ই স লা মী বি শ্ব বি দ্যা ল য়

রঙে রঙিন ক্যাম্পাস

প্রকাশ | ১৮ মে ২০১৯, ০০:০০

রায়হান মাহবুব
রঙে রঙিন ক্যাম্পাসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
কাকডাকা ভোরে নিদ্রা ছেড়ে একে একে উপস্থিত হতে শুরু করল স্ব-স্ব বিভাগ, হল প্রাঙ্গণে। খন্ড খন্ড শোভাযাত্রা নিয়ে বিভিন্ন বিভাগ, হল, বিভিন্ন অফিস, ইনস্টিটিউট, ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে লাগল প্রশাসন ভবনের সামনে। কারো হাতে শোভা পাচ্ছে কাগুজে কিংবা শোলার ওপর অসাধারণ কারুকার্যখচিত ঘুড়ি, হাঁড়ি, কলস, ঘোড়া, পেঁচাসহ বাঙালির চিরাচরিত ঐতিহ্যের সব ধারকবাহক। আবার দেখা গেল গরু-ঘোড়ার গাড়ি, লাঙ্গল কাঁধে কৃষক, পালকিতে নববধূ আর জেলের বেশে জাল হাতে নিয়ে পুকুরে মাছ ধরার অসাধারণ অঙ্গভঙ্গি। সকাল পৌনে ১০টায় উপাচার্য অধ্যাপক রাশিদ আসকারীর নেতৃত্বে শুরু হলো প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ বিশাল শোভাযাত্রা। 'মুছে যাক গস্নানি, ঘুচে যাক জরা। অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা' এ স্স্নোগানকে বুকে ধারণ করে দেশ ও জাতির শান্তি কামনায় শুরু হয় এ মঙ্গল শোভাযাত্রার। ঢাকঢোল পিটিয়ে, নবউদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত হয়ে নব নব কণ্ঠে ধ্বনিত হলো বৈশাখী বরণের গান। সবাই একত্রিত হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আম্রকাননে 'বাংলা মঞ্চে'। মঞ্চে বাঙালির অনবদ্য সংস্কৃতির এক অন্যতম উৎসব তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করলেন উপাচার্য অধ্যাপক রাশিদ আসকারী। বিকেল ৩টায় আবার শুরু হয় একই মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আসর। 'বৈশাখের বিকেল বেলায় তোমায় নিয়ে বকুল তলায় প্রেমের একখান গান শুনাবো', 'দেখা হবে রে হবে পহেলা বৈশাখে' বর্তমান সময়কার এসব মঞ্চ কাঁপানো গানের তালে তালে মেলা প্রাঙ্গণ প্রথম দিনে যেন কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছিল। চারিদিকে বাঁশির পঁ্যা-পো সুর, নাগর দোলায় বসে হাওয়ায় উড়ে বেড়ানো, প্রেমিক-প্রেমিকার বৈশাখী পাঞ্জাবি-শাড়ি, দুজনে হাত ধরে প্যারাডাইস রোড, ডাইনা চত্ব্বর কিংবা মফিজ লেকে রোমাঞ্চকর মুহূর্তের সময় কাটানো এ সবই ছিল তিন দিনের বৈশাখী আমেজ। সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে আগত সারেগামাপার শিল্পী তন্ময় মুখোপাধ্যায়, প্রমা দাসগুপ্তসহ ১৫ জন শিল্পীর কণ্ঠে রবী ঠাকুরের গান, মান্না দে'র কালজয়ী গান, দীজেন্দ্রলাল রায় আর অতুল প্রসাদ সেনের ভাটিয়ালি গান শুনে যেন উপস্থিত দর্শক আনন্দে বিমহিত হয়ে গেল। আবার দর্শক নাচিয়ে মঞ্চ কাঁপিয়ে একাকার করেছিল এ দলের সব থেকে ছোট্ট শিল্পীটি। মেলায় ছোট বড় মোট ৮৪টি স্টল বসেছিল। প্রতিটি স্টলে বাঙালি ঐহিত্যের সব নির্দশন তথা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির-কাঠের তৈজসপত্র স্থান পেয়েছিল। নানা স্বাদের, নানা রসের মিষ্টি-মিঠায়, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা স্টলগুলোতে ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া পুঁথি, কাঠ, ঝিনুকের তৈরি অলঙ্কারাদিও স্টলগুলোতে স্থান পেয়েছিল। মেলায় কিছু ব্যতিক্রমী স্টল দেখা মিলেছিল। তন্মধ্যে ৪, ৪২ ও ৫৫ নম্বরগুলো অন্যতম। ৪ নম্বর স্টলটি পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের। এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা পুরনো পস্নাস্টিকের বোতল, কাঁচের টুকরা ও ইটের গুঁড়া দিয়ে ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র, অলঙ্কারাদি, ক্যাম্পাস ভাস্কর্য 'মুক্ত বাংলা' ও ক্যাম্পাসের স্মৃতিসৌধ তৈরি করেছিল। এমন সৃজনশীলতার জন্য ওই স্টল প্রথম পুরস্কার ছিনিয়ে নেয়। 'খবর পাড়া' নামের ৪২ নম্বর স্টলটি ছিল সাংবাদিক সংগঠন প্রেসক্লাবের। স্টলটিতে দেখা মিলেছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সময়কার নিউজ সংগ্রহ, অভিযোগ বক্স ও সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট কিছু বই। সংগঠনটি তার সৃজনশীলতার জন্য দ্বিতীয় স্টল বিজয়ী ঘোষিত হয়। এ ছাড়া ৫৫ নম্বরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'তারুণ্য' তার সৃজনশীলতায় তৃতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়। মেলার দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানস্থল ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা ছাড়াও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ থেকে আগত দর্শনার্থীদের পদচারণায় মেলাপ্রাঙ্গণ সার্বক্ষণিক মুখরিত ছিল। বিকেল ৩টা থেকে সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু হতেই বাংলা মঞ্চের সামনে তিল ধরনের ঠাঁই হতো না। প্রতিদিন বিভিন্ন বিভাগ, হল পৃথক পৃথক পারফরমেন্স প্রদর্শন করতো। দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল, টু্যরিজম, ফোকলোর, মার্কেটিং ও বাংলা বিভাগের পারফরমেন্স ছিল চমৎকার। এ ছাড়া সাদ্দাম, মীম, লালচাঁন, দীপ্ত, জুবায়ের আর হাসানের মতো ক্যাম্পাস তারকাদের গানের সুরে উলস্নাসে ফেটে উঠেছিল আগত দর্শনার্থীরা। আনন্দের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছিল 'নৃত্যাঙ্গনে'র নৃত্য পরিবেশন। অনুষ্ঠানের রোম্যান্টিক মুহূর্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রাশিদ আসকারীর হৃদয়ছোঁয়া কবিতা পাঠ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শাহিনুর রহমানের সুরলীলা কণ্ঠে গান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম তোহার গল্পের আসর আর অধ্যাপক তৌফিক এলাহীর সুলেলিত কণ্ঠের গান। মেলার শেষ মুহূর্তে নৃত্যাঙ্গনের শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মেলার সমাপ্তি ঘটে।