কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়

বিতর্কের আলোর ভুবনে

প্রকাশ | ১৩ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

স্বকৃত গালিব
কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারের পাদদেশে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সদস্যরা
সেই গ্রিক সভ্যতার সময় থেকেই বিতর্কের শুরু। ক্লিওন, ডায়োডটাস,সিসেরোর মতো ব্যক্তিরা সে যুগে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কার্যক্রমের ভালো-মন্দ বিচার করতেন, সুপারিশ করতেন জনসম্মুখে বিতর্ক করে। দুই হাজার বছর পর এসেও রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারক থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সবাই যুক্ত হচ্ছে বিতর্কের সঙ্গে। তাই শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশে সহশিক্ষায় ভূমিকা রেখে চলেছে বিতর্কচর্চা। সরকারের চলমান উন্নয়নের পূর্ণতা দেয়া হবে আগামী পাঁচ বছরে। বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দল সবসময় বলে তার উল্টো কথা। বিরোধী দল দেশে আন্দোলন শুরু করে দেয়। এতে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা থেকে শুরু করে জনজীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। কিন্তু এসব আন্দোলন না করে যদি যুক্তি দিয়ে আন্দোলন হয় তাহলে কেমন হয়। আর ঘটবে না হানাহানি, রক্তপাত সব মিলিয়ে যুক্তি দিয়ে হবে একটা বিষয়ের সমাধান। আর এই প্রয়াসে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ শিক্ষাকার্যক্রম হিসেবে বিতর্ককে বেছে নিয়েছে। যাদের নেতৃত্বে চলবে দেশ, যাদের কাছে যুক্তিই হবে সমাধানের একমাত্র পথ। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি সংক্ষেপে (সিওইউডিএস) বাংলাদেশের বিতর্ক আন্দোলনে সংযুক্ত একটি সংগঠন। 'যুক্তি আমার তরুণ প্রাণে, অরুণ আলোয় দীপ্ত,' এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক পরিষদ ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিতর্ক শুরু হয় ২০১৪-তে। সব প্রতিহিংসার রাজনীতি, হানাহানি, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপসংস্কৃতির ছোঁয়া থেকে সমাজকে মুক্ত করে যুক্তিবাদী শান্তিময় সমাজ গড়ার প্রত্যাশায় চলছেন কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা। ২৩ ফেব্রম্নয়ারি ২০১৪-তে আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতার মধ্যদিয়ে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কের জগতে পথচলা শুরু হয়। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক পরিচালনা করে। এই সংগঠনটি প্রতি মঙ্গলবার বাংলা বিতর্ক সেশন ও প্রতি বুধবার ইংরেজি বিতর্কের সেশন আযোজন করে আসছে। ডিবেটিং সোসাইটি তত্ত্বাবধায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে থাকে। অনেক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে এগিয়ে চলছে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি। ইতোমধ্যে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, চারটি জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা (বিটিভি ও নিউজ ২৪ চ্যানেলে), ক্লাবভিত্তিক বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ প্রায় শতাধিক জাতীয় পর্যায়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্বকারী এই সংগঠনটি। ২০১৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সারা দেশের ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে এই সংগঠনের বিতার্কিকরা। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনুষ্ঠিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সারা দেশের ২৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। এ ছাড়া জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় বড় টিমকে হারিয়ে সাফল্যের নজির রেখে চলেছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে নিয়ে ভারতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিতর্ক পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংগঠন বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের (বিডিএফ) বর্তমান কমিটির উপ-সাংগঠনিক সম্পাদক এই সংগঠন থেকে মনোনীত হয়েছে। এ ছাড়া সংগঠনের বর্তমান সভাপতি আদনান কবির সৈকতের (বিডিএফ) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সদস্য সচিব, সাধারণ সম্পাদক রাজিব হোসেন সানি কো-কনভেনর এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছে। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি আদনান কবির সৈকত বলেন, নিজেকে নিজের চিন্তা-ভাবনাগুলোকে অন্যের কাছে গস্খহণযোগ্য উপায়ে প্রকাশ করার সক্ষমতার দরুন একজন বিতার্কিক প্রচন্ড পরিমাণ আত্মবিশ্বাসী হয় যেটি তার নেতৃত্বদানের গুণাবলিকে দারুণভাবে সমৃদ্ধ করে। রাষ্ট্র্রের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী যেহেতু কর্মজীবনে রাষ্ট্র এবং সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলোতে নিয়োজিত থাকে, তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোর মধ্যে বিতর্কের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিতর্কের এই গুরুত্ব উপলব্ধি করেই কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক বিতর্ক আয়োজনের পাশাপাশি মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তিচর্চার ক্ষেত্র তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রাজিব হোসেন সানি বলেন, প্রগতি সমাজ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মেও যুক্তিনির্ভর চিন্তার কোনো বিকল্প নেই। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি শুধু বিতর্কের চর্চাই করছে না, এর সঙ্গে যুক্তিনির্ভর একটি প্রজন্ম তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে, যারা হবে তথ্যনির্ভর, দক্ষ উপস্থাপক, শুদ্ধ উচ্চারণকারী ও সাংগঠনিক গুণসম্পন্ন। আমরা বিতর্ক চর্চার এই ধারাবাহিকতা ও উদ্দেশ্য ধরে রাখতে পারলে অচিরেই আমরা আমাদের লক্ষ্যপূরণের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অন্যতম সেরা বিতর্ক সংগঠনে আসীন হবো।