসাহ প্রদান এবং পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। মানসম্মত লেখনী খুঁজে পাওয়া দায় রোকাইয়া আক্তার তিথি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভাষার মাসে বই ও বইমেলা যেন অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে। কিন্তু প্রকৃত পাঠকের সংখ্যা কত! মুষ্টিমেয় জনগোষ্ঠী বইমেলায় যায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য, শো অফ, সেলফি বা ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করার জন্য। কিছু পাঠক রয়েছেন যারা মুখিয়ে থাকেন নিত্য-নতুন বই ক্রয় করে নিজের সংগ্রহ তালিকাকে সমৃদ্ধ করার জন্য। এমন বই খাদকদের ভিড় বইমেলায় সচরাচর দেখা যায়, যদিও সংখ্যাটি এখন কালের ধারায় কমে আসছে। কিন্তু পাঠক যেমন সীমিত তেমনি সীমিত মানসম্মত লেখকও। অনেক সাহিত্যিকের ভিড়ে মানসম্মত লেখনী খুঁজে পাওয়াই দায়। বই হোক পরম বন্ধু তৌহিদা আকতার রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বইয়ের মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে জানতে পারে, নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারে। তেমনি একটি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের যথাযথ পরিচয় পাওয়া যায় সে দেশে অনুষ্ঠিত মেলাগুলোর মধ্যে যার মধ্যে বইমেলা অন্যতম। মেলা মিলিয়ে মানুষ মানুষে, সংযোগ ঘটায় দেশ ও দেশে। পারস্পরিক ভাবের বিনিময়ে, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে, নবীন-প্রবীণের সংযোগ রচনায় বইমেলা হয়ে ওঠে লেখক-পাঠকের মিলনতীর্থে। বই কিনে কেউ দেওলিয়া হয়নি এই ধারায় পাঠকরা ভিড় জমায় বইমেলায়। বই মানুষের নিত্যসঙ্গী, সুখ-দুঃখের ভাগিদার। তাই বই হোক আমাদের পরম বন্ধু।