রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

যৌন হয়রানি বন্ধে ও সচেতনতায় 'ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়'

প্রকাশ | ০১ মে ২০১৯, ০০:০০

আকরাম হোসাইন
যৌন হয়রানি বন্ধে ও সচেতনতায় কাজ করছেন একজন শিক্ষার্থী
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজ ছাড়াও যৌন হয়রানি বন্ধে ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে করে যাচ্ছে। পাশাপাশি যৌন হয়রানি বন্ধে কখনো স্কুলে-স্কুলে, কখনো পথচারী, আবার কখনো পরিবহনের চালক, হেলপার, যাত্রীদের সচেতন করতে বিভিন্ন স্টিকার, কর্মশালা করছে। এসব কর্মশালায় যৌন হয়রানিবিষয়ক সচেতনতা তৈরি ও নির্যাতিতদের নিয়ে কাউন্সেলিং করা, নিপীড়িতদের আইনি সহায়তা দেয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে 'সেইফ জোন' প্রতিষ্ঠা, আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ, বাল্যবিবাহ ও ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা তৈরি করছে সংগঠনটি। তা ছাড়া জনসচেতনতার লক্ষ্যে যাত্রী, চালক, হেলপার, পথচারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন সংগঠনটির কর্মীরা। সেখানে শিশু নিপীড়নের হার নির্ণয় ও পরিবহন ব্যবস্থা কতটা নারীবান্ধব সে বিষয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়। এসব জরিপে উঠে এসেছে বেশিরভাগ নারীই পরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজশাহী মহানগরীর ভদ্রা, রেলগেটসহ বেশ কয়েকটি স্থানে, বাস, সিএনজি, অটো, লেগুনা ইত্যাদিসহ প্রায় সব পরিবহনে বিভিন্ন স্টিকার লাগিয়ে যাচ্ছে। এসব স্টিকারে 'যৌন হয়রানিকে না বলুন', আইনি সহায়তার জন্য ১০৯ নম্বরে কল করা, 'গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না', স্স্নোগান সংবলিত স্টিকারে উলেস্নখ করা হয়। রাজশাহী মহানগরের বিভিন্ন স্থানে শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালায় সংগঠনটির কর্মীরা। এইচএসসি পরীক্ষার্থী শাহানা আক্তার বলেন, অন্ধকারে যৌন হয়রানি তো চলছেই। আজকাল জনসম্মুখেও হয়রানি করা হচ্ছে নারীদের। গা ঘেঁষে দাঁড়ায়, একটু ভিড় হলেই ইচ্ছে করে গায়ে হাত দেয়া, ধাক্কা দেয়া, নোংরা কথার মাধ্যমে হয়রানি করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের ফলে পাবলিক স্থানে স্টিকার দেখে লজ্জায় অন্তত এসব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকবে এতটুকু আশা করা যায়। 'পথের সাথী' নামের বাসের চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, সবার বাড়িতে মা-বোন আছে। সবাই নিরাপদে থাকতে চায়। তাই এই কর্মীরা যে কাজ করছে তা ভালো। আমার মনে হয়, এই লেখা দেখে মহিলাদের গায় হাত দিতে লজ্জা পাবে। 'ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়' সংগঠনের সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নওরীন পলস্নবী জানান, 'পাবলিক ট্রান্সপোর্টে প্রায় ৯৪ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। বিভিন্ন পরিবহনে আমাদের লাগানো এই স্টিকারগুলো সাধারণ যাত্রী, পরিবহন কর্তৃপক্ষ এমনকি যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য একটি বার্তা বহন করবে। একজন ভুক্তভোগী যখন দেখবে তার সমস্যার ব্যাপারে অনেকেই আলোচনা করছে এবং সজাগ আছে তখন সে নিজেও প্রতিবাদ করতে লজ্জাবোধ করবে না। পাশাপাশি যারা এসব অপকর্ম বা নোংরা কর্মকান্ডগুলো ঘটায় তারা ভীত হবে এবং পরিবহন কর্তৃপক্ষও এসব ব্যাপারে সজাগ থাকবে'। প্রসঙ্গত, 'নীরবতা ভেঙে আওয়াজ তুলি, সুরক্ষিত শৈশব নিশ্চিত করি' স্স্নোগানে এ বছরের ১৪ ফেব্রম্নয়ারি সংগঠনটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকেই বিভিন্ন কর্মশালা ও সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছে।