ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শীত নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

বরাবরের মতোই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শীতের তীব্র হাওয়া ও মনোহর কুয়াশার আবরণে ঢেকে আছে। সকাল-সন্ধ্যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঘন কুয়াশায় শীতের আমেজ পোহাতে চাদর মুড়িয়ে ঘুরে বেড়ায় ক্যাম্পাসের অলিগলিতে। কিছু শিক্ষার্থী শিশির ভেজা শিউলি ফুলের শুভ্রতা কিংবা ঘাসের অগ্রভাগে সূর্যের কিরণে ঝলমলিয়ে থাকা শিশির ফোঁটার মুগ্ধতা অনুভবে মগ্ন থাকে। আবার অনেকে টং দোকানের এক কাপ লাল চা হাতে শীতের মায়াবী রূপ দেখতে দেখতে চায়ের বাষ্পের মতো অনুভূতির জগতে উড়ে যায়। সমভাবাপন্ন শিক্ষার্থী রাস্তার মোড়ে ঠান্ডায় কাঁপতে থাকা অভাগাদের গায়ে চাদর মুড়িয়ে দেওয়ার জন্য বস্ত্র অন্বেষণ করে যায়। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী যারা ইবি প্রাঙ্গণে শীতপিঠা, চড়ুইভাতি, কুহেলিকা উৎসবের আয়োজনসহ নানা ভাবনায় মাতোয়ারা হয়ে থাকে এমন কয়েকজনের অনুভূতি তুলে ধরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াসিফুর রহমান

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চারদিকে ছড়িয়ে থাকে শিউলিফুলের ঘ্রাণ মায়েশা মালীহা চৌধুরী জার্নালিজম অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন 'কুহেলিকা চাঁদর জড়ালো ঘন হলো চারপাশ শুভ্র আলো শুভ্র ছায়া শুভ্রতা একরাশ।' শুষ্ক, রুক্ষ পরিবেশে গাছের পাতা ঝরে যায়, আবার অনেক গাছে জন্ম নেয় নতুন পাতা, পথে ঘাটে পড়ে থাকে শিউলি ফুল। এ যেন এক নতুন প্রকৃতির উদ্ভব। সকালে শিক্ষার্থীরা কুয়াশার চাঁদরে মুক্ত বাতাসে পায়চারি করে থাকে, চারদিকে ছড়িয়ে থাকে শিউলিফুলের ঘ্রাণ। অনেকে এই কুয়াশার ভিড়ে বের হয় খেজুরের রসঅভিযানে। ইবিতে শীতের সময় একটি নতুন উন্মোদনার আবির্ভাব হয়। শীতের সকালে চায়ের দোকানগুলো হয়ে ওঠে আড্ডার আসর তানভীর হাসান রবিন (টু্যরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট) হিম শীতল বার্তা নিয়ে শীতের আগমন, ফোঁটায় ফোঁটায় মুক্তো দানার নিঃশব্দ পতন। কি যে এক মনোরম-স্নিগ্ধকর-প্রাঞ্জল অনুভূতি, শীত মানেই উৎসব! বাংলার আবহমান সংস্কৃতি। ষড়ঋতুর রূপ-বৈচিত্রে বহমান নিবিড় প্রভাব, বাংলার বুকে চিরচেনা এই শীতের আবির্ভাব। তুষারাবৃত সিন্দু- দূর্বা ঘাস আর ধানের ডগায় শিশির বিন্দু।' ঐতিহ্য আর শিক্ষার এক মধুর সংমিশ্রণ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের ক্যাম্পাস জীবনে শীতের আগমন যেন আনন্দ, উৎসাহের বার্তা নিয়ে হাজির হয়। শীত আসতে না আসতেই ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে চড়ুইভাতি ও শীতের পোশাকের ধুম। শীতের সকালে চায়ের দোকানগুলো হয়ে ওঠে আড্ডার আসর। কাপে কাপ গরম চায়ের সঙ্গে পড়া, গল্প, গান- তবে সবার আগে সামাজিক দায়িত্ববোধের সঙ্গে শীতকে আরও সুন্দর আর সহনীয় করে তোলাই হোক আমাদের প্রধান লক্ষ্য। শীতের রুক্ষতা ইবির সৌন্দর্য একটুও কমাতে পারেনি তামান্না তাসনীম তারিন ইংরেজি বিভাগ প্রকৃতিকে কুয়াশার চাঁদরে জড়িয়ে শীতের আবির্ভাব ঘটল ইবিতেও, তবে হঁ্যা, শীতে আমেজ যেন ইবিতে একটু আগেই এসে বসে প্রতি বছর। চারদিকে কুয়াশা, শীতের কনকনে হাওয়া এসব কিছুই যেন নতুন অনুভূতির সঞ্চার করে মানবমনে। শীতের রুক্ষতা তবে ইবির সৌন্দর্য একটুও কমাতে পারেনি। সকালের আলো-আঁধারি কাটলেই আবার সেই চিরচেনা সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস। প্রতি শীত এভাবেই নতুন কিছুর সূচনা করুক ইবির বুকে। পুরো ক্যাম্পাসকে অদৃশ্য এক সাদা চাঁদরে ঢেকে রেখেছে সাঈদুল কবির স্বাধীন (টু্যরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট) ভোর যখন ঠিক ছয়টা বেজে পনের মিনিট, প্রতিদিনের মতো বেরিয়ে পড়লাম প্রিয় ক্যাম্পাসে শীতল হাওয়ায় কুয়াশায় জড়ানো সকাল উপভোগ করার জন্য। বলছিলাম হেমন্তের শেষের শীতের সকালের কথা। এ যেন পুরো ক্যাম্পাসকে অদৃশ্য এক সাদা চাঁদরে ঢেকে রেখেছে কেও। শীতের দিনে ভোর হলেই একশ' পঁচাত্তর একর ক্যাম্পাসের রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যার অন্যতম কারণ হলো ফুলে ফুলে ভরা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য, আশপাশের অতিথি পাখিদের কোলাহল ইত্যাদি। ইবি ক্যাম্পাসে শীত আসলে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো বিকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় পিঠাপুলির দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় জমানোর ব্যাপার। যা সবাইকে নিজের মমতাময়ী মায়ের হাতের শীতের সন্ধ্যায় পিঠা খাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। শীতের সন্ধ্যায় জিয়া মোড় মেতে ওঠে পিঠার আমেজে মোঃ জিয়াউল আহসান (টু্যরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট) প্রকৃতির সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক অভেদ্য। প্রকৃতিতে ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে জীবনের পরিবর্তন হয়। বসন্ত আসলে পাখিদের আনন্দ বেড়ে যায়। শুরু হয় কোকিলের গান তেমনি শীত আসলে এক শ্রেণির মানুষের মনে জেগে ওঠে আনন্দ, লক্ষ্য করা যায় শীতের আমেজ। এক শ্রেণি বলার কারণ শীত সবার জন্য আমেজ নিয়ে আসতে পারে না, হয়তো এটা শীতের ব্যর্থতা না হয় আমাদের। ঠিক তেমনই ইবিতে শীতের সময়টা অনেক ধুমধামে উপভোগ করি। শীত আসলেই মফিজলেক এবং পেয়ারা তলায় শুরু হয় পিকনিকের মহাআমেজ। শীতের সন্ধ্যায় জিয়া মোড় মেতে ওঠে পিঠার আমেজে। অন্যদিকে সেচ্ছাসেবী সংঘদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় অসহায় দুস্তদের মাঝে শীতবস্ত্রসহ অনেক বড় বড় প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত দিন কাটাতে। ডিসেম্বরের শেষে শীতকালীন ছুটি পরিবারের সঙ্গে কিছু দিন শীত উপভোগ করার সুযোগ আসায় শিক্ষার্থীদের মনের অবস্থা শীতের আনন্দটাকে যেন পরিপূর্ণতা দান করে। সব মিলিয়ে কুয়াশায় ঢাকা ইবি ক্যাম্পাস দেখলে যে কেউ প্রেমে পড়তে বাধ্য।