বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

আবৃত্তির জয়ধ্বনি

প্রকাশ | ১৩ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

শাফিকুল ইসলাম
আজ ভালোবাসার বিকেল। একটি আকাশকে আমরা প্রতিদিন দেখি। কত ভাবেই না দেখি! কিন্তু যখন বলি আকাশ ভরা আকাশ আছে তখন সেই আকাশটাই কবিতা হয়ে ওঠে। আমরা বন্ধু ভালোবাসি, বন্ধু ছাড়া থাকতে পারি না। কিন্তু যখন জসীম উদ্‌দীন বলে ওঠে 'সারা গাঁও আমি খুঁজিয়া ফিরিব তোরি নাম বলে বলে' তখনি তা কবিতা হয়ে ওঠে। প্রেম ছাড়া কি জীবন চলে? এক মুহূর্তও চলে না। কেউ যদি বলে আমি প্রেম মানি না সে মানুষ নয়। মানুষ হতেই পাওে না। যখন দাউদ হায়দার লেখেন "এক যাতনায় দুজনেই ব্যথী /আমি দেবদাস তুমি পার্বতী/ কি ব্যথা জানি না বুকে বাজে/ তাই রোদে জলে ভিজে খুঁজি আশ্রয়/ কোথায় আবাস/ তুমি পার্বতী আমি দেবদাস"। রবীন্দ্রনাথ মহাপুরুষ। একটি প্রতিষ্ঠান। নজরুল ইসলামকে আমরা বিদ্রোহী কবি হিসেবে জানি। কিন্তু তার শ্রেষ্ঠ কবিতার আবেগ প্রকাশ পেয়েছে প্রেমের কবিতায়। জীবনানন্দ কতভাবে কবিতাকে দেখেছেন। মাঝ রাতে দেখেছেন, শীতের রাতে দেখেছেন। তার বনলতা সেন আমাদের চারপাশ জুড়ে আছে। বানলতা কি প্রেমের কবিতা? জীবন বাস্তবতার কবিতা, অনেক উজান খেলার কবিতা। কারণ শেষটায় আছে 'সব পাখি ঘরে আসে সব নদী ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন; থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন'। আমরা চিরকাল বনলতার মুখোমুখি বসে থাকি আর এক মুহূর্তের জন্য, দুদন্ডের জন্য দেখি। বাস্তবে কি তাকে দেখি? দেখতে পাই না। দুদন্ড কি চিরকালীন কোন শান্তি? কিন্তু সেই শান্তি আমরা আহরহ খুঁজে ফিরি। কবি ও কথাসাহিত্যিক আসমা চৌধুরীর শুভেচ্ছা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কবিতা উৎসব। 'যে কবিতা শুনতে জানে না সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে' এই স্স্নোগানকে সামনে রেখে সামাজিক-সাংস্কৃতিক মঞ্চ 'পদাতিক'-এর আয়োজনে অমর একুশ এবং নির্জনতার কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় আবৃত্তি উৎসব-২০১৯। ৭ ফেব্রম্নয়ারি বিকাল ৪টা। সবাই যখন ক্লাস, পরীক্ষা, ক্যারিয়ারের পেছেনে ছুটছে। একটু দম ফেলারও ফুরসত পাচ্ছে না, সেখানে আবৃত্তি চর্চার টাইম কোথায়? কিন্তু সেই ধারণাকে বদলে দিয়েছে একদল তরুণ। সূর্য মাথার ওপর থেকে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়তে শুরু করেছে। গুটি গুটি পায়ে মুক্তমঞ্চের দিকে এগিয়ে আসছে অসংখ্য শ্রোতা। একটু সময়ের মধ্যে চারপাশ স্রোতায় ভরপুর। ভালো থাকুক প্রাণ, ভালো থাকুক প্রকৃতি, ভালো থাকুক মানুষ, ভালো থাকুক মানবতা। সার্বজনীন মঙ্গল কামনায় শুরু হয় আবৃত্তি। শুরুতেই সমবেত কণ্ঠে হুমায়ুন আজাদের 'ভালো থেকো' কবিতাটি আবৃত্তি করা হয়। আবৃত্তি উৎসবে বিভিন্ন বিভাগের ১৯ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে একক, দ্বৈত এবং দলগতভাবে অনুষ্ঠিত হয় মনমুগ্ধর আবৃত্তি। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের 'আবার আসিব ফিরে'; কবি মাহাবুবুল আলম চৌধুরীর 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি'; কবি নির্মলেন্দু গুণের 'আমি কারো রক্ত চাইতে আসিনি'; কবি ভবানী প্রসাদ মজুমদারের 'বাংলাটা ঠিক আসেনা'; পূর্ণেন্দু পত্রির কথোপকথন, কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'ভালোবাসি ভালোবাসি; নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর 'ধমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়ে ছিল'; কবি শুভ দাস গুপ্তের 'মেঘ বলল যাবি' সহ আরও অনেক কবিতা আবৃত্তি করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন আবৃত্তিকার। শিক্ষার্থীদের মাঝে সাংস্কৃতিক মনন তৈরি, শিক্ষার্থীদের কবিতা পাঠ এবং শোনায় আগ্রহী কওে তোলাই ছিল এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। রাশিয়ান কবি মায়াকভস্কির একটি কবিতা আছে যেখানে সে নিজেকেই বলেন, মায়াকভস্কি, তোর নিশ্চয় মনে আছে, কারো সঙ্গে হ্যান্ডশেকের পরই হাত ধুত সাবানে, পকেটে সব সময়ই এক টুকরো সাবান রাখত। মায়াকভস্কি পকেটে সাবান নিয়ে ঘুরতেন। তিনি তার কবিতায় রূপকভাবে সাবান দিয়ে মুছতে চেয়েছেন, পরিষ্কার করেতে চেয়েছেন মানুষের মনের ময়লা, সমাজের ময়লা। কবিতা প্রেমী প্রতিটি মানুষ প্রত্যাশা করেন কবিতা পাঠ, আবৃত্তি উৎসবের মধ্য দিয়ে দূও হোক মানুষের মনের ময়লা, সমাজের ময়লা। শাফিকুল ইসলাম। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।