চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বাসন্তী রঙে রঙিন ক্যাম্পাস

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

সাইফুল ইসলাম
বসন্তের আগমন গাছে গাছে নতুন ফুল ফুটে। আর প্রকৃতিতে আসে নতুন রূপ। তারই সঙ্গে মানুষের মনে জাগে অন্যরকম এক শান্তির অনুভূতি। আর সেই অনুভূতি প্রকাশ স্বরূপ বসন্তের প্রথম সকালে বাসন্তী রং শাড়ি, কপালে টিপ, হাতে চুড়ি, পায়ে নূপুর, খোঁপায় ফুল জড়িয়ে বেরিয়ে পড়েছে তরুণীর দল। পাঞ্জাবি, ফতুয়া পরা ছেলেরাও সঙ্গী হয়েছে বসন্তবরণের বিভিন্ন আয়োজনে। বসন্তের আগমনকে ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে আড্ডায় ব্যস্ত ছিল। আর তরুণ-তরুণীদের প্রাণের উচ্ছ্বাসে মুখরিত ছিল পুরো ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছিল প্রবীণ আর নবীনের দখলে। বেশির ভাগ তরুণ-তরুণীদের ছবি তুলে সামাজিক গণমাধ্যমে শেয়ার করতে দেখা গেছে। এতে পিছিয়ে নেই ছেলেরাও। বসন্ত অনেক ফুলের বাহারে সজ্জিত হলেও গাঁদা ফুলের রংকেই এদিনে তাদের পোশাকে ধারণ করে তরুণ-তরুণীরা। খোঁপায় শোভা পায় গাঁদা ফুলের মালা। বসন্তের আনন্দযজ্ঞ থেকে বাদ যায় না গ্রাম্যজীবনও। আমের মুকুলের সৌরভে আর পিঠাপুলির মৌতাতে গ্রামে বসন্তের আমেজ একটু বেশিই ধরা পড়ে। বসন্তকে তারা বরণ করে আরও নিবিড়ভাবে। শীতের রুক্ষতার কারণে বহুদিন ক্যাম্পাস জুড়ে ছিল না ফুলের সেই স্নিগ্ধ মাখা সুবাস। বসন্তের আগমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের বাগান আর বোটানিক্যাল গার্ডেনের ফুলেও যেন বসন্তের আগমনী সুর। অনেকে পছন্দের মানুষকে নিয়ে ঘুরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের জায়গায়। চিরচেনা ঝুপড়িগুলো ছিল আড্ডায় মুখর। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আজ নানা আয়োজনে বরণ করে নিয়েছে ঋতুরাজকে। উদীচীর বর্ণাঢ্য এই উৎসবের আয়োজনে বসন্তের প্রকৃতি বর্ণনা ও বন্দনা করা ছাড়াও এ মঞ্চ থেকে বাঙালির জীবনে বসন্তের প্রভাব নানা ব্যঞ্জনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আতিকা চৌধুরী আদ্রিতা, আফিয়া ফারজানা, তুলতুলে রামিছা এবং তৌসি বসন্তকে বরণ করতে নিজেদের উদ্যোগে বসিয়েছে মেহেদী দেয়ার স্টল। যেখানে তরুণীরা এসে লাগিয়ে নিচ্ছেন ইচ্ছে মতো মেহেদি। লোকপ্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী চয়ন চন্দ্র বলেন, আমরা সবসময় ক্যাম্পাসে আসি, কারো সঙ্গে তেমন ছবি তুলা হয় না। বসন্তের এই একটা দিন সবাই একসঙ্গে পাঞ্জাবি, শাড়ি পরে আসি, ছবি তুলি যাতে স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতে পারি। তা ছাড়া এই বসন্তটা আমাদের জন্য ক্যাম্পাসের শেষ বসন্ত। খুব মিস করব ক্যাম্পাসের এই দিনগুলো। যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২য় বষের্র শিক্ষার্থী ওহিদা প্রান্তি বলেন, বসন্ত আসলে আমার কাছে ইদের মতো মনে হয়। সকাল উঠে নতুন হলদে রংয়ের শাড়ি পরে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়, ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করি, ছবি তুলি, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করি। সব মিলে এই দিনটা খুব আনন্দে কাটে। বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে আমরা পালন করি 'পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব' হিসেবে। এ উৎসব এখন পরিণত হয়েছে বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে। বসন্তের প্রথম মুহূর্তকে ধরে রাখতে তাই তো সবাই মেতে ওঠে নানা উৎসব ও সাজে। বাসন্তি রঙের শাড়িতে বাঙালি নারীকে অপরূপ দেখায়। বসন্তের শুভেচ্ছা জানিয়ে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বসন্তের এই দিনে আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীরা অন্যায়-অবিচার-দুর্নীতি ও সন্ত্রাসকে প্রতিহত করে সব কুসংস্কার ও অন্ধকার শক্তিকে নিধন করে আলোর প্রজ্বালন ঘটিয়ে দেশ তথা বিশ্বকে আলোকিত করবে এটিই হোক বসন্তের শপথ।