জা হা ঙ্গী র ন গ র বি শ্ব বি দ্যা ল য়

ক্যাম্পাসে সম্প্রীতির ইফতার

কী হিন্দু কী বৌদ্ধ কিবা খ্রিস্টান। সবাই বসে একসঙ্গে ইফতারে। বন্ধু-বান্ধবের মাঝে বর্ণ ভেদাভেদ দূর করে ইফতার এক অসাম্প্রদায়িক বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে পূর্ণতা। ইফতারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গাতে জড়ো হয় বন্ধু-বান্ধব...

প্রকাশ | ২৫ মে ২০১৯, ০০:০০

নুর হাছান নাঈম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ইফতারের পূর্বমুহূর্তে এ দৃশ্যের দেখা মেলে
প্রধান ফটকের পাশে কোলাহলমুখর সবুজ মাঠ। মাঠে গোল হয়ে বসে আছে তরুণ-তরুণীরা। কয়েকজন করে দল উপদলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। সবুজ ঘাসের ওপর বিছানো খবরের কাগজ। কাগজের ওপর বিছানো হরেক রকমের খাবার। মাঠজুড়ে পিনপতন নীরবতা। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কখন সময় হয়। কখন সময় হয়। মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি কানে বাজতেই সকবাই একযোগে সারাদিনের রোজার ইতি টেনে শরবত অথবা খেজুর দিয়ে শুরু করে ইফতার। প্রায় টানা দুমাসের বন্ধ থাকা সত্ত্বেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ইফতারের পূর্বমুহূর্তে এ দৃশ্যের দেখা মেলে। কী হিন্দু কী বৌদ্ধ কি বা খ্রিস্টান। সবাই বসে একসঙ্গে ইফতারে। বন্ধু-বান্ধবের মাঝে বর্ণ ভেদাভেদ দূর করে ইফতার এক অসাম্প্রদায়িক বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে পূর্ণতা। ইফতারকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গাতে জড়ো হয় বন্ধু-বান্ধব। বসে আড্ডার আসর, চলে বাহারি গল্প। মুহূর্তেই সেই গল্পে সবাই ভুলে যায় সারা দিনের রোজার ক্লান্তির কথা। বিকেল হলেই উপছেপড়া ভিড় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া চত্বর,পরিবহন চত্বর,শহীদ মিনারের পাদাদেশ, অডিটোরিয়ামের বারান্দা এবং টারজান পয়েন্টে। তবে সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম ঘটে কেন্দ্রীয় মাঠেই। ডেইরি গেটের দোকানগুলোতে নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের পসরা বসে। শুধু ক্যাম্পাসের বর্তমান শিক্ষার্থীরাই নয়, অনেক সাবেক শিক্ষার্থীরা ও আসেন ইফতারির মাধ্যমে আড্ডা আর গল্পে মেতে উড়তে। শুধু ক্যাম্পাসের খোলা চত্বরেই নয়, হলগুলোতেও প্রাণের আড্ডা জমে ওঠে রমজানের ইফতারকে ঘিরে। ভিড়ের মধ্যে ইফতার কেনা, সেহ্‌রি খেতে যেয়ে ক্যান্টিনে হুমড়ি খেয়ে পড়া সেহ্‌রির শেষ সময় তড়িঘড়ি পানি খাওয়া, সবকিছুতেই যেন আসে এক চাঞ্চল্য। রোজার মাসে হলগুলোতে রাতে যেন রাত থাকে না। হই হুলেস্নাড় গল্প গুজবে কাটে সেহ্‌রি অবধি। যারাই ঘুমিয়ে পড়ে চেঁচামেচিতে তারাও উঠতে বাধ্য হয়। ইফতারে মেয়েদের হলগুলোর আশপাশে হয়ে ওঠে জমজমাট। নওয়াব ফয়জুন্নেসা ও খালেদা জিয়া হলের সামনে কাঁঠাল তলায় জমে ওঠে ইফতারির এক জমজমাট আয়োজন। তবে এ চত্বরে ইফতারির নিয়মিত আইটেমের পাশাপাশি কিছুটা ভিন্নতাও থাকে। আর তা হলো নিজের তৈরি করা খাবার। মেয়েদের হলের অনেকেই দুপুর থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজ হাতে ইফতারি তৈরিতে। বন্ধু-বান্ধব আর কাছের মানুষটিকে খাওয়াতে পেরেই যেন পরিশ্রম সার্থক হয়। ইফতারকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এখানের ইফতারের নিয়মিত আইটেম মুড়ি, ছোলা,বুন্দিয়া, বেগুনি, খেজুর, পেঁয়াজু, কলা, জিলাপি, শসা, চপ, শরবতসহ অন্যান্য আইটেম। ক্যাম্পাসে ইফতারের আড়ম্বর না থাকলেও আছে উৎসাহ উদ্দীপনা, সৌহার্দ্য ভালোবাসা। ইফতার সামনে নিয়ে বসতেই আসে ছিন্নমূল পথশিশুরা। ইফতারির অংশ থেকে তাদের কিছু দিয়েই অন্তরে যেন আসে প্রশান্তি, আসে তৃপ্তি।