স্বপ্নপুরীতে আমরা ক'জন

প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

মো. জাহানুর ইসলাম
মানুষের চিন্তা-ভাবনার কোনো শেষ নেই। কে কখন কীভাবে চিন্তা-ভাবনা করছে, তা আগে থেকে ঠাহর করা বড্ড কঠিন। তবে একবার কোনো চিন্তা মাথায় এলে, তা আর সহজে মাথা থেকে নামতেই চায় না। আমাদের এবারের ভ্রমণটাও ঠিক তেমনি একটা চিন্তা-ভাবনার সফল বাস্তবায়ন। ২০২৩ সালের প্রায় মাঝামাঝি সময় বন্ধু বেলালের মুখ থেকে আমি প্রথম জানতে পারি আমাদের স্কুলজীবনের ছেলে বন্ধুরা নির্দিষ্ট এক তারিখে একসঙ্গে কোনো একটি বিনোদন স্পর্টে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। তারিখ ও স্থান নির্ধারিত হলে আমাকেও যেতে হবে বলে সে জানায়। আমার পক্ষে এটা মোটেও সহজ কোনো বিষয় ছিল না। কেননা, আমার স্কুলের বন্ধুরা নিজ জেলা রংপুরে অবস্থান করলেও বন্ধুদের মধ্যে আমি একা থাকি ঢাকা শহরে। তাই আমার বাস্তবতা বিবেচনা করে আমাকে ছাড়াই তাদের পরিকল্পনা তৈরি করতে বলি, কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা আমাকে ছাড়া যাবে না। একপর্যায়ে তাদের জানিয়ে দেই ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সময় বাড়িতে আসব, তখন কোথাও ঘুরতে গেলে কেমন হয়। তারা আমার প্রস্তাবে রাজি হয়। তখন থেকেই শুরু হয় পরিকল্পনা। ২৩ শেষে ২৪ শের পহেলা জানুয়ারি বাড়িতে আসি এবং তা বন্ধুদের জানিয়ে দেই। সবার মতামতের ভিত্তিতে পরিকল্পনা হয় নির্বাচনের পরে ১২ জানুয়ারি শক্রবার দিনাজপুরের স্বপ্নপুরীতে বেড়াতে যাব। পহেলা জানুয়ারি, ২ জানুয়ারি এভাবে গুণতে গুণতে এক দিন চলে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত ১২ জানুয়ারি। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৮টার দিকে যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও প্রচন্ড কুয়াশা ও ঠান্ডা কারণে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৪টা মোটর সাইকেলে আটজন বন্ধু স্বপ্নপুরীর উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ি। দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী আমাদের জন্মভূমি রংপুর শহর থেকে ৪০-৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হলেও পথে আরও কয়েকটি জায়গায় যাত্রাবিরতি দিলে সেখানে পৌঁছতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। দুপুর ১টার কিছু পর আমরা বেশ কয়েক দশক থেকে নান্দনিক সৌন্দর্যের বিনোদন জগত হিসেবে পরিচিত, উত্তরবঙ্গের অন্যতম ভ্রমণ স্পট খ্যাত এবং কৃত্রিম লেক, পাহাড়, উদ্যান, গাছগাছালি, ফুল ও সবুজের সমারোহে ভরপুর স্বপ্নপুরীর প্রবেশ পথে পৌঁছাই। প্রবেশ পথের রাস্তার পাশে অবস্থিত হোটেলগুলোর একটিতে সাশ্রয়ী মূল্যে গরুর মাংস, সবজি ও ডাল দিয়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ করি। খাবার গ্রহণ শেষে নির্ধারিত মূল্যের টিকিট কেটে দুপুর ২-৩০টার দিকে স্বপ্নপুরীতে প্রবেশ করি। প্রবেশ পথে বিশাল আকৃতির সাদা ধব ধবে দুটি পরী দু'ডানা প্রসারিত ও একহাত উঁচু করে আমাদের অভ্যর্থনা জানায়। প্রবেশ পথ পেরিয়ে দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি দেবদারু ও নারিকেল গাছের মাঝের রাস্তা ধরে স্বপ্নপুরীর গহিনে প্রবেশ করি। দলের সব সদস্যই পূর্বে এক বা একাধিকবার এই বিনোদন স্পটে এসেছিলাম বলে স্বপ্নপুরীর কোথায় কী আছে, এর প্রায় সবটাই আমাদের জানা। পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শুরুতেই একটি ক্যামেরা ভাড়া করি। ভাড়াকৃত ক্যামেরায় নিজেদের পছন্দ মতো জায়গায় পছন্দের স্টাইলে একক ও দলগত ছবি তুলি। আর নিজেদের স্মার্ট ফোনের ক্যামেরা তো ছিলই। সব মিলিয়ে শত শত ছবিতে নিজেদের ফ্রেমবন্দি করি। ছবি তোলা শেষ হলে পুরো এলাকা একবারের জন্য ঘুরে দেখি। এই ঘুরাঘুরির মাঝেই বন্ধু সুজন, রাজ, আজাদ, বেলাল, মোশাররফ, শরিফুল ও মনির পরিবারের জন্য কেনাকাটা করার উদ্দেশে ভেতরে অবস্থিত মার্কেটে প্রবেশ করে। দলের অনেকেই নিজেদের পছন্দের জিনিসপত্র ক্রয় করে, কেউ কেউ আবার না কিনেই মার্কেট থেকে বের হয়ে আসি। এভাবেই দেখতে দেখতে সময় শেষ হয়ে আসে। নিজেদের নিড়ে ফিরে যাওয়ার তাগাদা অনুভব করে আসরের আজানের একটু পরে সবাই আনন্দচিত্তে সেখান থেকে বের হয়ে আসি। সেখান থেকে আশুরার বিল হয়ে বাদ মাগরিব বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করি। বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ৯টা বেজে যায়। আর এভাবেই শেষ হয় আমাদের সেদিনের স্বপ্নপুরী ভ্রমণ।