চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বষার্য় স্নিগ্ধ সবুজ ক্যাম্পাস

‘প্রকৃতি দেবী যেন নিজ হাতে গড়েছেন চবি ক্যাম্পাসকে। এমনিতেই প্রাকৃতিক সৌন্দযের্র এক অপরূপ লীলাভূমি চবি ক্যাম্পাস। বৃষ্টিতে তার রূপের মাধুযর্ বেড়ে যায় বহুগুণ। সবুজের মাঝে পাহাড় হয়ে বৃষ্টি নেমে আসে। ভিজিয়ে দিয়ে যায় বৃষ্টিপ্রেমীদের। চবি ক্যাম্পাসের মেঠোপথগুলো বষার্র বাহারি ফুলে সাজিয়ে ওঠে অপরূপ রূপে...

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

রুমান হাফিজ
প্রাকৃতিক সৌন্দযের্র অপরূপ বষার্স্নাত ক্যাম্পাস
কোথাও উঁচু-নিচু, কোথাও অঁাকাবঁাকা পথ। গবর্ নিয়ে দঁাড়িয়ে আছে নয়নাভিরাম পাহাড়। চারদিকে সবুজের সমারোহ। পত্রপল্লবের গা ছুঁয়ে পড়ছে বৃষ্টির ফেঁাটা। টুপটাপ শব্দে বৃষ্টি আছড়ে পড়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝিরিতে। বাদ পড়ে না শাটল ট্রেন, ঝুলন্ত সেতু, প্রাকৃতিক ঝরনাধারা, হতাশার মোড়, বিশ্বশান্তি প্যাগোডা, সুনামি গাডের্ন, জারুলতলা, বোটানিক্যাল গাডের্ন, মায়া হরিণ, শহীদ মিনার, লাইব্রেরি চত্বর, সুবিশাল খেলার মাঠ, বিরহ পাহাড়, কাটা পাহাড় রাস্তা, ঝুপড়ি, বিশালাকৃতির পাহাড়Ñ এসবেও লেগে থাকে বষার্র ছেঁায়া। বষার্র আগমনে নবরূপে সাজে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রকৃতি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষাথীের্দর নিয়ে শহর থেকে ছড়ে আসা ট্রেনে আচমকা বৃষ্টির ঝাপটায় জানালা লাগাতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে একদল গলা ছেড়ে গান শুরু করে দেয়। বৃষ্টির ঝুমুর ঝুমুর শব্দের সঙ্গে গানের মিতালি, মন্দ না! আনমনে কারো কারো চোখ ছুটে চলে ট্রেনের আটকানো জানালা ধরে অনেক দূরে। ট্রেন থেকে নেমে কাটা পাহাড়ের পথ ধরে সবাই ছুটে চলে ক্লাসের উদ্দেশ্যে। ঝুমবৃষ্টিতে ঝুপড়ি থেকে কখনো কখনো ভেসে গানের সুর। গিটারের টুংটাং আর বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ মিলে সে এক আশ্চযর্ যুগলবন্দি। বৃষ্টির সঙ্গে খিচুড়ি, ধূমায়িত পেয়ালায় চা সঙ্গে গান, আর কী চাই! পরিসংখ্যান বিভাগের মাস্টাসের্র ছাত্রী জেবুন নাহার শারমিন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সবচেয়ে পছন্দের একটি ঋতু বষার্কাল। শহরের বষার্র চেয়েও অনেক ভালো লাগার বষার্কাল কাটিয়েছি কয়েক বছরের ক্যাম্পাস জীবনে। চারদিকে গাড় সবুজ পাতায় ভরা গাছপালা আর প্রকৃতির বিশুদ্ধ রঙ সবসময় কাছে টেনে রাখে আর একজোড়া চোখ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছাতার ভেতর থেকে না হয় হলের রুমের জানালার ধার থেকে। কখনো বড় ভাইবোন, কখনো বন্ধু বান্ধব, ছোট ভাইবোন প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে পুরো ক্যাম্পাস ভিজে বেড়ানোতো এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।’ নৃজ্ঞান বিভাগের ৪থর্ বষের্র শিক্ষাথীর্ মাসুম আহমদ ইকবাল বলেন, বৃষ্টির দিনে ক্যাম্পাসে যাওয়া, ক্লাস করা আমার বাড়তি ভালো লাগে। ক্লাসের মধ্যে বসে পাশের জানালা দিয়ে সবুজ পাতা ছঁুয়ে বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ঝরেপড়া আমাকে মুগ্ধ করে। সেই বৃষ্টিতে ভিজে ঝুপড়ি কিংবা চাকসুতে বসে গল্প-আড্ডায় ধূমায়িত চায়ের কাপে কখন যে সময় চলে যায়! বষার্র চবি ক্যাম্পাস আমার আমার কাছে দারুণ উপভোগ্য।’ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১ম বষের্র শিক্ষাথীর্ ইমাম ইমু বলেন, ‘প্রকৃতি দেবী যেন নিজ হাতে গড়েছেন চবি ক্যাম্পাসকে। এমনিতেই প্রাকৃতিক সৌন্দযের্র এক অপরূপ লীলাভূমি চবি ক্যাম্পাস। বৃষ্টিতে তার রূপের মাধুযর্তা বেড়ে যায় বহুগুণ। সবুজের মাঝে পাহাড় হয়ে বৃষ্টি নেমে আসে। ভিজিয়ে দিয়ে যায় বৃষ্টিপ্রেমীদের। চবি ক্যাম্পাসের মেঠোপথগুলো বষার্র বাহারি ফুলে সাজিয়ে ওঠে অপরূপ রূপে। শহীদ মিনার যেন বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া গ্রামের অবাধ্য কিশোরীর প্রতিরূপ। সেই চিত্র আমাকে টেনে নেয় শৈশবে।’ আরবি বিভাগের ৩য় বষের্র শিক্ষাথীর্ জান্নাতুল ফিরদাউস সাকী বলেন, ‘বষার্কাল আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অকৃত্রিম সবুজকে আরও সতেজ করে দেয় ? ঝুম বৃষ্টিতে কাটাপাহাড়ের রাস্তায় হঁাটতে আমার ভীষণ ভালো লাগে আর ক্যাম্পাসে বৃষ্টিবিলাস মানে ঝুম বষের্ণর সময় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার আর জাদুঘরের সামনের চাতালে দঁাড়িয়ে কাজভেজা হয়ে হলে ফেরা? বৃষ্টিমুখর দিনে হলের জীবন দারুণ উপভোগ্য ? মেঘলা দিনের স্নিগ্ধ আবহাওয়ায় শাটলযাত্রার কোনো তুলনাই নেই।’ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃত বিভাগের ১ম বষের্র শিক্ষাথীর্ মাহবুব এ রহমান বলেন, ‘বষার্কাল আমার কাছে সবসময়ই উপভোগ্য। বষার্র পানিতে খেলতে গিয়ে কত বকাঝকা খেয়েছি মায়ের! ক্যাম্পাসে বৃষ্টির পানির সঙ্গে মেতে উঠতে মন চায়। ছাতা ছাড়া কখনো কখনো ভিজে বাসায় ফিরি। জ্বর আসুক, অসুবিধা নেই। বৃষ্টির মাঝে ক্লাস করতে আসি, যেটুকু পারি নিজেকে বৃষ্টিতে বিলিয়ে দিতে চাই!’ মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করেও কঁাটা পাহাড়ের বুকচিরে ছুটে চলা রাস্তা দিয়ে হঁাটেন শিক্ষাথীর্রা। উদ্দেশ্য শাটল ট্রেন। আচমকা চোখে পড়ে যেতে পারে কঁাকড়া কিংবা শামুক সেই সঙ্গে সাপের দেখাও। এক্ষেত্রে সাবধানতা জরুরি। আগামীকাল আবারও ফিরে আসার প্রত্যয় নিয়ে নৈসগির্ক এই ক্যাম্পাসকে নীরব করে শিক্ষাথীের্দর নিয়ে শাটল ট্রেনে চলে যায় শহরের পানে। স্মৃতিপটে জমা হয় বষার্র অজস্র গল্প।