বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তাল সমুদ্রে উচ্ছ্বসিত আমরা

মাহমুদা টুম্পা
  ০৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

বৈচিত্র্যের সন্ধানী মানুষ কখনো স্থির হয়ে থাকতে পারে না। নতুন আকর্ষণে মানুষ প্রতিনিয়ত একস্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে। শিক্ষাসফর শিক্ষার্থীদের জ্ঞান সঞ্চয়ের একটি উৎকৃষ্ট পন্থা। এতে অভিজ্ঞতা বাড়ে এবং হৃদয়ের প্রসারণ ঘটে। অজানাকে জানার আগ্রহে অন্তরে পুঞ্জীভূত শক্তি নিয়ে রেডি ইবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। ৪০ জন শিক্ষার্থীর সমুদ্র দেখার আনন্দ বাঁধ ভেঙে নামল। আমাদের দিকনির্দেশক হিসেবে ছিলেন সরফরাজ নেওয়াজ, নাসিম ও সুহাস স্যার। ফোনালাপের মাধ্যমে শ্রদ্ধেয় হান্নান স্যার টু্যরের দোয়া পড়ে দিলেন। আরও বললেন সমুদ্রের মতো বিশাল মন নিয়ে ফিরতে। শান্তিপূর্ণ বার্তার আহ্বানে সাড়ে পাঁচটায় আমাদের বাস কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা করল। শুরু হলো টু্যরের মহানন্দ। সেকি আনন্দ! যেন আকাশে-বাতাসে সুখের স্পর্শ লেগেছে। বাস যত এগোয়, ততই আনন্দের রেশ বেড়ে যায়। বক্সে গান বাজছে, সঙ্গে নাচ চলছে, তাল লয় কিছুই ঠিক নেই তবুও মনের আনন্দে ঢেউ খেলছে। যাতায়াতের একপর্যায়ে সুহাস স্যার এক এক করে মাইকে নাম ঘোষণা করলেন, সবাইকে গান বলতে বললেন। সবাই সিঙ্গেল করে গান গাইল। এর সঙ্গে যুক্ত হলেন বাকী স্যারও। প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর আমরা কক্সবাজারে পৌঁছালাম। সকালের নাশতা এখানেই সারলাম। তারপর অগ্রিম বুক করা মোটেল উপল রিসিপশনে গেলাম। যে যার রুমে ফ্রেস হয়ে নিল। লোগো ডিজাইন ট্রি শার্ট পরে নিল। সাগরের উদ্দেশে রওনা করলাম সাড়ে ১২টায়। ঝাউবন পেরিয়ে লাবণী সি বিচে গেলাম। সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ কাছে টানছে। সেই ডাকে সাড়া দিতে অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ল সমুদ্রের বুকে। স্রোত মনের মধ্যে পরশ বুনিয়ে যাচ্ছে। সূর্যটাকে ফুলঝুরি মনে হচ্ছে। চিকচিক করছে বালি। আবার অনেকেই সেই বালিতে আলপনা আঁকছে। প্রিয়জনের নাম লিখছে। স্রোতের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বালির বুকে। ঝিনুকগুলো যেন হীরক। বড় বড় ঢেউ পায়ে আসতেই রোমাঞ্চকর অনুভূতি। হুলেস্নাড়ে মেতে ওঠা। ছোটাছুটি করে অদূরের ঢেউকে মুঠোবন্দি করা। নীল ঢেউয়ের সাদা ফেনার কারুকার্য মনে রংধনু এঁকেছে। কেউ কেউ কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। বালিতে বসে পোজ দিয়ে ছবি তুলছে। আবার কেউ কেউ সমুদ্রে ডুব দিয়ে দুঃখ ভাসিয়ে দিচ্ছে। নতুন করে সঞ্চারিত করছে নিজের সত্তাকে। অনেকেই ঢেউয়ের সঙ্গে পাঙ্গা দিয়ে সারি করে স্মৃতিচিহ্নকে ফোনবন্দি করছে। নাগরিকতার মরুময় তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে আনন্দের হিলেস্নাল বইছে মনেপ্রাণে। বয়সে পালস্না ভারী হয়ে দাঁড়ায়নি। এ যেন বাল্যকাল। উন্মুক্ত শৈশব বাগিচা। স্বর্গীয় সুষমার দেদীপ্যমান। সুরভিত পুষ্পের রাশি রাশি ঘ্রাণ।

পরের দিন আমরা গেলাম পাটুয়ারটেক, সূর্যাস্ত দেখার জন্য। দুপুরের লাঞ্চ সেখানেই সারলাম। উদ্গ্রীব নিয়ে অপেক্ষা করছি কখন সূয্যিমামা ডুব দেবে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যেন কাটছেই না। অনেকেই ছাতায় বসে সমুদ্রের ঢেউ দেখছে। আবার কেউ কেউ কালো পাথরে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের সঙ্গে মিতালি করছে। অপেক্ষার পালা শেষ হলো। দিবস ও রজনীর আগমনে পৃথিবী যেন মিলন বিরহ খেলায় মেতে উঠল। সূয্যিমামা টুপ করে ডুব দিল সমুদ্রের বুকে। এ যেন নতুন এক আবেশ, অপার্থিব মৌনতা।

সমুদ্র শুধু ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২৫তম ব্যাচকে একত্রিত করেনি, স্নেহডোরে বেঁধেছে স্মৃতিকে। যে স্মৃতির ঢেউ এখনো কলেস্নালিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে