গ ণ বি শ্ব বি দ্যা ল য়

নিরাপদ ইফতারে জনসচেতনতা

প্রকাশ | ২৫ মে ২০১৯, ০০:০০

অনিক আহমেদ
রমজানে স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখাটা খুবই জরুরি বিষয়। কেননা, সারাদিন রোজা রাখার পর খাবার গ্রহণে সচেতন না হলে ঘটতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে ইফতারের সময় খাবার গ্রহণে সচেতন হওয়া বেশি জরুরি। এ জন্য ইফতারের খাদ্যসামগ্রীর বিশুদ্ধতা যাচাইয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছে সাভারের খাদ্যবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'বিশুদ্ধ খাদ্য চাই'। গত ১৩ মেরাজধানীর চকবাজারের ইফতার বাজারে সংগঠনের সভাপতি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োক্যামিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শাকিল মাহমুদের নেতৃত্বে সারা দিনব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিশুদ্ধ খাবার নিশ্চিতকরণে নানা কর্মসূচি পালন করে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় এটি ছিল একটি ধাপ মাত্র। তবে ব্যতিক্রমধর্মী এই উদ্যোগ বেশ সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। আয়োজকরা তিনটি ধাপে তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করে- লিফলেট বিতরণ, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাউন্সেলিং এবং ফেসবুক লাইভে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরা। শুরুতেই সংগঠনের নেতারা ইফতার ব্যবসায়ীদের মাঝে খাদ্যে ভেজালের অপকারিতা ও স্বাস্থ্য ক্ষতি বোঝানোর উদ্দেশ্যে লিফলেট বিতরণ করেন। সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে ইফতার বাজার ঘুরে ঘুরে ভেজাল ও রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্য চেনার উপায়গুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়। এরপর ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের খাদ্য সচেতন করে তুলতে বিভিন্নভাবে কাউন্সেলিং করা হয়। শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে গিয়ে তাদের সচেতনতামূলক দাবিগুলো তুলে ধরা হয়। এ ধরনের কর্মসূচির ব্যাপারে সংগঠনের সদস্য ওমর ফারুক বলেন, 'পবিত্র রমজান মাস জুড়ে সারাদেশে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী। তাদের কাজে সহায়তা করার জন্যই আমরা আজকে দেশের সবচেয়ে বড় ইফতার বাজারে এসেছি।' সাধারণত ইফতারসামগ্রী প্রস্তুতকারকরা ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য খাদ্যে ভেজাল মেশান। কিন্তু তারা অনেকেই জানেন না ওই ভেজাল খাবার মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর। এটা থেকে বাঁচার জন্য শুধু মামলা-জরিমানা করেই কোনো সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়। বরং ব্যবসায়ীদের এ ধরনের খাবারের অপকারিতা সহজভাবে বুঝালে খাদ্যে ভেজাল অনেকাংশে দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন ডা. শাকিল মাহমুদ। তিনি বলেন, 'প্রতিনিয়ত আমরা না জেনে বিষাক্ত খাবার খাচ্ছি। এতে করে মানুষের শরীরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগ হচ্ছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এসব থেকে রক্ষার জন্য জনসচেতনতাই প্রধান হাতিয়ার।' 'আমরা জেগেছি, আপনিও জেগে উঠুন; মরতে নয়, সুস্থ জীবনের জন্য চাই বিশুদ্ধ খাবার' প্রতিপাদ্যে এ কর্মসূচিতে গণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের বেশ কিছু শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী অংশ নেন। সমাজের মানুষের উন্নয়নে এ ধরনের কর্মসূচিকে স্বাগত জানান চকবাজারস্থ সচেতন মহল। তারা আশা প্রকাশ করেন, বায়োক্যামিস্ট, ফার্মাসিস্ট এবং ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিবর্গ এ মহান নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের উদ্যোগ নেয়ায় অতি দ্রম্নত এ সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ হবে। ২০১৮ সালের ৩১ মে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই 'বিশুদ্ধ খাদ্য চাই' সংগঠনের নেতারা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে মানববন্ধন, সভা-সেমিনারসহ নানা ধরনের জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে আসছে। আগামী প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রাসায়নিক মুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করার স্বপ্ন দেখে তারা। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হয়ে কাজ করে সারা বাংলাদেশে কাজ করে যাবে। তাদের স্বপ্ন বাংলাদেশ একদিন শতভাগ ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিতকরণ সম্ভব হবে।