সুবর্ণজয়ন্তী রোভার মুট ২০২৪

রোভার অঞ্চলের ৫০ বছর পূর্তিতে সুবর্ণজয়ন্তী অঙ্গীকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে রোভার এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সুবর্ণজয়ন্তী রোভার মুট ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে সেটি পিছিয়ে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬ হাজারের বেশি রোভার এবং গার্ল-ইন-রোভার অংশগ্রহণ করে। তারা বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি এবং চ্যালেঞ্জ অংশগ্রহণ করে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সেগুলো সফলভাবে সম্পূর্ণ করেন। অংশগ্রহণকারী রোভার এবং গার্ল-ইন-রোভারদের মুটের অভিজ্ঞতা তুলে ধরছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউটস গ্রম্নপের রোভারমেট মো. রুহুল আমিন।

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রোভাররা নিজের জন্য এবং দেশের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা পেয়েছে সামিয়া জামান গার্ল-ইন-রোভার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউটস গ্রম্নপ। রোভার স্কাউট তরুণদের নিয়ে গঠিত এক প্রাণবন্ত সংগঠন। রোভারিং-এ রোভাররা শিখে কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে হয়? রোভারিং-এ তৈরি হয় একে অপরকে সহযোগিতা করার মনোভাব এবং নিজেকে কীভাবে কাজের মাঝেই প্রফুলস্ন রাখা যায় সেটিও শিখে রোভারিং-এ। রোভাররা প্রকৃতি এবং মানুষের জন্য নিজের সাধ্যের মধ্যে কাজ করে যায় সব সময়। আর এসব বিষয়ে তারা জ্ঞান অর্জন করে থাকে বিভিন্ন মুটে। দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে রোভার মুটগুলো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে জেলা রোভারমুট, জাতীয় রোভারমুট অন্যতম। জাতীয় রোভার মুটগুলোর চার থেকে পাঁচ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, এর মধ্যে অন্যতম ছিল সুবর্ণজয়ন্তী রোভার মুট। 'সুবর্ণজয়ন্তী রোভার মুট' রোভারদের কাছে ছিল স্বপ্নের মুট। প্রায় ৬,৬৫০ জন রোভার নিয়ে শুরু হয় সুবর্ণজয়ন্তীর রোভার মুট। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং অ্যাক্টিভিটিজের মাধ্যমে রোভারমুটটি সম্পন্ন হয়। মন্ত্রীমহোদয়রা বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটিজের পরিদর্শক হিসেবে উপস্থিত থেকে মুটটি-কে করেছেন প্রাণবন্ত। এই সুবর্ণজয়ন্তী রোভার মুটে রোভাররা অর্জন করেছে এক ভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা। রোভাররা নিজের জন্য এবং দেশের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা পেয়েছে এই মুটে। সর্বোপরি 'সুবর্ণজয়ন্তী রোভারমুটে'র স্স্নোগানকে বুকে ধারণ করে রোভাররা দেশকে এগিয়ে নেওয়ার শক্তি সঞ্চয় করতে পেরেছে এই মুটে। সবাই চেষ্টা করেছেন সবাইকে নিয়ে মুটকে সার্থক করতে রাকিব রোভার মেট, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউটস গ্রম্নপ। সুবর্ণজয়ন্তী রোভার ২০২৪ জাতীয় পর্যায়ের একটা প্রোগ্রাম হওয়া সত্ত্বেও সেই তুলনার এবারের রোভার মুট ছিল একদমই বাজে। ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা, আয়োজন সব কিছুই অনেক খারাপ ছিল। ৫০ বছরপূর্তী উপলক্ষে রোভার মুট হতে পারত আরও জাকজমকপূর্ণ। সত্যি কথা বলতে গেলে, সবাই যেভাবে প্রত্যাশা করেছিল সে তুলনায় তেমন কিছুই ছিল না এবারের মুটে। আমরা যে কয়টি ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলাম মোটামুটি সবগুলোতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। যদিও মুটটি ২০২২ সালে হওয়ার কথা ছিল, এত দীর্ঘ সময় পাওয়া সত্ত্বেও জাতীয় পর্যায়ের প্রোগ্রামটি আরও আকর্ষণীয় হতে পারত। চ্যালেঞ্জগুলোতে দেখেছি একপাক্ষিক ফলাফল ছিল, কিছু কিছু রোভার ভাই সেক্ষেত্রে ভূয়া ভূয়া বলে তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করেছে। এগুলো যদি একজন রোভারের সামনে করা হয়, তাহলে আলটিমেটলি আমরা কী শিখেছি মুট থেকে? তবে অনেক কর্মকর্তা ছিলেন যারা এর মাঝেও চেষ্টা করেছেন সবাইকে নিয়ে মুটকে সার্থক করতে। আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। সব প্রোগ্রামে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করছি রবিউল ইসলাম সিনিয়র রোভারমেট, নবাব সিরাজদ্দৌলা সরকারি কলেজ রোভার স্কাউটস গ্রম্নপ, নাটোর। রোভার সুবর্ণজয়ন্তী রোভার মুট যেটি অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল। ১৯৭২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করতে চেয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে রেভার অঞ্চল মুটটি পিছিয়ে ২০২৪ সালে আয়োজন করে। আমার মুটে আসার আগে পর্যন্ত মুট সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের কোটা পাওয়া, দল নির্বাচন এবং প্রস্তুতিসহ যাবতীয় কাজ নিয়ে ব্যস্ত এবং মুটের জন্য অধীর আগ্রহী ছিলাম। আমাদের শেষ সময়ে মুটে অংশগ্রহণ করে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিল। ব্যবস্থাপনার ত্রম্নটির কারণে প্রথমে আমরা একটি তাবুতে গুছিয়ে নিয়েছিলাম পরবর্তীতে জানতে পারি সেটি আমাদের না। যেটির কারণে আমাদের মন ভেঙে যায়। নতুন করে আমার তাবু গোছানো এবং গেজেট তৈরি করতে হয়। সব প্রোগ্রামে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করছি। নিজেরা নিজেদের খাবার রান্না করে খেয়েছি। নাইট হাইকিং সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছি। সব কার্যক্রমের অংশগ্রহণ এবং প্রতিকূল পরিবেশে নিজেরা মানিয়ে নিতে পেরেছি। এটি আসলে মুট এবং স্কাউটিং-এর মূল উদ্দেশ্য। সুবর্ণজয়ন্তী রোভার মুট আমাদের ভালো লাগার জায়গা এবং ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে আনন্দ অনুভব করছি। আমরা উপভোগ করেছি গ্রাম বাংলার অপরূপ সৌন্দয রত্না রানি কুন্ড গার্ল-ইন-রোভার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউটস গ্রম্নপ। সুবর্ণজয়ন্তী মুট ক্যাম্প-২০২৪-এর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলে মনে পড়ে যায় কবি ম্যাথিউ আর্নল্ড-এর দ্যা স্কলার জিপসি কবিতার কথা। যেখানে কবি দেখিয়েছেন একজন অক্সফোর্ড পন্ডিতকে যিনি শিক্ষাজীবন ছেড়ে দিয়ে যাযাবরদের জ্ঞানের উৎস সন্ধানের জন্য যাযাবরদের জীবনকে আলিঙ্গন করে নেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রম্নপ শিক্ষা জীবন ছেড়ে দিয়ে যাযাবরদের জীবন বরণ না করলেও, উক্ত ক্যাম্প এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও অতি সাধারণ জীবনযাপনের স্বাদ আস্বাদন করতে পেরেছে। আমরা বুঝতে পেরেছি প্রয়োজন ও বিলাসিতার মধ্যে পার্থক্য ঠিক কতটুকু। অদম্য অভিযাত্রার হাইকিং অংশে, দিন-রাত মিলিয়ে আমরা টানা আট কিলোমিটার হেঁটেছি। এই অংশে আমরা উপভোগ করেছি গ্রাম বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য। দুই ধারে বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঝে সরু রাস্তা। কম্পাস হাতে নিয়ে লাঠিতে ব্যাগ ঝুলিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে আমরা যাত্রা করেছিলাম। তখন জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা কবিতার 'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর' লাইনটি বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল। প্রকৃতি ও মানুষের সাধারণ জীবনের এই চমৎকার মেলবন্ধন আজীবন স্মৃতির পাতায় লেখা থাকবে। এক রাতের তাবুবাসের অভিজ্ঞতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে মোত্তাকিম রোভার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় রেভার স্কাউটস গ্রম্নপ। দীর্ঘ পাঁচ দিনের যাত্রায় অনেক কিছুই জানতে পেরেছি, শিখতে পেরেছি এবং মজার কিছু অভিজ্ঞতার স্বাক্ষী হতে পেরেছি। এখানে আমরা সারা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী এসেছিলাম যেখানে বেশিরভাগই কেউ কাউকে চিনতাম না, তবে এই পাঁচ দিনে আমাদের মাঝে যে সক্ষতা গড়ে উঠেছে (বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী তাঁবু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রম্নপসহ অন্য তাঁবু) তাতে কেউ দেখে বুঝতে পারবে না আমরা কেউ কারোর পূর্ব পরিচিত নয়। নতুনভাবে অনেকের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছি, চেনা-অচেনা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হতে পেরেছি, এটাই আমাদের স্বার্থকতা। বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি এবং চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতার বিষয় ছিল নাইট হাইকিং। আমাদের একটা একটা নির্দিষ্ট রুট দিয়ে দেওয়া হয় সে অনুযায়ী পথচলা এবং মাঝ গন্তব্যে চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণ করে রাতে আবার ফিল্ড বুক করে অন্ধকার আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছনোর পর সেখানেই এক রাতের তাবুবাসের অভিজ্ঞতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এছাড়াও প্রতিদিন খুব ভোরে ভোরের পাখিতে অংশগ্রহণ এবং মহাতাবু জলসা আজীবন স্মৃতিতে স্মরণীয় থাকবে।