ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

অপুষ্টিমুক্ত করতে চাই আমরা

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০১৯, ০০:০০

মুতাসিম বিলস্নাহ পাপ্পু
বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও অপুষ্টিতে ভুগছে দেশের মানুষ। আবার কেউ ভুগছেন অতিপুষ্টিতে। শারীরিক স্থূলতাপ্রপ্তি ডায়াবেটিস, কিডনি ও হৃদরোগসহ নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি মানুষের বেড়ে চলেছে। যে কোনো রোগ হওয়ার পেছনে স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণে অসচেতনতাই দায়ী। তবে অধিকাংশ রোগ শুধু ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব নয়। রোগ নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন একটি স্বাস্থ্যকর পথ্যের ও শৃঙ্খল জীবন পদ্ধতির। দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য অর্জনের লক্ষ্যে ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খাদ্য-পুষ্টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলেছে 'পুষ্টিবিদ ফাউন্ডেশন' নামে একটি সংগঠন। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান এ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুইটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও ছয়টি জাতীয় কলেজ। প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান, সাবেক শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন পুষ্টিবিদরা এ সংগঠনের সদস্য। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর থেকে 'পুষ্টিবিদ ফাউন্ডেশনে'র যাত্রা শুরু হয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ নিজ শাখায় কমিটি গঠন করেছে। যারা পুষ্টি জ্ঞান তৃণমূল থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় একটি আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। এতে আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক, যগ্ম আহ্বায়ক প্রবল কুমার মন্ডল, ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক, শায়েকা শারমিন রুনা রয়েছেন। সংগঠনটির শাখাগুলোর পার্শ্ববর্তী গ্রাম, স্কুল, শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পুষ্টি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছে সদস্যরা। ক্যাম্পেইনে খাদ্যের মান, পুষ্টি উপাদান, পরিমাপ ও দেহে কার্যকারিতা, শিশু স্বাস্থ্য, কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যবিষয়ক, বিভিন্ন রোগব্যাধী, সুস্বাস্থ্যের নিয়ম-বিধি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ওই বিষয়ে কিছু প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার (বই, খাতা, কলম)-এর ব্যবস্থা করে তারা। সংগঠনটির উদ্যোগে গত ২৩-২৯ এপ্রিল বাংলাদেশে এই প্রথম 'জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ-২০১৯' পালিত হয়েছে। এর স্স্নোগান ছিল 'খাদ্যের কথা ভাবলে, পুষ্টির কথাও ভাবুন'। সপ্তাহব্যাপী তারা ব্যানার, ফেস্টুনসহর্ যালি ও ক্যাম্পেইন করেছে। এ ছাড়া পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে পালন করছে 'পুষ্টিকর ইফতার বিতরণ' কর্মসূচি। তাদের লক্ষ্য কমপক্ষে তিন হাজার জন দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, শ্রমজীবী, এতিম ও বৃদ্ধাশ্রমে পুষ্টিকর ইফতারি বিতরণ করা। এতে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মৌসুমী ফল রাখা হয়। পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর মুখে একটু হাসি ফোটাতে সাধ্যমত রাতের খাবারের ব্যবস্থাও করে থাকে তারা। ইতোমধ্যে ঢাকা ফার্মগেট, ধানমন্ডি-২৭, শুক্রাবাদ, মিরপুর-১৩, আজিমপুর, দক্ষিণ পাইকপাড়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পুষ্টিকর ইফতার বিতরণ করেছে। 'পুষ্টিকর ইফতার বিতরণ' কার্যক্রম সারা রমজানব্যাপী করবে তারা। ১৬ রমজান পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে ইফতার এবং প্রায় ৬০০ জনের মাঝে ইফতার ও রাতের খাবার বিতরণ করেছে সংগঠনটির বিভিন্ন শাখার সদস্যরা। 'পুষ্টিবিদ ফাউন্ডেশনে'র লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি অপুষ্টিমুক্ত জাতিতে পরিণত করা। সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক এসএআরপিভি নিউট্রেশন অফিসার প্রবল কুমার মন্ডল বলেন, 'সারাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা এই সংগঠনটি করেছি। সব স্তরের মানুষের মাঝে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সচেতনতার মাধ্যমে অপুষ্টি মুক্ত জাতি গঠনে কাজ করছি আমরা।' সংগঠনটির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাইনুর রেজা বলেন, 'আমরা গ্রাম বা শহরে, শিক্ষত বা অশিক্ষিত সব লোকের মাঝে পুষ্টি সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছি। দেশে চিকৎসা ব্যয় বেরে গেছে। অপুষ্টিহীনতা দূর হলে চিকিৎসা ব্যয় কমবে। এতে দেশের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে।'