ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

অতিথি পাখিদের কলকাকলি

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আতিকুর রহমান অনি
দেখে বুঝার কোন উপায়ই নেই যে, মাত্র কয়েকটি মাস আগেও এটি পচা-ডোবা আর জঙ্গলে ভতির্ বন ছিল। যেখানে দিনের বেলায়ও আসতে ভয় পেত শিক্ষাথীর্রা। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে সেটিই হয়ে উঠছে ক্যাম্পাসের সবচেয়ে জনাকীণর্ স্থান। চড়াইভাতি, জন্মদিনের উৎসব কিংবা আড্ডা সবকিছুরই যেন ‘পারফেক্ট প্লেস’। বলছি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকের কথা। আগাছা আর কচুরিপানা উচ্ছেদ করে চুন ছিটিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে পানি। পারাপারের জন্য মাঝ বরাবর একটি ঝুলন্ত সেতু, তার একটু পরে বঁাশ দিয়ে তৈরি আড়পাস। মনির্ং ওয়াক কিংবা ঘুরে দেখার জন্য দুই তীর জুড়ে প্রশস্ত ওয়াকওয়ে। পূবির্দকের ওয়াকওয়ে ঘেঁষে বিশাল জায়গা জুড়ে গড়ে উঠছে বোটানিক্যাল গাডের্ন। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ এখনো সিংহভাগ বাকিই রয়েছে। কিন্তু তাতে কি! এখনই রূপ যেন ঝলসে পড়ছে লেকটির গতর থেকে। দশর্নাথীের্দর কেউ কেউ এরই মধ্যে খুঁজে ফিরছেন হাতিরঝিলের ছবি। কৌতুকপ্রিয় রসিকদের অনেকে আবার ভালোবাসা আর মৃদু ঠাট্টায় ডাকছেন ‘গরীবের হাতিরঝিল’ বলে। বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে লেকের পাড়ে ঘুরতে এসেছে আইন বিভাগের নাদিম। মফঃস্বলে ক্যাম্পাস হওয়ায় রাজধানী কিংবা বিভাগীয় শহরের মজাটা মিস করে জানিয়ে সে বলে, লেকের পাড়ে এলে বুঝতেই পারি না আমরা এখন কোন মফঃস্বলের ক্যাম্পাসে আছি। মনে হয় ফরেন কোনো রিসোটর্। এ যেন সত্যিই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বুকে ‘এক টুকরো হাতিরঝিল’। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবোর্চ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পশ্চিম কিনার ঘেঁষে বয়ে চলা দৃষ্টিনন্দন লেকটি যেন দশর্নাথীের্দর সেই কথাই মনে করিয়ে দেয় বারবার। বাস্তবের ‘হাতিরঝিল’কে বলা হয় ‘ঢাকার বুকে একখÐ ইউরোপ’। ইট পাথরের ব্যস্ত শহরে বিরতিহীন নাগরিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে রাজধানীর হাতিরঝিলকে করা হয়েছে মনোরম এক বিনোদন কেন্দ্র। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজধানীর যানজট নিরসন এবং সৌন্দযর্ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ডিজাইন করা হয় হাতিরঝিলের। ঠিক তেমনই ক্যাম্পাসের পানি নিষ্কাশন ও সৌন্দযর্ বৃদ্ধির লক্ষ্যে খনন করা হয়ছিল লেকটি। দীঘর্কাল অযতেœ থাকার পর স¤প্রতি সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। ফলে লেকের চেহারা যেমন পাল্টে গেছে তেমনি বাড়তি সৌন্দযর্ যোগ হয়েছে পুরো ক্যাম্পাসে। আর সময়টা শীতকাল বলে শুরু হয়েছে অতিথি পাখিদের আনাগোনা। ফলে শিক্ষাথীের্দর আড্ডা-বিনোদনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে লেকের পাড়। প্রতিদিনই শত শত শিক্ষাথীর্ কিংবা বহিরাগত দশর্নাথীের্দর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে স্থানটি। একটানা ক্লাস-পরীক্ষা আর ল্যাবের নিষ্ঠুরতা থেকে স্বস্তি পেতে শিক্ষাথীের্দর কাছে প্রথম পছন্দই এখন লেকের পাড়। ঘুরতে আসা হিসাববিজ্ঞান বিভাগের মুনতাসীর রহমান জানায়, স্বচ্ছ পানি, ঝুলন্ত সেতু আর অতিথি পাখিদের কলকাকলি আমাকে বারবার টেনে আনে লেকের পাড়ে। লোকপ্রশাসন বিভাগের সৃষ্টি সরদার বলে, কয়েক মাস আগেও লেকটি ছিল পচা পানির অঁাধার। কিন্তু এখন সেটি চেনার উপায় নেই। সময় পেলেই বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসি। মজার ব্যাপার হলো বিকেলে সূযার্স্ত দেখতে অনেক ভালো লাগে এখান থেকে। সবুজে ঘেরা অপরূপ দৃশ্যের জন্য বহু আগে থেকেই পরিচিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। লেকের এই সৌন্দযর্ আর বিকেলে সূযাের্স্তর নয়নাভিরাম দৃশ্য তার মুকুটে যেন নতুন পালক যোগ করেছে। কবিদের কবি নিমের্লন্দু গুণ যখন প্রথমবার হাতিরঝিলকে দেখেন তিনি লিখেছিলেন, ‘তিন-চার শ’বছর ধরে হাতিরঝিলের বজর্্যস্তূপের আড়ালে ঢাকা পড়েছিল যে ঢাকা, সেই ঢাকা আজ কী অপরূপ রূপের আলোতেই না উদ্ভাসিত হলো, উন্মোচিত হলো, আবিষ্কৃত হলো। আমি মুগ্ধ। আমি গবির্ত। আমি আনন্দিত। অবশেষে সিঙ্গাপুর, সিডনি, লন্ডন বা প্যারিসের পাশে দঁাড়ানোর মতো একটা ল্যান্ডমাকর্ তৈরি হলো আমাদের প্রিয় নগরী ঢাকার ভেতরে।’ তাই আমারও বলতে পারি, রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ যদি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে কখনও বেড়াতে আসতেন; তিনি নিশ্চয়ই ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় আরও কয়েকটি লাইন বাড়িয়ে লিখতেন।