জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

উলস্নাস আর উচ্ছ্বাসের দিন

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

মো. ইউসুফ জামিল
চড়ুইভাতির আয়োজন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
'তাসলিমা আপুর দেশেরে, বিয়ার বাদ্য আলস্না বাজে রে'। আপুর বিয়ের সানাই নিজ বাড়িতে বাজলেও তার প্রতিধ্বনি ব্যাপক প্রক্রিয়াই চলে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির দরজায়। দাওয়াত না পেয়ে বন্ধু, বড় ভাই, ছোট ভাইসহ সব মহলে মনের সমুদ্রে ভূমিকম্পের ফলে ঘূর্ণিঝড় 'তাসলিমা' বয়ে যাচ্ছে। অনেকে পেটকে খুশি করতে না পারার আর্তনাদে বুক ভরে কান্নার বন্যা বয়ে চলছে। রাগ ভাঙানোর ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা আপুকে খুবই দুশ্চিন্তায় ফেলে দিল। লাইব্রেরিতে পড়তে পড়তে রাগ ভাঙানোর প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা পেয়ে গেলেন আপু। পরিকল্পনা করলেন চড়ুইভাতির। সবাই হাসি মুখে তা মেনেও নিল, তবে থাকতে হবে ব্যতিক্রমী খাবারের আয়োজন। যোগ হলো রাজহাঁস ভোজন। আগের দিন রাজহাঁসের খোঁজে নিজের সঙ্গে থাকা বাইকটি নিয়ে রোমান্টিক পুরুষ শামীম ভাই ছুটলেন সাভার নামা বাজারের পথে। সঙ্গে শ্যামলা বর্ণের ছিপছিপে গড়নের সরল মনের ব্যক্তিত্ব নোমান এবং শোভন ভাই। এদিকে বাইকে তেল শেষ হয়ে গেলেও রাজহাঁসের দেখা পাওয়া খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক কষ্টে কিলিয়ে কাঁঠাল পাকিয়ে সন্ধান মিললো একটি রাজহাঁসের। নোমান ভাই রাজহাঁসটি নিজের কোলে বসিয়ে মনের সুখে ফিরে আসলেন ক্যাম্পাসে। পরদিন একে একে দুপুর ২টায় সবাই উপস্থিত হতে থাকল ক্যাম্পাসে অবস্থিত জিমনেসিয়ামের সামনে। জলাশয় এবং সবুজ বৃক্ষে ঘিরে রয়েছে জিমনেসিয়ামের চারপাশ। দুপুরের হালকা মিষ্টি রোদের সঙ্গে বইছে শীতের হাওয়া। এর মাঝে রাফি, হাসিব এবং ইউসুফ ভাই দক্ষ হাতে নেমে পড়েছে চুলা বানানোর যুদ্ধে। অন্য দিকে নিপুণ হাতে রান্নার সব উপকরণ ধোয়া, কাটা-কাটিতে ব্যস্ত সাংসারিক মেয়ে জ্যোতি। সবাই নিজ কাজে ব্যস্ত থাকলেও সবার শ্রবণেন্দ্রিয় ভোজন রসিক, সদা হাস্যোজ্জ্বল রাজন ভাইয়ের পানে। উত্তেজনা পূর্ণ গল্পের ছোঁয়ার হাসিতে মাতিয়ে রেখেছেন সবাইকে। এরই মাঝে মডেল কন্যা রোজা নিজের সুন্দর মুহূর্তগুলো ক্লিক ক্লিক শব্দের সেলফিতে ফ্রেমবন্দি রাখতে ব্যস্ত সময় পার করছে। সালাম ভাইকে সঙ্গে নিয়ে রাজহাঁস প্রক্রিয়াকরণ এবং জ্বলন্ত আগুন সামনে নাড়াচাড়ার মাধ্যমে রান্নায় নিজেকে সপে দিয়েছেন রাহাত ভাই। রাত তখন সাড়ে ৮টা। রাঁধুনি আয়শা আপুর হাতের ইশারায় একে একে শেষ হলো খিচুরি, রাজহাঁস এবং ডিম রান্না। ভুরি ভোজন শেষে ঘড়ির কাটা রাত ১০টা বলে দিল- এবার আনন্দের মুহূর্তগুলো ইতি টানার পালা। অবশেষে ক্যাম্প ফায়ারের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বৌ ভাতে রাজহাঁস। উলস্নাস আর উচ্ছ্বাসে ভরা দিন শেষে প্রাপ্তি আমৃতু্য স্মৃতি।