ঐতিহাসিক নগরী পানামে একদিন

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

হুমায়রা রহমান সেতু
বংশী নদের তীরবর্তী ঘন শ্যামলীমায় মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে গড়ে উঠেছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গণ বিশ্ববিদ্যালয়। এর আনাচে-কানাচে নানা ঘটনা প্রবাহগুলো যে সংগঠনের চোখ এড়ায় না, তা হলো গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)। বেসরকারি হলেও নানা রকমের ঘটনায় ব্যস্ত সময় পার করে সংগঠনটির সাংবাদিকরা। তাই একঘেয়েমি কাটানো ও সতেজতার জন্য ভ্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। স্থান নির্ধারণ করা হয় সোনারগাঁওয়ের ঐতিহাসিক নগরী পানামে। কথা ছিল সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার পরপর পানাম যাত্রা হবে। কিন্তু ঈদের ছুটি পড়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ছুটি শেষেই পানাম যাওয়া হবে। যেই কথা সেই কাজ ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার পর ১৫ জুলাই সফরের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। অবশেষে এলো বহুল প্রতীক্ষিত সেই দিন। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবাই সাভার থেকে চিটাগাং রোডে একত্রিত হয়ে সকালের নাশতা করলাম। তারপর ছোট বাসযোগে রওনা হলাম পানামে। বাস থেকে নেমেই চোখ আটকে গেল ভাঙা ভাঙা লাল ইটের দালানে। গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে টিকিট কাটা হলো। টিকিট চেকের পর সবাই হাঁটা শুরু করলাম রাস্তায়। দুই ধারে পুরাতন একতলা, দো-তলা ও তিনতলা বিশিষ্ট ভবনগুলো দেখে তৎকালীন স্থাপত্য বিদ্যার ধারণা পাওয়া যায়। বাড়িগুলোর চতুর্দিকে দেয়াল ভেতরে উন্মুক্ত উঠান। বাড়িগুলোর মেঝেতে কালো ও সাদা মোজাইক করা। বাড়িগুলোর গায়ে দেখা যায় খোদাইকৃত নানা চিত্র ও নকশা। টিকে যাওয়া বাড়িগুলোর মধ্যে ৫২টি বাড়ি রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো রাখার জন্য নগরীর মাঝখানে দিয়ে রয়েছে রাস্তা। প্রতিটি বাড়ি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। পেছনে খাল থাকায় নগরীকে বর্ষার পানির হাত থেকে বাঁচাতে খালের দিকে বাড়িগুলোকে একটু ঢালু রাখা হয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মূলত পানাম ছিল বাংলার সে সময়কার ধনী ব্যবসায়ীদের বাসস্থান। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ছিল ঢাকা ও কলকাতাজুড়ে। ব্যবসায়িক সুবিধার্থে এখানে নগরী তৈরি করেন। বাংলার স্বাধীন রাজা ঈশা খাঁর পদচারণা ছিল এই নগরীতে। এখানে আবাসিক ভবন ছাড়াও রয়েছে মসজিদ, মন্দির, দরবার কক্ষ, নাচঘর ও পাঠশালা। এ ছাড়াও চোখে পড়ল গুপ্তপথের, যা সত্যি বিস্ময়কর। পানাম ঘুরে সেখান থেকে পায়ে হাঁটা পথ কতক হাঁটতেই চোখ থমকে গেল বাংলার স্বাধীন রাজা ঈসা খাঁর প্রাসাদে। বিশাল ঘাট বাঁধানো দীঘি, যা পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। এ ছাড়া সেখানে রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। যেখানে স্থান পেয়েছে প্রাচীনকালের রাজাদের ব্যবহার্য নানাবিধ জিনিসপত্র। রয়েছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা ও জামদানির প্রদর্শনী। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে বেলা শেষ হয়ে গেল। দিন শেষে অভিজ্ঞতার খাতায় যুক্ত হলো নতুন এক স্মৃতিময় অভিজ্ঞতার অধ্যায়।