নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গড়ে ওঠা

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জুবাইয়া হক জুবা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠন এবং উচ্চশিক্ষার প্রসারে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কর্তৃক পাশ হওয়া 'নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১'-এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। পরে ২০০৬ সালে ৪টি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক এবং ১৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কালের পরিক্রমায় একযুগ পেরিয়ে নোবিপ্রবির কলেবর যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি বেড়েছে শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান। এই মহাযজ্ঞ সম্পাদনের প্রত্যক্ষ নায়ক হিসেবে যিনি অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ পুরুষ, কর্মবীর উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান। উচ্চশিক্ষায় দেশের সর্বপ্রাচীন বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের খ্যাতনামা শিক্ষক, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান ২০১৫ সালের ০২ জুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন। শিক্ষাব্যবস্থার অত্যন্ত রুগ্ন পরিবেশ, শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আবাসনগত সমস্যা, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব আর যানবাহন ও নিরাপত্তা সমস্যায় জর্জরিত পরিবেশে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ যখন শঙ্কার মুখে ঠিক তখনি হাতে নতুন সমৃদ্ধির আলোকবর্তিকা নিয়ে কাজ শুরু করলেন তিনি। অস্থির ও অশান্ত, ভগ্নপ্রায় শিক্ষা পরিবেশের চেহারা পাল্টে নতুন দিনের আধুনিকতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অল্প অল্প করে মাথা তুলতে শুরু করল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর শুধু এগিয়ে চলার গল্প। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও মহান মুক্তি সংগ্রামের চেতনায় উদ্ভাসিত ড. অহিদুজ্জামান কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ তথা সোনার বাংলা বিনির্মাণকে মাথায় রেখে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. অহিদুজ্জামান উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পূর্বে শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ১০২ জন যা শিক্ষার্থী বিবেচনায় অত্যন্ত অপ্রতুল, কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল ৫৯ জন এবং কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ২০০ জন। সফলতার এ চার বছরে ড. অহিদুজ্জামানের হাত ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষক সংখ্যা ৩৫১ জন, কর্মকর্তার সংখ্যা ১১৯ জন, কর্মচারীর সংখ্যা ৪৮০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে অর্ধ-শতাধিক পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক আছেন যারা অধিকাংশই ড. অহিদুজ্জামানের হাত ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ করে যাচ্ছেন। ১৩ জন প্রভাষক নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক আছেন যাদের অধিকাংশরই বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকতা ও গবেষণা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষারত আছেন প্রায় ৭০ জন শিক্ষক। এসব অভিজ্ঞ শিক্ষক ও গবেষকদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষক যারা সমানতালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছেন। এসব কিছুর প্রধান কারিগর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগোত্তীর্ণ ৪টি বিভাগসহ ৬টি অনুষদের অধীনে ২৮টি বিভাগ এবং ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। ইনস্টিটিউটগুলোয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপেস্নামা প্রোগ্রামের পাশাপাশি চালু করা হয়েছে স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি। যার মধ্যে ড. অহিদুজ্জামানের সময়কালে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ৪টি অনুষদ, ১৪টি বিভাগ এবং ২টি ইনস্টিটিউট। শিক্ষা ও গবেষণার চাহিদাকে মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য ড. অহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে নির্মাণ করা হয়েছে ৫টি হল, ৪তলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক গ্রন্থাগার, অডিটোরিয়ামসহ ৫তলা বহুমুখী ভবন, ১০তলা (৫-১০) একাডেমিক ভবন, ৫ম তলা প্রশাসনিক ভবন, ৩তলা ভিআইপি গেস্ট হাউস, তিনশত লাইনসহ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ (যার মাধ্যমে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে), নীলদীঘি নামে খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দীঘির পাড়কে বাঁধাই করে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা করা এবং চলমান রয়েছে ১০তলা বিশিষ্ট কয়েকটি টাওয়ারের, যার মধ্যে রয়েছে- ১. দেশের সর্ববৃহৎ একাডেমিক কাম ল্যাব ভবন (এটি প্রায় ৫ লাখ বর্গফুটের), ২. শিক্ষক-কর্মকর্তা টাওয়ার (৮০টি ফ্ল্যাট), ৩. প্রভোস্ট ও সহকারী প্রভোস্ট টাওয়ার (৩০টি ফ্ল্যাট), ৪. কর্মচারী টাওয়ার (৬০টি ফ্ল্যাট); ৫. ৩তলা বিশিষ্ট মেডিকেল সেন্টার, ৬. ৩তলা ভিতে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক কেন্দ্রীয় মসজিদ, ৭. হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য উপাসনালয় ৮. বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট ভবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনের গোলচত্বরের চারপাশ আরসিসি ঢালাইকৃত সড়ক নির্মাণকরাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে তার সময়কালে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ সরবরাহের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বৈদু্যতিক লাইনসহ ১০০০ কেবিএ বৈদু্যতিক সাব স্টেশন স্থাপন। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পস্নান্ট ও রিভার্স অসমোসিস পস্নান্ট স্থাপন করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ৩০০ লাইন বিশিষ্ট বিটিসিএলের টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এবং ৫০০ লাইন ক্ষমতা বিশিষ্ট পিএবিএক্স এক্সচেঞ্জ স্থাপন যার ফলে বাইরের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ আরও সহজ হবে। অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামানের সততা, নিষ্ঠা, প্রজ্ঞা ও নিরলস পরিশ্রমের কারণে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, সংস্কৃতির উৎকর্ষতায় বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। দেশপ্রেমের মহামন্ত্রে মানুষ ও মানবতার কল্যাণে কর্মমুখর, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামানের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ মানে দেশের কাজ, মানুষের কাজ। তাই তিনি দেশমাতৃকার কল্যাণে হৃদয়ে সব বাংলাদেশ এবং মুক্তি সংগ্রামের সেই পবিত্র ধ্বনি- 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু'কে ধারণ করে এগিয়ে চলেছেন দুর্বার গতিতে। আর তারই কোমল অথচ দক্ষ হাতের গাঁথুনিতে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে এক আধুনিক, উন্নত ও সমৃদ্ধ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যা সারা বাংলাদেশকে একদিন প্রতিনিধিত্ব করবে সমস্ত পৃথিবীর কাছে।