অর্ধ যুগে তরুণ লেখক ফোরাম

প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

মো. মমিনুর রহমান
ক্যালেন্ডারের পাতায় সময়টা ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই। প্রতিষ্ঠা লাভ করে তরুণ লেখকদের বাতিঘর 'বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম' সংক্ষেপে 'বিটিসিএলএফ'। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থী 'সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হোক লেখনীর ধারায়' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে গড়ে তোলেন সংগঠনটি। হাঁটিহাঁটি পা পা করে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ৫টি বসন্তের সুশোভিত কাননে ৬ষ্ঠ বছরে পদার্পণ করছে প্রিয় লেখক ফোরাম। বর্ষায় কদম ফুল যখন মেঘের গুড়গুড় আওয়াজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রকৃতিকে সুদর্শন ও শোভিত করে ঠিক তখনই তরুণ লেখক ফোরামের জন্মতিথির আগমন ঘটে। প্রেয়সীর জন্মদিনে যেমন ব্যাকুল হয় প্রেমিক পুরুষ ঠিক তেমনি ফোরামের সদস্যরা মুখিয়ে আছে প্রিয় সংগঠনটির জন্মতিথিকে উদযাপনের জন্য। প্রেয়সীকে বরণ করে নেওয়ার জন্য প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে 'তরুণ লেখক সম্মেলন ও ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী'। তরুণ লেখক সম্মেলনের মহাসমারোহে প্রধান অতিথি হিসেবে অলঙ্কৃৃত করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি ও প্রধান আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত করা হচ্ছে 'কথনিকা' আঠারো থেকে তেইশ ম্যাগাজিন। প্রিয় সংগঠনের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি বর্তমানে ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মিলে মোট ১৬টি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫০০ সদস্য নিয়ে এই সংগঠনের কার্যক্রম চলমান। সংগঠনটির সহযোগিতায় প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০টির মতো জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তরুণ লেখকদের বিভিন্ন বিষয়ে লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। এই সংগঠনের হাত ধরে প্রতি মাসে ১০০০-এর বেশি লেখা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় জায়গা করে নিচ্ছে। সংগঠনের সদস্যরা বাংলাদেশের কথা বলছে, বলছে রংপুর কেমন আছে। ঢাকার বায়ুদূষণ, চট্টগ্রামের ঘূর্ণিঝড়, বাজারের মুদ্রাস্ফীতি, জনজীবনের দুর্দশা, ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা নিয়ে লিখছে। প্রান্তিক অঞ্চলের কৃষকের ঘাম ছুটানো ধানের গন্ধের কথা বলছে, গুন্ডা-পান্ডাদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অরাজকতার কথা বলছে। এপিজে আবুল কালামের উক্তির মতো আমার একটা স্বপ্ন ছিল। স্বপ্নে বিভোর ছিলাম একদিন আমিও জাতীয় পত্রিকায় নিজের ছবিসহ লেখা পড়ব। নিজের বাবা-মা, ভাই-বোনকে হাসিমুখে পত্রিকা দেখাবো। সেই স্বপ্নের সঙ্গে বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। বিটিসিএলএফ এমনই একটি সংগঠন যা হাজার হাজার শিক্ষার্থীর লেখালেখির জগতে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। সংগঠনটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে নবাগত লেখকদের সুপরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। বিভিন্ন পত্রিকার মেইল খুঁজে দেওয়া, কোন পত্রিকার জন্য কত শব্দের মধ্যে কলাম, ফিচার কিংবা চিঠিপত্র লিখতে হবে, কীভাবে লিখতে হবে সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। বিভিন্ন সময়ে নানা আয়োজন করা হয় যেমন বাংলা ভাষা ও চর্চা কুইজ প্রতিযোগিতা, ক্যারিয়ার গঠন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখাগুলো স্বাস্থ্য সচেতনতা, লেখালেখি কর্মশালার ব্যবস্থা করে থাকে। দেশের খ্যাতিমান অধ্যাপক, লেখক ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে চর্চা করা হয় লেখালেখির আদ্যোপান্ত। সংগঠনটির সুবাদে হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছে, দিন দিন নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করছে এবং নিজেদের স্বপ্নের দেয়ালে স্বনামধন্য লেখক হিসেবে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে স্বপ্ন বুনছে। সংগঠনটি শুধু লেখালেখির মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে সাংগঠনিক নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতি মাসে সেরা লেখক নির্বাচন ও পুরস্কৃত করা এই সংগঠনের অন্যতম কাজ। ফলে তরুণ লেখকদের মধ্যে লেখালেখির প্রতিযোগিতা বেড়ে যাচ্ছে। তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি, সুস্থ মস্তিষ্ক ও মননশীলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের সুপ্ত প্রতিভা লেখনীর মাধ্যমে বিকশিত করতে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট, সাংবাদিকদের নিয়ে লেখালেখিবিষয়ক আড্ডার আয়োজন করায় তরুণ লেখকের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি সংগঠনের সদস্যদেরও লেখার গুণাগুণ তর তর করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বোপরি, আজকের তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে আগামীর বাংলাদেশকে সৃজনশীল, গবেষণানির্ভর, দক্ষ লেখক গড়ার প্রত্যেয়ে সংগঠনটি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই এই বিশেষ দিনে বলতে চাই, শুভ জন্মদিন প্রিয় লেখক ফোরাম।