জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

চায়ের রাজ্যে ইতিহাসের খোঁজে

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

মাহবুব আলম
অতীত বেঁচে থাকে ইতিহাসের পাতায়। তাই অতীত সম্পর্কে জানার আগ্রহ সবার। কারণ অতীতের শিক্ষাই বর্তমানকে আলোকিত করে। এ জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস পাঠের চাহিদা এখনও আছে। প্রতি বছরই শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এই বিষয়ে ভর্তি হয়। তাইতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ 'ইতিহাস'। বিভাগটি প্রতি শিক্ষাবর্ষের শেষের দিকে এসে ৪ বছরের অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞান মাঠপর্যায়ে যাচাই করতে মাঠ গবেষণায় পাঠায়। তারই ধারাবাহিকতায় ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পাঠানো হয়েছে 'চায়ের রাজ্য সিলেটে'। তাদের গবেষণা করতে হবে 'সিলেটের সুফি ঐতিহ্য ও মণিপুরীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা' নিয়ে। এই গবেষণা কর্মে বিভাগটির সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ আবু তোয়াব শাকির, আনিসা পারভিন জলি এবং সহকারী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন ও সুলতানা আক্তার নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিক্ষকদের নেতৃত্বে ২৫ ফেব্রম্নয়ারি ভোর ৪টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বাসে রওনা দেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর কমলাপুর থেকে ট্রেনযোগে হযরত শাহজালালের পুণ্য ভূমির দিকে যাত্রা শুরু হয়। ট্রেনটি পাহাড়, চায়ের বাগান ও লেবু বাগানের কোল ঘেঁষে বিকেলে এসে পৌঁছাই ৩৬০ আওলীয়ার দেশে। খাওয়া-দাওয়া শেষে একটু বিশ্রাম নিয়ে সব শিক্ষার্থীরা যায় হযরত শাহজালাল (র) এর মাজারে। সেখানে প্রবেশ করেই মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হয় মাঠ গবেষণা কার্যক্রম। তারপর মাজারের নান্দনিক স্থাপনা দেখা, বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণসহ নানা জনের সাক্ষাৎকার ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করে শিক্ষার্থীরা। দিন শেষে সন্ধ্যা নামলে প্রথম দিনের তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম শেষ হয়। ক্লান্ত শিক্ষার্থীরা রাতের খাওয়া শেষ করে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়। পরের দিন ভোর সাড়ে ৭টায় শিক্ষার্থীরা বেড়িয়ে পড়ে পুণ্য ভূমিতে অবস্থিত অন্য সুফিদের মাজার পর্যবেক্ষণে। হযরত শাহ পরাণ (র.) এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম। তারপর একে একে হযরত শাহ্‌ সুন্দর (র.), হযরত শাহ্‌ গাজী বোরহান উদ্দিন (র.), হযরত মানিক পীর (র.) ও সৈয়দ চাষনী পীর (র.) এর মাজার জিয়ারত ও পর্যবেক্ষণ করে তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্য দিয়ে "সিলেটের সুফি ঐতিহ্য" সম্পর্কে মাঠ গবেষণা কর্মের পরিসমাপ্তি ঘটে। পরের দিন "মণিপুরীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা" সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে রাতে প্রস্তুতি সভা করা হয়। প্রস্তুতি সভার আলোকে ভোর ৬টায় বাসযোগে শিক্ষার্থীরা রওনা হয় মণিপুরীদের অঞ্চল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে। সেখানে পৌঁছে প্রথমে মণিপুরী কালচারাল কমপেস্নক্সে স্থানীয় তাঁত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীরা। তাঁত শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলাপচারিতায় উঠে আসে তাঁত শ্রমিকদের জীবন ব্যবস্থা। এরপর স্থানীয় একটি সনাতন মন্দিরে শিক্ষার্থীরা উপভোগ করে মণিপুরী নৃত্য ও গান। তারপরেই শিক্ষার্থীরা চলে যায় মণিপুরীদের গ্রামে। সেখানে মুণিপুরী সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জানার চেষ্টা করে- তাদের বর্তমান অবস্থা, পরিবেশ ও জীবনযাপনের চিত্র। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানায়, "মুণিপুরীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম বর্তমানে তাদের অবস্থা ভালো। শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ। অর্থনৈতিক অবস্থাও সচল। স্থানীয় বাঙালিদের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ। কৃষি ও তাঁত শিল্প তাদের জীবিকার প্রধান মাধ্যম।" এর মধ্য দিয়ে গবেষণাকর্মের সমাপ্তি ঘটে। তারপরে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে শিক্ষার্থীরা ছুটে যায় 'লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে'। যেখানে মনোমুগ্ধকর সময় কাটানোর পর ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মুরাদ হোসেনের বাসায় খাওয়া- দাওয়া করে সবাই। তারপর পুরো রাস্তা জুড়ে শাহান, ফাহাদ, ইমরান, তপু, জুম্মান, রাব্বি, মাহবুব রহমান, রুহুল, রাসেল, কাদের, আমিনুল, জাহিদ, ফারুক, কাজল, রমজানদের কণ্ঠে সংগীত চর্চা চলে। এতে সারাদিনের ক্লান্তির চাপ কাটিয়ে নেমে আসে শান্তির বাতাস। পরেরদিন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য উপভোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ৪ দিনের মাঠ গবেষণাকর্ম। বিকাল ৩টায় ট্রেনযোগে চায়ের রাজ্য ত্যাগ করে শিক্ষার্থীরা। ট্রেনে ফানবক্স, লটারি ও শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে অসাধারণ সংগীত চর্চা মনোমুগ্ধকর মাঠ গবেষণাকর্মের স্মৃতির পাতায় আরেকটা অধ্যায় যোগ করে।