বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

আলো-ছায়ার খেলায় সৌন্দর্যের উপমা 'বিজয় সড়ক'

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ইভান চৌধুরী
নির্মল বাতাস। পিচঢালা লাল ইট আর পাথরের তৈরি কংক্রিটের পরিষ্কার একটি রাস্তা। রাস্তার দুই ধারে সুবিশাল গগনশিরীষ। গাছগুলো যেন একে অপরে আলিঙ্গন করে আছে। এক অদ্ভুত আলো-ছায়ার খেলায় সৌন্দর্যের উপমা হয়ে জেগে আছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এই রাস্তাটি। সৌন্দর্যমন্ডিত এই রাস্তার নাম 'বিজয় সড়ক'। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর ফটক দিয়ে প্রবেশের পর এগিয়ে বামদিকে হাঁটলেই চোখে পড়বে সুবিস্তৃত সড়কের দুই ধারে দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল গাছ। দর্শনার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাইকে আকর্ষণ করে বিজয় সড়কের সৌন্দর্য। বিজয় সড়কের এমন সৌন্দর্যের পেছনে কার অবদান? সেই সূত্র খুঁজতেই উঠে আসে ৭৫ একরের ক্যাম্পাসে ৪০০ প্রজাতির এবং প্রায় ৩৭ হাজার গাছের কারিগর বৃক্ষমানব এক শিক্ষকের নাম। তিনি রিভারাইন পিপলের পরিচালক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডক্টর তুহিন ওয়াদুদ। এ ছাড়াও জানা যায়, সেই সময় সবুজের পথে সংগঠনে যুক্ত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহফরিদ, নাজুসহ বেশ কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীর কথা। তারাই এই গাছগুলো নিয়ে এসেছেন। গাছগুলোর নাম গগনশিরীষ। তৎকালীন তৃতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর এ কে এম নুরুন্নবীর সময় এই গাছগুলো লাগানো হয়েছিল। বর্তমানে গাছগুলো দেখলেই যে কারও মন ভরে যাবে। জানা যায়, শাহ্‌ফরিদ ও নাজু গাছ লাগানো থেকে শুরু করে গাছে পানি দেওয়া এবং পরিচর্যা সবটাই করেছেন। বিজয় সড়ক তাদের অবদানকে অম্স্নান করে রেখেছে। এই রোডের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শফিক বলেন, ক্যাম্পাসে সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলতে এই সড়কের জুরি মেলা ভার। তাইতো সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে। বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে গগনশিরীষের ছায়ায় না হাঁটলে যেন ক্যাম্পাসে থাকার সার্থকতা মলিন হয়ে যায়। ক্যাম্পাসে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিজয় সড়কে হাঁটতে থাকা মানিক-সুমি দম্পতির কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, এই সড়কে হাঁটার মজাটাই আলাদা, দুই ধারে লম্বা অপূর্ব গাছ, পশ্চিমে প্রশাসনিক ভবনের সামনের নেমপেস্নট, পূর্বে শহীদ মিনার। এর সৌন্দর্য হাঁটার আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সব মিলে এখানে এসে আনন্দ পাই। বিজয় সড়ক সম্পর্কে আলাপকালে অধ্যাপক ডক্টর তুহিন ওয়াদুদ বলেন, বিজয় সড়কের দুই সারিতে লাগানো হয়েছে গগণশিরীষ। দুই বছর পর বিজয় সড়ক রোডের পশ্চিমে লাগানো হয়েছিল লম্বু গাছ। একটু লক্ষ্য রাখতে বোঝা যাবে, গগণশিরীষ পাতাগুলো একটু পাতলা ও ঘনত্ব তুলনামূলক কম। তাই দুই পাশে সবুজের একটা গভীর রেখাপাত তৈরি হয়েছে। রংপুরের তারাগঞ্জ থেকে এই লম্বু গাছগুলো আনা হয়েছিল। লম্বু গাছগুলো পেতে সহায়তা করেছে নরমাল এডুকেশন সেল। স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে এই রোডে ৫০টি নোহিতিতা উদাল গাছ লাগানো হয়েছিল। এ ছাড়াও এই সড়কের পূর্বদিকে অনেক আনকমন গাছ লাগানো হয়েছে। যেমন- কাইজিলিয়া, ঝুমকাভাতি, জাবাটিকাবা, কুম্ভি, ছোট হলুদ, বিজল, সিভিট এবং কনকচূড়া। এই দুর্লভগাছগুলো পেতে সহায়তা করেছিলেন ঢাকায় তরুপলস্নব নামে একটা সংগঠন। সেই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোকাররম হোসেন। রাস্তাটির নাম বিজয় সড়ক রোড কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে জানা যায়, যে সময় গাছগুলো লাগানো হয়েছিল তখন বিজয়ের মাস চলছিল। পরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত করে কিছু শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মিলে এই সড়কের নাম দিয়েছিল বিজয় সড়ক।