সম্প্রীতির মেলবন্ধনে চড়ুইভাতি

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

মো. রুহুল আমিন
সবুজ ছায়াঘন সুনির্মল প্রকৃতিতে শীত আসে, প্রকৃতিতে সৃষ্টি হয় নতুন এক অধ্যায়ের। ধরা দেয় চারদিকে ঘন কুজ্ঝটিকায় ঘেরা নতুন এক উপমাহীন সৌন্দর্য। সূর্যের শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পূর্বেই সকাল ৯টায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা হাজির হলাম মফিজ লেকে। দক্ষিণের বিপরীত থেকে আসা মৃদু হাওয়া আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যে শীতের প্রাবল্য বাড়াতে শুরু করল। এর কিছুক্ষণ পর কুজ্ঝটিকা ভেদ করে ফুটে উঠল আলোকরশ্মি। সবুজ ঘাসের ওপর জমে থাকা শিশির বিন্দুর চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছিল। পাশেই সোনা ভরা ফসলের মাঠে কৃষকরা ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে কাজে ব্যস্ত। বলছিলাম আমাদের চড়ুইভাতির গল্প। যার শুরু হয়েছিল বন্ধমহলে আলোচনার মাধ্যমে। অনেকদিন হলো আলোচনা চলছিল পরীক্ষা তো শেষ হলো সবাই মিলে একটা চড়ুইভাতির আয়োজন করা যাক। এটা নিয়ে বন্ধুবান্ধবের মধ্যে আলোচনা মাঝে একদিন ক্লাসে অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর সাদাত স্যার আমাদের বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক প্রোগ্রাম করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। আমাদের মধ্যে কয়েকজন দায়িত্ব নিলেন সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করার জন্য। আগেরদিন অমিত, মেহেদী, তন্ময়, সাদিয়া, মীম এবং লায়লাসহ কয়েকজন মিলে আমাদের আয়োজনের সব বাজার শেষ করেছিল। সোহেল ও জহির সকাল বেলা ডেকোরেশনের এবং রান্নার হাঁড়ি, পাতিলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে হাজির হলো। দশে মিলে করি কাজ হারিজিতি নাহি লাজ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমরা সবাই কাজে লেগে পড়লাম। ছেলেরা রান্নার জিনিসপত্র ধোঁয়া এবং পানি আনার কাজে লেগে পড়ল আর মেয়েরা বিভিন্ন কাটাকাটির কাজ করতে লাগল। মেহেদী, মীম, সম্পাসহ কয়েকজন রান্না করতে লাগল বাকিরা রান্নার সহযোগিতার পাশাপাশি বিভিন্ন গান গাইতে, গানের তালে নৃত্য ও আড্ডা দিতে থাকে। অনেকেই বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছেলেরা পাঞ্জাবি ও মেয়েরা শাড়ি পরে ছবি তুলতে ব্যস্ত। দুপুরের খাবার নিদিষ্ট সময় হয়ে গেছে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক ড. ধনঞ্জয় কুমার স্যারের জন্য অপেক্ষা করতে ছিলাম। চারদিকে পোলাও এবং রোস্টের ঘ্রাণে খাবারের তাড়না আরও বাড়তে লাগল। আমাদের মাঝে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদ্বয় অধ্যাপক ড. মো. জাকারিয়া রহমান এবং ড. মুর্শিদ আলম স্যার উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে ছিলেন। অনেক শিক্ষকের সাথে ছবি তুলে স্মৃতি হিসেবে নিজের কাছে আবদ্ধ রাখতে ব্যস্ত। আমরা সবাই মিলে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সাথে গ্রম্নপ ছবি তুলি। দুপুরের খাবার খাওয়া জন্য সবাই একসাথে বসে পড়ি। আমি, মামুন, মেহেদী, সজিব, অমিতসহ কয়েকজন খাবার বণ্টনের কাজ করি। অধ্যাপক ড. ধনঞ্জয় কুমার স্যার আমাদের খোঁজ নেন যে আমারা যারা বণ্টন করছি তাদের জন্য খাবার আছে কিনা। শিক্ষকরা আমাদের রান্নার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন যে, তোমরা তো সুন্দর রান্না করেছ। ভবিষ্যতে বড় রেস্টুরেন্ট দিয়ে দিতে পারবা। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মেয়েরা বালিশ এবং ছেলেরা ঝুড়িতে বল ফেলার খেলায় মেতে উঠি। খেলা শেষে আমাদের সর্বশেষ আকর্ষণ লটারির ড্র এবং খেলায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী আয়োজনের শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে কেটে যায় জীবনের সোনালি দিনগুলো। সবাই নিজের ভবিষ্যৎ তৈরি করতে দূরদূরান্ত থেকে পাড়ি জমিয়ে আসে। যেখান বন্ধুবান্ধব মিলে প্রতিদিন তৈরি হয় হাজারো স্মৃতি। কয়েক বছর নিজেরা একসাথে থাকার পর আবারো হয়তো যে যার মতো ছড়িয়ে পড়বে আপন ঠিকানায়। কিন্তু বন্ধুবান্ধব সিনিয়র জুনিয়রের সাথে এই আড্ডাগুলো রয়ে যাবে স্মৃতির মণিকোঠায়।