ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

আগামীর পথে এগিয়ে যেতে

প্রকাশ | ১০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

রায়হান শরীফ
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে শিক্ষার্থীরা
গত ৭ এপ্রিল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৬ষ্ঠ সমাবর্তন হয়ে গেল পুলিশ কনভেনশন সেন্টার, মিরপুর-১৪। ওইদিন সকালে সদ্য উত্তীর্ণ হওয়া গ্র্যাজুয়েটদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে কনভেনশন হলের বিশাল প্রাঙ্গণ। তাদের পরনে ছিল সমাবর্তনের কালো গাউন ও ক্যাপ। অনুষ্ঠান শুরু হওয়া কথা সকাল ১০টায়। কিন্তু সকাল ৮টা থেকে তাদের সমাগম ঘটতে থাকে। হলের সামনে বিশাল চত্বরে কেউ সেলফি, অনেকে গ্রম্নপ হয়ে ছবি তুলতে থাকেন ভবিষ্যৎ জীবনকে স্মৃতিময় করে তুলতে। হঁ্যা, ওইদিন জীবনকে স্মৃতিময় করে তোলার ক্ষেত্র বটে। অধ্যায়ন শেষে সবাইকে তো কর্মময় জীবনে প্রবেশ করতে হবে। এরপর সাংসারিক জীবন। তখন আর বন্ধুদের সান্নিধ্য নেয়া বা দেয়া সম্ভব হবে না। কারণ, জীবন তখন ব্যস্ত ও কঠিন হয়ে পড়ে। তখন শুধু স্মৃতিই ভরসা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিভাগ অনুযায়ী গ্রাজুয়েটরা সারিবদ্ধভাবে হলে প্রবেশ করতে থাকে। প্রবেশ মুখে তাদের অভ্যর্থনা জানান, অনুষদের ডিনরা। কানায় কানায় হলটি ভরে যায়। শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও অত্র ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত সভাপতি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, এমপি। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যত শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, এ দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যেমন বৈপস্নবিক পরিবর্তন ঘটেছে তেমনি উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে সরকার দেশকে বিশ্বের দরবারে একটি স্বয়ংসম্পন্ন, আত্ম্ননির্ভরশীল, টেকসই এবং উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তরুণ গ্র্যাজুয়েটরা তাদের মেধা, মনন, প্রজ্ঞা ও কর্ম দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে বিশ্বের দরবারে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। পাশাপাশি তারা যেন নিজেদের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, জ্ঞানের রাজ্যটা কোন মতাদর্শের, গোষ্ঠীচিন্তার, মেকি আদর্শবাদের কানাগলির দেশ নয়, বরং তা প্রকৃতির মতো উদার। এই ঔদার্য্য, প্রাগ্রসর চিন্তা, পরমতসহিষ্ণুতাই হচ্ছে জ্ঞানের একটি প্রকাশ। আর যখন জ্ঞানকে প্রক্রিয়াজাত করে তোমরা প্রজ্ঞার সন্ধান পাবে, দেখবে, তোমাদের স্বার্থচিন্তাটা চলে গেছে, তোমরা যতটা না নিজেদের উন্নতির জন্য ব্রতী, তার থেকে বেশি পরহিতের জন্য। শিক্ষাকে যদি ওই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তবে তোমাদের হাত ধরেই দেশটা আগামীর পথে এগিয়ে যেতে পারবে। তিনি গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে আরও বলেন, তোমাদের স্বপ্ন যত বড় হবে, যত অন্যদের সেই স্বপ্ন জড়িয়ে দেবে তত সেটি রঙিন হবে এবং তত তোমাদের তা ঘিরে থাকবে। স্বার্থপর স্বপ্ন বুদ্ধুদের মতো। বুদ্ধুদের রং থাকে, নিশ্চয় খেয়াল করেছ, কিন্তু বুদ্ধুদ, তার রং সত্ত্বেও, নিতান্ত ক্ষণস্থায়ী। স্বাগত বক্তব্যে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ডা. মুহাম্মাদ শহীদুল কাদির পাটোয়ারী বলেন, আজ আমরা সমাবর্তনে ১৬৫৭ গ্রাজুয়েটকে সনদ দিচ্ছি না, তারা সনদ অর্জন করে নিচ্ছে। 'জ্ঞানই শক্তি' আমরা এই আদর্শকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছি। ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. কে এম মোহসীন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অধ্যাপক ড. এ বি এম মফিজুল ইসলাম পাটোয়ারী মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য ১৯৯৫ সালে ৭ এপ্রিল এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তাই এখানে টিউশন ফি তুলনামূলক কম। বর্তমানে এখানে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। তার মধ্যে ৩ শতাধিক বিদেশি ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি বলেন, আজ ৩০ জন বিদেশিসহ ১৬৫৭ জন গ্র্যাজুয়েটকে সনদ নিচ্ছে, আমরা কামনা করি, তারা সাফল্যর সঙ্গে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য অ্যাভোকেট শাহেদ কামাল পাটোয়ারীসহ অন্যান্য সদস্যরা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাইনুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া, সিন্ডিকেট সদস্য শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, গ্র্যাজুয়েটদের অভিভাবক, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সমাবর্তনে ২ জনকে চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড, ৫ জনকে ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ও ৬ জনকে ডিন অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। শেষে বাপ্পা মজুমদার ও কিশোর ক্লাউডিসের সমান্বয়ে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গ্র্যাজুয়েটদের মাতিয়ে তোলেন।