চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গ্রীষ্মের রঙিন ফুলে বর্ণিল ক্যাম্পাস

দুদিনের থেমে থেমে মৃদুমন্দ বৃষ্টিতে নতুন কুঁড়ি নিয়ে গ্রীষ্মের রোদে ধুকতে থাকা বৃক্ষরাজি নতুন যৌবন পেয়ে হয়ে ওঠে ঝলমলে। পাশাপাশি পুরো একুশ একর যেন হয়ে ওঠে বাহারি ফুলের স্বর্গরাজ্য। জারুল, সোনালু এবং কৃষ্ণচূড়ার ঝলকে গাছে গাছে বসে বেগুনি, হলুদ আর লাল রঙের মেলা

প্রকাশ | ১৮ মে ২০১৯, ০০:০০

মাহবুব এ রহমান
জারুল, সোনালু ও কৃষ্ণচূড়ার ঝলক গাছে গাছে
প্রকৃতি থেকে বিদায় নিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন জীবনযাত্রা প্রায় স্থবির, ঠিক সে সময় ঘূর্ণিঝড় 'ফণী' সবকিছু ওলট পালট করে দিতে ছাড়ে হুঙ্কার। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় এ যাত্রায় রেহাই পায় প্রাণের মাতৃভূমি। কিন্তু এত ভয়ঙ্কর হয়ে আসা 'ফণী' কী আর খুব সহজে ছাড়ে! তাইতো হালকা একটু ইঙ্গিত দিয়ে যায় তার শক্তিমত্তার। ফলে প্রায় দু-তিনদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সূর্যালোক পড়ে কম। ঝিরিঝিরি বাতাস আর আকাশের অভিমান করে গোমড়ামুখে বসে থাকার সঙ্গে থেমে থেমে ছিল বৃষ্টিও। আর সেই বৃষ্টিই যেন নতুন করে জোয়ার আনলো চির সবুজের ক্যাম্পাস, আয়তনে দেশের সর্ববৃহৎ ২১শ একরের ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। শীত এসে যখন সবুজ গাছগুলো করে গেল সবুজ শূন্য। সেই ঝরা গাছে প্রাণ ফিরিয়ে আনলো বসন্ত। আর সেই প্রাণে যেন নতুন করে যৌবন সঞ্চার করল এই গ্রীষ্মের 'ফণী'র বৃষ্টি। দুদিনের থেমে থেমে মৃদুমন্দ বৃষ্টিতে নতুন কুঁড়ি নিয়ে গ্রীষ্মের রোদে ধুকতে থাকা বৃক্ষরাজি নতুন যৌবন পেয়ে হয়ে ওঠে ঝলমলে। পাশাপাশি পুরো একুশ একর যেন হয়ে ওঠে বাহারি ফুলের স্বর্গরাজ্যে। জারুল, সোনালু এবং কৃষ্ণচূড়ার ঝলকে গাছে গাছে বসে বেগুনি, হলুদ আর লাল রঙের মেলা। ক্যাম্পাসের আইন অনুষদ প্রাঙ্গণ, আইইআর ইনস্টিটিউটের সক্রেটিস চত্বর এবং কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ প্রাঙ্গণে সোনালু ফুলের হলুদ আভায় বসেছে হলুদিয়ার মেলা। যেন শূন্যে এক টুকরো সরিষা ক্ষেত। বুদ্ধিজীবী চত্বর, জিরো পয়েন্ট, চাকসু ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও জাদুঘর প্রাঙ্গণ, কলা ঝুপড়ি, লেডিস ঝুপড়ি, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ এবং বিজ্ঞান অনুষদসহ ক্যাম্পাসের সর্বত্রই বেগুনি আর লালের মিতালী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের বাহন শাটল ট্রেনে যাতায়াতের সময়ও চোখে পড়ে নতুন রুপে পাকা চুলের মতো গজিয়ে ওঠা কাশফুল। প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীদের পেটে নিয়ে কাশফুলের রাজ্য মাড়িয়ে ঝিকঝিক শব্দে ছুটে চলেছে শাটল ট্রেন। 'রূপে গুণে সৌন্দর্যে অনন্য প্রাণপ্রিয় চবি ক্যাম্পাস। দেশের আর কোথাও বিলুপ্ত প্রায় ছয় ঋতুর দেখা মিলুক বা না মিলুক চবি ক্যাম্পাস প্রতিনিয়ত হাজারো রূপে নিজেকে সাজিয়েছে, বাহারি ফুলের সাজে সেজেছে ও নতুনত্বকে বরণ করে নিয়েছে। জারুল ফুল যেটির কথা উলেস্নখ না করলেই নয়! এ যেন পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বৈশাখের দাবদাহ গরমে একটুকরো প্রশান্তি!' এভাবেই ক্যাম্পাসের এই অভিনব সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী পুলক ভট্টাচার্যের ভাষায় 'শাটল থেকে নামার পর যখন বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার খেলা দেখতে পাই মনটা ভরে যায়। এই প্রচন্ড দাবদাহে আমার কাছে সেটাই স্নিগ্ধতার আর তৃপ্তির আরেক স্পর্শের নাম। মনে হয় যেন গ্রীষ্মের এই প্রখরতা নিমিষেই হার মেনেছে প্রকৃতির মমতাময়ী এই চবি ক্যাম্পাসের কাছে। বিষয়টা ভাবতেই ভালস্নাগে।'