চ ট্ট গ্রা ম বি শ্ব বি দ্যা ল য়

অচেনারূপে চেনা ক্যাম্পাস

প্রকাশ | ০১ জুন ২০১৯, ০০:০০

রুমান হাফিজ
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা চিরচেনা ক্যাম্পাস ছবি: অনিক গোমস্তা
চারদিকে সুনসান নীরবতা। নেই কোলাহল। ভবনগুলোতে যেন মৃতু্যর নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। সদা চঞ্চল, ছাত্রছাত্রীদের আড্ডায় মুখর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বর্তমান চিত্রের কথাটাই বলছিলাম। ঈদের বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই চবি হারাতে শুরু করে তার চিরচেনা রূপ। শেকড়ের টানে ছাত্রছাত্রীরা পাড়ি জমাতে শুরু করে নিজ নিজ গাঁয়ে। তাই ক্যাম্পাসে জমে ওঠে না বন্ধুদের আড্ডা। কলা ঝুপড়ির চেহারাটা নেই আগের মতো উৎফুলস্ন। শাটল ট্রেনে এখন আর সিট ধরার জন্য নেই তাড়াহুড়ো। জিরো পয়েন্ট, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার চত্বর কিংবা কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সব যেন শোকে মূহ্যমান। যেন স্পন্দনহীন হয়ে পড়ে আছে সহস্র প্রাণের কলরবে মুখরিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সুন্দর একটি জীবন গড়ার জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে পরিবার-পরিজন ছেড়ে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে তাদের কাছে ঈদের আনন্দটা একটু ভিন্ন। প্রায় সব সময়ই কোনো না কোনো ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনের চাপে থাকতে হয়। হৃদয়ে লালন করা হাজারো স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে সর্বদাই বিরামহীন ছুটে চলা। ছুটতে ছুটতে এক সময় পেয়ে বসে রাজ্যের ক্লান্তি। ক্লান্ত-শ্রান্ত মন চায় একটু বিশ্রাম। ছুটে যেতে চায় চেনা মুখগুলোর কাছে। কাদামাখা গ্রামের চিরচেনা মেঠো পথ ধরে হাঁটতে। পেতে চায় স্নেহময়ী মায়ের হাতের পরশ, যে পরশে রয়েছে পৃথিবীর সব ক্লান্তি দূর করার জাদু। ইচ্ছে করে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে আনন্দ-উলস্নাসে কিছুটা সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে। তাই ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়া, টিকেট কাটা, কাপড়চোপড় গোছগাছ সবরকম ঝক্কিঝামেলা পেরিয়ে ঘরে ফেরাটা যেন একরকম উৎসবের মতোই কাজ করে। ইলেক্ট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রাহমান সুমনের কথায়, 'প্রতিবার ঈদে নতুন জামা কেনাটা যেমন ছোট্ট শিশুর আনন্দ তেমনি পরিবার থেকে দূরে অবস্থান করা মানুষের আনন্দ হলো ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া। ওইটাই এখন আমাদের জন্য ঈদের প্রধান আনন্দ। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়াটার সময় অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করে কেননা এই ছুটিতে আমার মতো নিজ এলাকার দূরে থাকা ব্যক্তিগুলোকে একসঙ্গে দেখা করা যায় যেটা বছরের অন্য সময় হয় না। ঈদের ছুটি মানেই পুরনো বন্ধুগুলো সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া আর এলাকার বাজার বা পয়েন্টে দলবেঁধে আড্ডা দেয়া। পরিবার আর আত্মীয় দের খোঁজ নেয়ার সুযোগটা ঈদের ছুটিতে বেশি পাওয়া যায়।' বিভাগের শিক্ষার্থী ফজলে এলাহী নাইম বলছিলেন, 'একটু মন খারাপ হলেও প্রিয় ক্যাম্পাসের এই স্মৃতিগুলো মনে রেখেই বাড়ি যাচ্ছি। আবার বাড়ির আনন্দের স্মৃতিগুলো সঙ্গী করেই ক্যাম্পাসে ফিরতে হবে। কয়েকদিন ক্লাস লেখাপড়া অ্যাসাইনমেন্ট থেকে অবসর পাওয়া যাবে। ঈদের আনন্দ হবে মা-বাবা, ভাই-বোন আর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে। আর এ আশায় ভর করেই এখন প্রাণের ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ির পথে।' মার্কেটিং বিভাগের ইফতেখায়রুল ইসলাম যেমনটা বলছিলেন, 'রমজান উপলক্ষে এখন ক্যাম্পাস বন্ধ। অনেকদিন হলো বাড়িতে যাওয়া হয়নি। এবার ঈদের লম্বা ছুটি পেয়েছি। বাড়ি ফিরে যাওয়ার আনন্দটা একটু অন্যরকমই বটে। তার মধ্যে আবার গ্রামে পরিবার আছে, আছে স্কুল, কলেজ ও ছেলেবেলার বন্ধুরা। তাদের সঙ্গে ঈদটা একটু বেশিই উৎসবমুখর হয়। তা ছাড়া অনেকদিন ধরে মায়ের রান্না করা খাবার খাওয়ার সুযোগ হয় না। হল ডাইনিংয়ের খাবার খেতে খেতে মুখ একদম বিস্বাদ হয়ে গেছে। বন্ধে একটু অন্যরকম খাওয়ার স্বাদও গ্রহণ করা হবে। সব মিলিয়ে নিজের কাছে খুব খুশি লাগছে। আবার ক্যাম্পাসের এই রঙ্গময় হলজীবন ছেড়ে যেতেও একটু পিছু টানছে।' আর লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজা রশ্মি শ্রাবন্তীর কণ্ঠে, ঈদ সবসময় অন্যরকম আনন্দের। গত চার বছর ধরে পড়াশোনার জন্য বাড়ির বাইরে থাকার কারণে ঈদের আনন্দের মাত্রাটা বেড়ে যায়। রোজার অর্ধেক ক্যাম্পাসে করা হলেও বাড়ি আসার তাগাদা শুরু হয়ে যায় সেই প্রথম থেকেই। লাইনে দাঁড়িয়ে ভিড়ের মাঝ থেকে টিকেট কাটা, দীর্ঘ ট্রেন জার্নি সব কিছু এক নিমিষেই ভুলে যাই যখন সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দে মেতে উঠি। আগের চেয়ে বরং আনন্দগুলো বেশি অনুভব করি এখনকার ঈদে। তারপর আস্তে আস্তে আবার ডুবে যেতে হবে ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট ও পরীক্ষার মধ্যে। আবার শুরু হবে অপেক্ষার পালা এমন বিশেষ ছুটির ক্ষণের জন্য...।